Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নিম্নমানের উপকরণে তৈরি লাচ্ছা সেমাই

ফায়দা লুটছে মৌসুমী ব্যবসায়ী

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুরে লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। শহরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা। আর এ সব কারখানায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নি¤œমানের সব উপকরণ দিয়ে দেদারছে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। অধিক মুনাফার লোভে সেমাই তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক সব ক্ষতিকর উপকরণ। অথচ এসব দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) একেবারে নির্বিকার। 

উত্তরাঞ্চল জুড়ে সৈয়দপুর শহরের তৈরি লাচ্ছা সেমাইয়ের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি রয়েছে। তাই রমজান মাস এলেই এখানে লাচ্ছা সেমাই তৈরি ধুম পড়ে। সেমাই তৈরি কারিগররা দিন রাত সমানতালে সেমাই কারখানাগুলোয় কাজ করে চলেছে। প্রতিটি লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক ইতোমধ্যে সেমাই তৈরির সব রকম উপকরণ মজুদ করে রেখেছে। যাতে উপকরণের সঙ্কটে সেমাই তৈরির কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। আগে কনফেকশনারি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরাই লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও বিক্রি করতো। কিন্তু গত ৫/৬ বছর ধরে শহরের কনফেকশনারি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা ছাড়াও অনেকেই রমজান মাসে এ লাভজনক ব্যবসায় নেমে পড়েন। এ সব মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অধিক মুনাফা। তারা মানুষের স্বাস্থ্যের দিকটি বিবেচনায় না এনে মুনাফার বিষয়টি মাথায় রেখে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করছে লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরে শতাধিক স্থানে লাচ্ছা সেমাই তৈরি কারখানা গড়ে উঠেছে। অথচ এখানে মাত্র ১৩টি লাচ্ছা সেমাই কারখানার বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাদের তৈরি সেমাই ও লাচ্ছা সস্তায় বিক্রি করায় বৈধ ব্যবসায়ীদের বাজার মন্দা যাচ্ছে। শহরের কাজীহাট, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, হাতিখানা, নিয়ামতপুর, মুন্সিপাড়া, গোলাহাটসহ শহরের আনাচে কানাচে মৌসুমী লাচ্ছা সেমাইয়ের কারখানা চালু করা হয়েছে। এ সব কারখানা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন নামে লাচ্ছা বাজারজাত করা হচ্ছে। এ সব লাচ্ছা প্রতিদিন রিক্সাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় শহর ও গ্রামের হাট বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ এসবের বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদন নেই। অধিকাংশ কারখানার পরিবেশ নোংরা, কারিগররাও অপরিচ্ছন্ন। লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে অনিরাপদ পানি ও ক্ষতিকর নি¤œমানের তেলসহ অন্যান্য সব উপকরণ সামগ্রী। অবৈধভাবে গজানো এসব কারখানার কারণে সমস্যায় পড়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সেমাই ও লাচ্ছা তৈরীর কারখানাগুলো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি ও মেসার্স ডায়মন্ড কনফেকশনারীর মালিক মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু বলেন, আমরা বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে সরকারকে সব রকম ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছি। ফলে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। আর তাই উৎপাদিত সেমাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নেই কোন অনুমোদন। দিতে হচ্ছে না সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্সও। তারা সেমাই তৈরিতে ব্যবহার করছে নি¤œমানের উপকরণ। ফলে তারা যে মূল্যেই তাদের সেমাই বেচাবিক্রি করুক না কেন তাদের লাভ বেশি থাকছে। কিন্তু আমাদের সারা বছরই ব্যবসা করতে হয়। আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে। সেখানে বসে আমার সারা বছরই সেমাই ও বেকারি পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু বাজারে যে সব খেলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে তাদের ধরার কোন জায়গা নেই। তাই তারা নি¤œমানের উপাদান দিয়ে তৈরি লাচ্ছা সেমাই কম দামে বিক্রি করেও অধিক মুনাফা লুটছে।
সৈয়দপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. অহিদুল হক বলেন, শুধু রজমান মাস নয় আমরা সারা বছরই হোটেল রেঁস্তোরা ও বেকারিসহ বাজার তদারকি করি থাকি। আর রমজানের শুরু থেকে আমরা লাচ্ছা ও ইফতারি তৈরি ও বাজারজাতের প্রতি অধিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার ও অনুমোদন না থাকায় বেশ কয়েকটি সেমাই কারখানার মালিকের জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ