প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
মার্কিন নির্মাতা জিম জারমাশের ‘দ্য ডেড ডোন্ট ডাই’ ছবির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে গত (১৪ মে) পর্দা উঠেছে ৭২তম কান উৎসবের। আগামী ২৫ মে পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। রেকর্ড গড়ে কানসৈকতে পা রেখেছেন আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু। তার মাধ্যমে এবারই প্রথম কোনও মেক্সিকান নাগরিক এই উৎসবের বিচারকদের প্রধান হলেন। শুধু তাই নয়, এদিক দিয়ে প্রথম লাতিন আমেরিকান তিনিই। যদিও কানের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় কুড়ি বছর আগে উৎসবটির প্যারালাল বিভাগ স্যুমে দ্যু লা ক্রিতিকে স্থান পায় তার প্রথম পরিচালিত ছবি ‘আমোরেস পেরোস’ (২০০০)। পরে এটি অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে স্থান করে নেয়।
কানের প্রধান বিচারকের আসনটি তার। অনুভূতি কেমন? জানিয়েছেন এই মেক্সিকান নির্মাতা। ইনারিতু বলেন, ‘আমি অবশ্যই আনন্দিত। এটা সম্মানের ব্যাপার। তবে বিচারকদের সভাপতির দায়িত্ব নেয়া আমার জন্য সহজ কাজ ছিল না। কারণ আমার পছন্দের নির্মাতাদের চলচ্চিত্রকে বিচার করতে হবে ভেবে মনটা কেমন যেন বাধ সাধছিল। সত্যি বলতে বিচার শব্দটা এখানে আমার পছন্দ নয়।’
জানা গিয়েছে প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক প্যানেলে ইনারিতুর নেতৃত্বে থাকছেন চারজন পুরুষ ও চারজন নারী। নারীরা হলেন আমেরিকান অভিনেত্রী এল ফ্যানিং, সেনেগালের অভিনেত্রী-পরিচালক মায়মুনা এনদাই, মার্কিন নির্মাতা কেলি রাইকার্ড, ইতালিয়ান নারী নির্মাতা অ্যালিস রোরওয়াচার, গ্রিসের পরিচালক ইওর্গেস লানতিমোস, পোল্যান্ডের পরিচালক পাওয়েল পাওলিকস্কি, ফরাসি নির্মাতা রবিন ক্যাম্পিলো (১২০ বিপিএম-বিটস পার মিনিট) ও ফরাসি গ্রাফিক ঔপন্যাসিক-নির্মাতা এনকি বিলাল।
বিচারক প্যানেলের সাথে চারবারের অস্কার জয়ী আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু ২০০৬ সালে ‘বাবেল’-এর সুবাদে কানে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান ইনারিতু। প্রথম মেক্সিকান নির্মাতা হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। তার প্রথম আমেরিকান ছবি ‘টোয়েন্টি ওয়ান গ্রামস’-এর সুবাদে অস্কারে মনোনয়ন পান নাওমি ওয়াটস ও বেনিসিও দেল তোরো। অস্কারের ইতিহাসে প্রথম মেক্সিকান নির্মাতা হিসেবে পরিচালক কিংবা প্রযোজক বিভাগে মনোনয়ন পান ইনারিতু।
অস্কারে সাতটি বিভাগে মনোনীত হয় এটি। স্প্যানিশ ভাষায় তার দ্বিতীয় ছবি ‘বিউটিফুল’ কানে সেরা অভিনেতার পুরস্কার এনে দেয় হাভিয়ার বারদেমকে। অস্কারেও মনোনয়ন পায় ছবিটি। ৮৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে তার ‘বার্ডম্যান’ সেরা পরিচালক, সেরা চলচ্চিত্র, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য ও সেরা চিত্রগ্রহণ পুরস্কারগুলো পায়। ৮৮তম অস্কারে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ ছবির জন্য টানা দ্বিতীয়বারের মতো অস্কারে সেরা পরিচালক হন ইনারিতু। এছাড়া সেরা অভিনেতা হন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। এবারের আসরে প্রতিযোগিতা বিভাগে আছে তার অভিনীত ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন...হলিউড।
২০১৭ সালে কানে ইনারিতুর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ‘ফ্লেশ অ্যান্ড স্যান্ড’ অফিসিয়াল সিলেকশনে উপস্থাপন করা হয়। এটি নির্মাণের জন্য তাকে বিশেষ অস্কার দেয় অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বোর্ড অব গভর্নরস। ৯১ বছরের ইতিহাসে মাত্র ১৫ বার এই সম্মান দেয়া হয়েছে বিভিন্ন গুণীজনকে।
ফ্লেশ অ্যান্ড স্যান্ড’-এর বিষয়বস্তু অভিবাসন সংকট। এ প্রসঙ্গে ইনারিতু সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তার কথায়, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই। তবে শিল্পের মাধ্যমে যেকোনও নেতিবাচক পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অভিব্যক্তি দেখাতে পারি। তাই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা ও সেগুলো সারাবিশ্বে দেখানো জরুরি।’
মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকরা কোন পদ্ধতিতে কাজ করবেন? ইনারিতুর উত্তর, ‘আগে কখনও কোনও উৎসবের বিচারকদের সভাপতি ছিলাম না। আমার পরিবারেরও কেউ ছিল না! জানি না কীভাবে কাজটা করবো। সেই উত্তর আপাতত নেই। এটুকু বলতে পারি, এটি আবেগপ্রবণ কাজ। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিচার পছন্দ করি না। এখানে আবেগ সবার ওপরে। কান এমন একটি উৎসব যা ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জুরিদের সভাপতি হওয়ার মতো অসাধারণ সম্মান পেয়ে আমি ধন্য ও রোমাঞ্চিত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন ও চমৎকার কাজ দেখার সুযোগ পাওয়া সত্যিকারের আনন্দ ও একইসঙ্গে দায়িত্ব। আমরা আবেগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটা করতে চাই। আমরা শিখবো ও নিজেদের রূপান্তর করবো।’
বিচার কাজ পরিচালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কে পরিচালনা করেছেন তা আমাদের কাছে মুখ্য হবে না। ছবিকে ছবি হিসেবে দেখবো। সেটা পুরুষ নাকি নারী, নবীন নাকি প্রবীণ বানিয়েছেন সেসবে মন দেবো না। ছবি মানসম্পন্ন কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ। কোনও প্রভাবই কাজ করবে না আমাদের ওপর। আমার প্যানেলের বিচারকরা একে অপরের সাথে নিজেদের উপলব্ধি ও আবেগ ভাগাভাগি করবো। কী আমাদের মনকে নাড়া দিলো ও কী শিখলাম তা নিয়ে আড্ডা দেবো আমরা। এটা চমৎকার একটা অনুভূতি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।