Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলে ঈদের বাজারে খড়া জনস্বাস্থ্য সহ কৃষি ও মৎস্য সেক্টরেও বিরূপ প্রভাব

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৯, ৬:৩৫ পিএম

অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলে সুস্থ্য জনজীবন বিপর্যস্ত হবার সাথে ঈদের বাজার পর্যন্ত ম্লান হয়ে আছে। তাপমাত্রার পারদ এখনো ৩৬ডিগ্রীর কাছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ ডিগ্রী বেশী। বৃষ্টিপাতের পরিমানও কম। গত মার্চ থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের নিচে। ফলে তাপমাত্রাও বেশী। গতমাসেও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৪৮.৬% কম। মার্চে যা ছিল স্বাভাবিকের ২০% কম। অব্যাহত তাপ প্রবাহের কারনে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘড়ের বাইরে বের হচ্ছেন না। 

লাগাতর তাপ প্রবাহে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে পেটের পীড়া সহ ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। চিকেনপক্সে আক্রান্তের সংখ্যাও এবার সাম্প্রতিককালের সর্বাধীক। গত কয়েকমাসে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতেই প্রায় ৩৫হাজার ডায়রিয়া রোগী এসেছে চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মতে এর বাইরে আরো দ্বিগুন মানুষ ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে বেসরকারী পর্যায়ে। সরকারী পর্যায়ে চিকেনপক্সের কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও সে সংখ্যাও ৫০ হাজারের কম নয়। খোদ বরিশাল মহানগরীর ঘরে ঘরে এখন চিকেনপক্সের রোগী।
পবিত্র রমজানে এবার অব্যাহত তাপ প্রবাহে রোজাদারদের চরম দূর্ভোগের পাশাপাশি ঈদের বাজারও ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ২৫০/৩১০ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের স্থলে ২৬০ মিলি বৃষ্টিপাতের কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত মাসের প্রথম কুড়ি দিনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১১২মিলিমিটার। গত ২৩ মে ফনির প্রভাবে এবৃষ্টিপাত হলেও এরপর থেকে আর তার দেখা নেই।
অব্যাহত তাপ প্রবাহে মৎস্য আহরন থেকে শুরু করে কৃষি কাজেও বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মকভাবে। জেলেরা নদীতে নামতেই পারছেনা অত্যাধীক তাপ প্রবাহের কারনে। একই কারনে খড়তাপের ফসলের মাঠে দাড়াতে পারছে না কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। ফলে অধিক মজুরী দিয়েও এসব শ্রমিকের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে পারছেনা জমির মালিকরা। ফলে এবার কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যায় আরো বাড়ছে। অথচ ফসলের বিক্রী মূল্য কম।
বৃষ্টির অভাবে তাপমাত্রার পারদও ওপরের দিকে। গত ২৪ এপ্রিল বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়সে উঠে গেলেও ফনির প্রভাবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তা ৩০ ডিগ্রীরও নিচে নেমে যায়। কিন্তু এর পর থেকেই তাপ মাত্রার পারদ আবার ক্রমশ ওপরে উঠছে। গত সপ্তাহখানেক ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে থাকছে। দিনের বেলা রোজাদারদের ঘরের বাইরে যাওয়াই কষ্টকর হয়ে উঠছে। ফলে দিনের চেয়ে রাতেই কিছুটা সাচ্ছন্দ থাকলেও ইফতার ও তারাবীর পরে অনেকেই আর কেনাকাটার জন্য দোকানে যেতে চাইছেন না। ফলে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে এবার ঈদ বাজারে এক ধরনের খড়া চলছে। অথচ রোজার অর্ধেক শেষ হতে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যাবসায়ী মহল।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বিস্তৃত রয়েছে। সোমবারও আবহাওয়ার পূর্বভাসে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বজ্র সহ বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও তার দেখা মেলেনি সন্ধা পর্যন্ত। এমনকি বরিশালে সীমান্ত লাগোয়া মাদারীপুর ও খুলণা বিভাগের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকার কথাও বলা হয়েছে আবহাওয়র বুলেটিনে। সোমবার বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পটুয়াখালীতে যা ছিল ৩৫.৭ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে বুধবার থেকে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টির প্রবনতা বদ্ধি পাবার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ