মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
হাসপাতালে নিয়েও বন্দিদের উপর অত্যাচার চলে। সেখানে তারা মারা যায়। হাসপাতালের অন্য অংশে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আহত অফিসারদের দেখতে আসেন। ফকিরকে দুইবার সমারিক হাসপাতাল ৬০১ নম্বরে নেয়া হয়। তিনি প্রতিটি শয্যার সাথে ৬ জন করে বন্দিকে শিকল দিয়ে বাঁধা দেখতে পান।
ফকির বলেন, একবার স্টাফরা ২০ বছরের এক ডায়াবেটিক রোগীর ইঞ্জেকশন দেয়া বন্ধ করে। ফলে সে মারা যায়। কোনো কোনো রাতে নিজেকে আজরাইল পরিচয় দেয়া একই সাথে রক্ষী ও নার্সের ভূমিকা পালনকারী এক ব্যক্তি কোনো রোগীকে ফ্রস্টেড-গ্লাস দরজার ওপাশে নিয়ে যেত।
তিনি বলেন, আমরা আবছা দেখতাম- তাকে মারধর করা হচ্ছে। চিৎকারও শোনা যেত। তারপর শ্বাসরুদ্ধকর নীরবতা নেমে আসত। পরদিন সকালে হলওয়েতে তার লাশ দেখা যেত। অনেক সময় লাশের স্তুপ জমত। আমরা খালি পায়ে লাশের উপর পা ফেলে চলতে বাধ্য হতাম। আরেক কারাগারের বন্দি ওমর আলশোগরে বলেন, আমাকে বন্দিদের কপালে নম্বর লেখার আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু লাশ পচে উঠলে তাকে আবার কাগজে সে সব নম্বর লিখতে বলা হত। তারপর লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করার নির্দেশ দেয়া হত। সিআইজেএ-র সংগৃহীত মেমোতে দেখা যায়, সামরিক গোয়েন্দা প্রধান, বাশারের কাছে সরাসরি রিপোর্ট পেশকারী জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরোর সদস্য কারাগারে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর কথা জানতেন।
২০১২ সালের ডিসেম্বরের একটি মেমোতে বন্দিদের মত্যুর সংখ্যা ও স্তুপীকৃত লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে সেগুলো পচতে থাকার কথা বলা হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদেরকে তারা কিভাবে মারা গেল? তারা কি স্বীকার করেছে? বিশেষ করে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিচারকালে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির লক্ষ্যে সেসব তথ্য সংস্থার প্রধানকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআইজেএ-র মহিলা মুখপাত্র নারমা জেলাজিক বলেন, দলিলে দেখা যায় যে আদেশ না মানার কারণে কর্মকর্তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
রক্তে লেখা নাম
বন্দি শিবিরে আটক ব্যক্তিরা তাদের নির্যাতন ও দুর্ভোগের কথা পরিবার ও বিশ^কে জানাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেন। ৪র্থ ডিভিশনের কারাগারে কিছু বন্দি যে সব বন্দিদের পরিচয় জানা সম্ভব সেগুলো বাইরে পাচারের সিদ্ধান্ত নেন। মনসুর ওমারি নামের এক বন্দি স্মৃতিচারণ করে বলেন, যদিও আমরা একটি ভূগর্ভস্থ তিন তলা কারাগারে থাকতাম, তারপরও আমরা এ কাজ করে যেতাম। স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থার হয়ে কাজ করেন তিনি। পরে ধরা পড়ে যান।
আরেক বন্দি নাবিল শুরবাজি ছিলেন পেশায় সাংবাদিক। মেজ্জি কারাগারে বন্দি থাকার সময় তিনি ও গাবাস একই সেলে ছিলেন। তিনি টমেটো সস দিয়ে কাপড়ের টুকরোতে সেই বন্দিদের নাম লিখতেন। খুবই অস্পষ্ট। নাম লিখতে কখনো কখনো তিনি তাদের রক্ত ব্যবহার করতেন। একজন বন্দি দরজি সে নাম লেখা কাপড় ওমারির জামায় সেলাই করে দিতেন। তিনি তা পাচার করতেন বাইরে।
কাপড়ে রক্ত দিয়ে লেখা সে সব বার্তা পৌঁছে যায় পাশ্চাত্যের রাজধানীগুলোতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের হলোকাস্ট মিউজিয়ামে তা প্রদর্শন করা হয়। তবে শুরবাজি কারাগারেই ছিলেন। একবার কারাগারে থাকতে চিঠি লেখার সুযোগ পান তিনি। শুরবাজি তার প্রেমিকাকে লিখেলেন, মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়েছে। হাসতে চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না। তারপরও ধৈর্য্য ধরেছি। তোমাকেও ধৈর্য্য ধরতে বলি। দুই বছর পর এক মুক্তি পাওয়া বন্দি জানান, কারাগারে শুরবাজিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
‘আমাদের ভুলো না’
সিরিয়ার কারাগারের বন্দিদের পরিবারের সদস্যরাসহ বাশারের নির্যাতন থেকে বাঁচার আশায় সিরীয়রা লেবানন, তুরস্ক, জর্দান, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গাবাস ২০১৩ সালে মুক্তি পান। তিনি চলে যান সিরীয় সীমান্তবর্তী তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপে। সেখানে তিনি নারী মানবাধিকার ও উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য কর্মসূচি পরিচালনা করছেন।
মরিয়ম খলিফ একটি উদ্বাস্তু স্কুল ও নারী ক্ষমতায়নে কাজ করেন। ফকির সাভদানায়া থেকে বেঁচে আসা বন্দিদের এলামনাই এসোসিয়েশনে যোগ দিয়েছেন। তিনি অন্যদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার উপর দলিল তৈরি, তাদের কষ্ট লাঘব করা ও কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করেন।
দারবিশ নিদ্রাহীনতা ও আতঙ্ক রোগে ভুগছেন। তবে সিরীয় কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি দামেস্কে একটি ফরাসি স্কুলে কর্মরত এ সিরীয়-ফরাসি শিক্ষক ও তার বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেকে মেজ্জি কারাগারে হত্যার ঘটনায় ফরাসি আদালতে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য দেন। এ সাক্ষ্য ফরাসি কৌসুলিদের সিরীয় শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মামলুক, বিমান বাহিনী ইন্টেলিজেন্স প্রধান ও মেজ্জি কারাগারের প্রধান হাসানের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে ফরাসি কর্মকর্তাদের সাহায্য করেছে। এখন মামলুক ইউরোপে এলেই তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
দারবিশ বলেন, বিচারের এ হমকি বন্দিদের রক্ষা করার একমাত্র উপায়। এটাই একটি প্রাণকে রক্ষা করতে পারে। বন্দিদের কেউ কেউ আমার বন্ধু। আমি যখন মুক্তি লাভ করে বেরিয়ে আসি তারা আকুল কন্ঠে বলেছিলেন- দয়া করে আমাদের ভুলে যাবেন না।
গত বছর জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোর প্রস্তুতি সমন্বিত করতে আন্তর্জাতিক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পদ্ধতি নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু এ সংস্থা কোনো সিদ্ধান্ত বলবৎ করতে, অভিযোগ দায়ের করতে বা গ্রেফতার করতে পারে না। সিরিয়া যুদ্ধের এখনো কোনো রাজনৈতিক সমাধান নেই। শান্তি আলোচনা স্থগিত। রাশিয়া পাশ্চাত্যকে সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয় এড়িয়ে গেছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন জানান, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যাতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সে জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং রাশিয়া সিরীয় আটক ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ করে তুলতে পারে।
এখনো খুঁজে ফেরা
বর্তমানে বার্লিনে বসবাসরত সিরীয় নারী ফাদওয়া মাহমুদ জানেন না তার স্বামী আবদেল আজিজ আল খায়ের বেঁচে আছেন কিনা। ৬ বছর আগে বিশিষ্ট ভিন্ন মতাবলম্বী আল খায়ের বিদেশ থেকে বিমানে করে দামেস্কে আসেন। সরকার ও অহিংস বিরোধীদের মধ্যে আলোচনা করতে তিনি এসেছিলেন। তার নিরাপত্তার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। তার ছেলে বাবাকে আনতে বিমান বন্দরে গিয়েছিল। কিন্তু বিমান বাহিনী ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রিত বিমান বন্দর থেকে তিনি কখনোই আর বাইরে আসেননি। তারা এ পর্যন্ত তার কোনো খবর পাননি।
ফাদওয়া বলেন, আমরা হতাশ হইনি। তাকে এখনো খুঁজে ফিরছি। তার ঘরের এক পাশে কম্বল স্তুপীকৃত হয়ে আছে। হালকা নীল ও হলুদ রঙের কম্বল। স্বামীর জন্য এগুলো সংগ্রহ করছেন তিনি। তার ধারণা, কারাগারে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে তার স্বামীকে রাখা হয়েছে। এ কম্বলগুলো তার দরকার হবে। (নিবন্ধকার অ্যান বার্নার্ড নিউইয়র্ক টাইমসের সাবেক বৈরুত ব্যুরো প্রধান। বর্তমানে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সে এডওয়ার্ড আর. ম্যারো ফেলো।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।