পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মার বুকজুড়ে এখন শুধু বালির উত্তাপ। হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহ থেকে যাত্রা শুরু করে ভারত অংশে গঙ্গা আর বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের পাশ দিয়ে রাজশাহী পাবনা কুষ্টিয়া রাজবাড়ি জেলা পেরিয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যমুনাকে গোয়ালন্দ নামক স্থানে পদ্মা নাম ধারণ করে চাঁদপুরের মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে।
চাঁপাই থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যার দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার। যার মধ্যে রাজশাহী পাবনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে দেড়শো কিলোমিটার। এ দীর্ঘ পথচলা পদ্মার রয়েছে একটি উপনদী মহানন্দা আর অসংখ্য শাখা প্রশাখা নদ-নদী। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, যার সংখ্যা ৬৭টির বেশি। অবশ্য অধিকাংশ এখন বিলুপ্ত। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতি আর এ অঞ্চলের মানুষের কাছে মরণবাঁধ খ্যাত ‘ফারাক্কা ব্যারেজ’ বিগত সাড়ে চার দশকে পদ্মা ও তার শাখা প্রশাখা গুলোর দফারফা করে ছেড়েছে। সব নদীর বুকে এখন বিশাল বালুচর। প্রচন্ড খরতাপে আবহাওয়া অসহনীয়। মরা পদ্মার বালুচরের তপ্তবালি আরো বিপর্যস্ত করে তুলছে পরিবেশ। কৃষি মৎস্য নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত।
পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ায় খাল বিল যেমন শুকিয়েছে। তেমনি নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে গড়ে ভূ-গর্ভস্থ পানিস্তর ১১৫ ফুট নীচে অবস্থান করছে। সাধারণ নলক‚পে এখন আর পানি ওঠে না। এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সাব মার্সিবল পাম্প। খাবার ও ব্যবহারের পানির জন্য গভীর নলকুপের পানিই ভরসা। ফারাক্কার কারনে নদীতে চর পড়তে পড়তে তলদেশ ১৮ মিটার ওপরে উঠে এসেছে। নদীর জীবনচক্র ধ্বংস হয়েছে। জলজ প্রাণী বিশেষ করে শুশুক আর ঘড়িয়ালের বিচরণক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। জিহ্বায় পানি আনা পদ্মার ইলিশ এখন আর তেমন পাওয়া যায়না। অথচ এক সময় ইলিশের বিচরণক্ষেত্র ছিল রাজশাহী হতে ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত। ফারাক্কা দিয়ে পানি আটকানোর কারনে পদ্মায় পানি প্রবাহ একেবারেই কমে গেছে। মাছ আসার জন্য নদীর পানিতে যে পরিমান প্রবাহ থাকা দরকার সে পরিমাণ প্রবাহ না থাকায় এখন আর ইলিশ আসেনা। এ নদীতে চিংড়িসহ দেড় শতাধিক মিঠা পানির মাছ ছিল। সেসব এখন বিলুপ্ত প্রায়। মাছ বলতে এখন খামারের মাছেই ভরসা।
এক সময়ের অন্যতম খড়স্্েরাতা পদ্মা এখন বিশাল বালুচরের নিচে চাপা পড়ে হাহাকার করছে। চঞ্চলা যৌবনা আর দূরন্ত ছুটে চলা পদ্মা এখন মরা নদীর নাম। শাখা প্রশাখা নদ-নদী বড়াল, মরা বড়াল, নারদ, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, ছড়াসাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবত এদের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। এসব নদীর নাম মানচিত্র আর কিছু বইয়ের পাতায় অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। এক সময়ের খরস্্েরাতা নদীটি এখন নর্দমার নাম নিয়ে বেঁচে আছে। ফারাক্কা ছাড়াও আরো বেশকটি নদীতে ভারত বাঁধ দিয়েছে।
ভারতের পানি আগ্রাসী নীতি শুধু এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোকে শুকিয়ে মারেনি। যার প্রভাব পড়েছে এসব নদীর সাথে সংযুক্ত খালবিলে। শুকিয়ে গেছে এ অঞ্চলের বিখ্যাত চলনবিল, যার বিস্তীর্ণ পানিরাশি দেখে বোঝার উপায় ছিলনা এটা বিল না নদী। নদী গবেষকদের মতে, চলনবিল, বিল হালতি, বিল হিলনা, মহানগর বিলভাতিয়া, উথরাইল, খিবির বিল, চাতরা, মান্দার বিল, বিলকুমলী, পাতি খোলা, অঙ্গরা, চাঙ্গা, দিকমী, পারুল, সতী, মালসী, ছোনী, বাঘনদী, পিয়ারুল, মিরাট, রক্তদহ, কুমারীদহ, খুকসী, জবায়ের, বাঁধ বাড়িয়া গ্রামের বিল আর দহ হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে। নদ-নদীগুলোয় এখন বর্ষা মওসুমে পানি জানান দেয় তাদের অস্তিত্বের কথা। নদী খাল বিল মরে যাবার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আজ সব শেষ হয়ে গেছে, খাল বিল দিঘী ভরা মাছ নেই।
নদ-নদী আর বিলের বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের। এতে আবাদি জমি বাড়ার সাময়িক প্রাপ্তি আর ফসল পেলেও সুদুরপ্রসারী প্রভাব মারাত্মক হয়ে উঠেছে। চারিদিক থেকে মরুময়তা ধেয়ে আসছে। ভারত তার পানি আগ্রাসী নীতিতে গঙ্গায় ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশের মহাবিপর্যয় ডেকে এনে ক্ষান্ত হয়নি। ভারত সীমান্তের ওপারে তিস্তা নদীর গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে পুরো উত্তরাঞ্চলে বিপর্যয় এনেছে। এক সময়ের খরস্্েরাতা তিস্তা নদীও পদ্মার পরিণতি লাভ করেছে। ফারাক্কা ব্যারেজের কারনে কুষ্টিয়া যেমন গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। তেমনি গজলডোবা ব্যারেজের কারনে তিস্তার ১২৫ কিলোমিটারজুড়ে এখন পানির বদলে বালুর উত্তাপ। তিস্তাসহ এ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আলিয়া, দুধকুমার, বুড়ি, তিস্তাসহ ৩৫টি ছোট বড় নদ নদী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। উত্তরের নীলফামারী রংপুর গাইবান্ধা বগুড়া জয়পুরহাট জেলার ৩৫ উপজেলায় সাড়ে তের লাখ একর জমিতে চাষাবাদের জন্য সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন তিস্তা ব্যারেজ পানির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পদ্মা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলো পানি বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের দাদাগিরির নীচে চাপা পড়ে আর্তনাদ করছে নদ নদীগুলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।