Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিত

বিজেএমসি’র অবহেলা: সোনালী আঁশের ঐতিহ্য বিলুপ্তের পথে

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৯, ৪:২৪ পিএম

একসময়কার সোনালী আঁশ বলে খ্যাত পাট সেক্টর অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং পাট মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি’র অবহেলার কারণে আজ ধ্বংসের পথে। আর রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকল গুলোকে বেশ কয়েক বছর যাবত নানা সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এদিকে তিনটি শর্তে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবে।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়টি সরকারি পাটকলে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খুলনার জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর টানা ১৫ দিন ধরে চলা আন্দোলন স্থগিত করা হলো।
বৈঠক শেষে পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন এ ঘোষণা দেন।
চার ঘণ্টা আলোচনার পর শ্রমিকরা ঘোষণা দেন- চলতি সপ্তাহে দুটি বকেয়া এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বকেয়া দেওয়ার পাশাপাশি বুধবার বন্ধ মিলগুলোতে জরুরিভাবে কর্মরত শ্রমিকদের হাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে পে স্লিপ দেওয়ার শর্তে আন্দোলন স্থগিত করা হলো।
বিজেএমসি এর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারনে গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর লোকসানের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যদিও দেশের বেসরকারি পাটকলগুলো লাভ করছে। এ পরিস্থিতির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা এবং শ্রমিক নেতারা কারখানা পরিচালনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং কাঁচা পাট কেনায় অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অব্যাহত ভাবে ভর্তুকি দিয়ে কারখানা চালান যে সম্ভব নয় তা শ্রমিকরাও অনুভব করছেন। তাঁদের মতে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকল গুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হলে এগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিজেএমসিকে গতিশীল করার জন্য বর্তমান বিশ্বায়নের যুগের সাথে সমঞ্জস্য রেখে এর পুনর্গঠন করতে হবে এবং একই সাথে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি এগুলোকে সৎ ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাঁরা বলেছেন পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক বন্ধে সম্প্রতি যে বৈশ্বিক ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে সেই শূন্যস্থান প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন একমাত্র পাটই পুরন করতে পারে। পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ তাঁর বিশ্বব্যাপী হারান পাটের বাজার ফিরে পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
অপরদিকে, বিজেএমসি বিগত ১৫ দিনে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন পাটজাত পণ্য। অর্থাৎ যার বিক্রয়মূল্য হিসাব করলে দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়েছে ৪২ কোটি আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতনের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৬০ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে শুধুমাত্র মজুরি ও বেতন। পক্ষান্তরে নয় মিলের উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি।
গত ৫ মে বিকেল থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়ে ১৩ মে থেকে সারাদেশের ২৬টি পাটকলে এ কর্মবিরতি পালন করা হয়।
সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ খুলনার আহ্বায়ক এড. কুদরত-ই খুদা বলেন, ১০ হাজার শ্রমিক গত তিন মাস ধরে মুজরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ৪০০ এর অধিক এসএসসি পাস শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। ঈদের আগে বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে শ্রমিকদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কঠিন আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে ১৪ হাজার ৫২৫জন স্থায়ী, ১৮ হাজার অস্থায়ী এবং ৫২২জন বদলি শ্রমিকসহ ৩৩ হাজার ৪৭জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ১৮৭জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ