বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সব যুগে সব কালেই মানুষের মধ্যে রোজার প্রচলন ছিল। পবিত্র কোরআনে এর সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের আগের নবীগণের উম্মতের জন্য ফরজ করা হয়েছিল। কেন রোজা ফরজ করা হয়েছে তাও আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন। বলেছেন: আশা করা যায়, এর ফলে তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ পয়দা হবে।
রোজার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এ থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। একালের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা এর বাইরেও রোজার সুফল বা উপকারিতার নানা দিক তুলে ধরেছেন। মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় রোজার উপকারী ও ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে তারা সবাই একমত। যারা এ বিষয়ে জ্ঞাত নয়, তাদের মধ্যে অনেকের এ ধারণা থাকতে পারে যে, দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার ফলে শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে যায় কিংবা তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এ ধারণা বস্তুত কল্পনাপ্রসূত, যার কোনো সত্যভিত্তি নেই। বরং গবেষণা-পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রোজায় এসব কিছুই হয় না। বরং শারীরিক সামর্থ ও স্পৃহা এর ফলে বাড়ে।
অতি সাম্প্রতিককালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘অটোফেজি’ নামে একটি সূত্র বা বিষয় যুক্ত হয়েছে এবং তা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এ সূত্রটি আবিষ্কার করেছেন জাপানের চিকিৎসক ইয়োশিনোরি ওহসুমি। জানা যায়, মুসলমানদের রোজা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি এ সূত্র আবিষ্কার করেন। এই কৃতিত্বের জন্য ২০১৬ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভ‚ষিত করা হয়েছে। এও জানা গেছে, এর পর অনেক অমুসলমান এখন রোজা রাখছেন এবং তাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
‘অটো’ মানে নিজে নিজে। ‘ফেজি’ মানে ভক্ষণ। অর্থাৎ ‘অটোফেজি’ অর্থ ‘আত্মভক্ষণ’। দেখা গেছে, সারা মাস রোজা রাখার ফলে দিনে দেহের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার পায় না। এ সময় নিজেরই নিজেদের রোগজীবাণু সৃষ্টিকারী কোষ বা বর্জ্য-আবর্জনা খেতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকেই বলে অটোফেজি। মানবদেহের প্রতিটি কোষে একটি করে বর্জ্য জমা হওয়ার জায়গা থাকে। একে বলা যেতে পারে কোষের ডাস্টবিন। এর নাম ‘লাইসোজোম’।
বছরের ১১ মাস কোষগুলো এত ব্যস্ত থাকে যে লাইসোজোম পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে লাইসোজোমে ময়লা-আবর্জনা ভর্তি হয়ে থাকে। দেখা গেছে, কোষগুলো যদি লাইগোহোম থেকে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে না পারে তবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে দেহে নানা প্রকার রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়। টিউমার, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকসের মতো রোগ এভাবেই শুরু হয়। মানুষ যখন রোজা রাখা বা অভুক্ত থাকে তখন দেহকোষগুলোর তেমন কোনো কাজ থাকে না। কিন্তু তাদের নিষ্ক্রীয় হয়ে থাকাও সম্ভব নয়।
অতএব, তারা বসে না থেকে লাইসোজোমে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে শুরু করে। আর দেহের ময়লা-আবর্জনা সরোনোর আলাদা কোনো স্থান নেই, সুতরাং তারা তা খেয়ে ফেলে। একেই বলা হয় ‘অটোফেজি’। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোষগুলো যেমন নিজেরা সবল থাকে তেমনি দেহে রোগব্যাধি সৃষ্টি ও বিস্তার প্রতিরোধ করে। আর এ প্রক্রিয়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়।
স্বাস্থ্যের জন্য রোজা কতটা উপকারী এ থেকে তা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়। রোজায় শরীর-স্বাস্থ্যের আরো নানাবিধ উপকার হয়। বিশেষ করে রোগব্যাধি প্রশমনে ও নির্মূলে রোজার রয়েছে অনন্য-অসাধারণ ভ‚মিকা। আল্লাহর সকল নির্দেশ, ইসলামের সকল বিধান, রাসূল সা.-এর সকল নির্দেশনা মানবজাতির ইহ ও পরকালীন মুক্তির জন্যই। আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে মানবমুক্তির দিশারী করে দিয়েছেন, ইসলামকে তার একমাত্র দীন হিসাবে মনোনীত করেছেন এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কে সকলের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। ইসলাম কেবল মুসলমানের জন্য নয়, সমস্ত মানবমন্ডলীর জন্য তার পছন্দের দীন হিসাবে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন। এর অনুসরণের মধ্যে সকল মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।