পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছাত্রলীগের সদ্য গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে এসে ফের হামলার শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। এতে ৬ নেত্রীসহ আহত হয় ১০ জন। বিতর্কিতদের বাদ দেয়া, কমিটি পুনর্গঠন ও কয়েক দফায় হামলার বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের নিচে অবস্থান নিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সদ্য গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিতদের একটি তালিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে দেখা করতে রাত ১২টার দিকে টিএসসির ভেতরে আসেন পদবঞ্চিতদের ১০ থেকে ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল। রাত ১টায় শীর্ষ নেতাদের কথা শুরু হয় পদবঞ্চিতদের সাথে। আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বি এম লিপি আক্তারকে প্রশ্ন করেন তুই আমার বিরুদ্ধে মাদক নেয়ার বিষয়ে চ্যানেলগুলোতে কথা বলেছিস কেন? লিপি আক্তার পাল্টা বলেন, আপনারা তো সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিষয়ে খারাপ কথা বলেছেন। এটা আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি। পরে গোলাম রাব্বানী লিপিকে বেয়াদব বলে গালি দেন।
গোলাম রাব্বানীর এমন মন্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে লিপি আক্তারের সঙ্গে তার তর্ক বেধে যায়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাব্বানীর অনুসারীরা লিপিসহ তার সঙ্গী ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি শ্রাবণী শায়লা ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ অন্যদের মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, গোলাম রাব্বানী নিজে বি এম লিপিকে মারধর করেন। এ সময় টিএসসির ভেতরে তাদের ওপর দুই ধাপে হামলা করা হয়।
হামলায় পদবঞ্চিতদের ১০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা। এর মধ্যে নতুন কমিটির সংস্কৃৃতি বিষয়ক উপ-সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আজমীর শেখ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন। এর মধ্যে শেখ আব্দুল্লাহের ডান ঘাড়ের হাড় ভেঙে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যে শুয়ে ছিলেন।
এ দিকে হামলার পর রাত ৩টার দিকে পদবঞ্চিতরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন। বিতর্কিতদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ দিতে এসে হামলার শিকার হওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ও তার কাছে বিচার চান। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টিএসসি থেকে বেরিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করেন। এ সময় পদবঞ্চিতদের বুঝিয়ে অনশন থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে পদবঞ্চিতরা তাদের গ্রহণ করেননি। তারা মারধরের বিচার দাবি করে তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় গোলাম রাব্বানী তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি দুঃখিত। তোমরা চলে যাও। আমি কাল নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব। কিন্তু হামলার শিকার নেতাকর্মীরা তাতে রাজি হননি। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পেলে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এ অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনীসহ তাদের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে পদবঞ্চিতদের নেতৃত্বে থাকা গত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, আমরা যে ৯৯ জনের নামের তালিকা দিতে সভাপতি-সম্পাদক বরাবর আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আমাদের বোন ও রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তারকে মারধর করে। এরপরই তার অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি অভিযোগ করেন, ডেকে এনে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তারা এই হামলার বিচার চান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান।
মো. তানভীর হাসান সৈকত অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিতর্কিতদের ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে গিয়েছিলাম। গতকাল সেখানেও আমরা হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হই। এর প্রতিবাদে আজকে আমরা অবস্থান কর্মস‚চি পালন করছি। এ সময় তিনি মধুর ক্যান্টিন ও টিএসটিতে হামলার তদন্তসাপেক্ষে সঠিক বিচার এবং ছাত্রলীগের কমিটিতে যে বিতর্কিত লোকজন রয়েছে, তাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং কমিটি পুনর্গঠন করার দাবি করেন। একই সঙ্গে লিপি আক্তারের ওপর মারধর করায় গোলাম রাব্বানীকেও ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন তিনি।
অনশনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একমাত্র আপার আশ্বাসেই এখান থেকে উঠব। আপা যদি আমাদের ডাকেন তাহলে আমরা এখান থেকে যাবো, তা না হলে আমরা এখান থেকে যাবো না। দলের হাইকমান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আমাদের কথা রাখেনি। এমনকি ছাত্রলীগের যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেয়া, তারা তা দিতে পারেননি।
নিজের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা ১২ জন লাঞ্ছিত হয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। গোলাম রাব্বানী যে তাকে মারধর করেছিল, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।
নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কমিটিকে কেন্দ্র করে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। কারো গায়ে হাত তোলা হয়নি। সিন্ডিকেটের নির্দেশে নাটক সাজিয়ে তারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিতদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমি আর শোভন শুধু তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মন্তব্য চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেত্রীকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ:
এদিকে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না পেয়ে প্রতিবাদের কারণে হামলার শিকার হওয়া রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশাকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর শাহবাগ থানায় গতকাল রাতে একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন (জিডি নম্বর ১২০১)। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাবির সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বদরুন্নেছা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এস কে রিমা তাকে ফোন দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কথা বলতে চান। সন্ধ্যায় রিমা হাতিরপুলের একটি বাসায় শ্রাবণী দিশার কাছে যান। কিন্তু রিমার আচরণ দেখে তিনি বুঝতে পারেন নওফেলের কথা বলে তাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এ সময় তড়িঘড়ি করে রিমা বেরিয়ে যান। পরে তারা জানতে পারেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন।
পরে এই ঘটনায় শ্রাবণী দিশা শাহবাগ থানায় জিডি করতে যান। এ সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে বদরুন্নেছা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এস কে রিমা বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল আমার কাছে ফোন করে শ্রাবণী দিশার নম্বর চান। পরে শ্রাবণী দিশা আমাকে ফোন দিয়ে হাতিরপুলে একটি বাসায় যেতে বলেন। আমি সেখানে যাই। তার সঙ্গে আমার স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়। অপহরণের কী হলো এখানে বুঝতেছি না। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দেশে অবস্থান করছেন বলেও জানান তিনি। শ্রাবণী দিশা অভিযুক্তদের গেফতার না করায় ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।