মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাশার আল আসাদ ও তার সহযোগীরা ৯ বছর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। গ্রেফতার থেকে নিরাপদে আছেন। রাশিয়া সামরিক শক্তি ও নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়ে তাকে রক্ষা করছে।
একই সময়ে আরব দেশগুলো তার সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছে ও ইউরোপীয় দেশগুলো সে পথ অনুসরণের কথা বিবেচনা করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পূর্ব সিরিয়ায় মোতায়েন দুই হাজার মার্কিন সৈন্যের অধিকাংশকে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছেন।
বিচার থেকে এই যে অব্যাহতি দেয়, এটা শুধু সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। নিরাপত্তা সংস্কার ছাড়া কমিটি অব ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি (সিআইজেএ) মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ৫০ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু নির্বিচার গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরবে বলে মনে হয় না। ইউরোপীয় চরম ডানপন্থী থেকে সউদী আরব পর্যন্ত কর্তৃত্ববাদ শক্তিশালী হওয়ার এই যুগে আসাদ দেখিয়েছেন যে বেসামরিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সহিংসতা একটি জয়লাভের কৌশল হতে পারে।
বার্লিনে জার্মান কৌসুলিদের সাহায্যকারী সিরিয়ান মানবাধিকার আইনজীবী মাজেন দারবিশ বলেন, মানুষ ভুলে গেছে যে স্বৈরতন্ত্র কি। কারণ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমরা ৭০ বছর শান্তিতে ছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্র বা রাজনীতিকদের ডিএনএ’তে মানবাধিকার নেই। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার সিরীয় বিলাসিতা নয়। এটা বিশে^র সমস্যা।
সম্প্রসারিত গুলাগ
সিরিয়ার বন্দিশিবিরগুলো বাশারের পিতা হাফেজ আল আসাদের তৈরি করা ব্যবস্থারই বড় সংস্করণ। ১৯৮২ সালে হাফেজ আল আসাদ হামায় মুসলিম ব্রাদারহুডের এক অভ্যুত্থান দমন করেন। তিনি শহরটির বড় অংশই গুঁড়িয়ে দেন এবং বহু হাজার ইসলামপন্থী, বামপন্থী, ভিন্নমতাবলম্বী ও সাধারণ সিরীয়দের গ্রেফতার করা হয়। ফরাসি উপনিবেশবাদী, আঞ্চলিক স্বৈরশাসক ও এমনকি নাজিদের কাছ থেকে ধার করা কৌশলে দুই দশক সময়ে ১৭ হাজার আটক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়। তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে এডলফ হিটলারের পলাতক সহযোগী অ্যালোইস ব্রæনারও ছিলেন।
২০০০ সালে বাশার যখন তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন তখন তিনি এ সব বন্দি শিবির বহাল রাখেন। সামরিক, রাজনৈতিক, বিমান বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-এ ৪টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিটিরই সিরিয়া ব্যাপী শাখা রয়েছে। অধিকাংশেরই তাদের নিজস্ব কারাগার রয়েছে। সিআইজেএ তাদের শত শত জনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে।
২০১১ সালের মার্চে কয়েকজন তরুণ বাশার আল আসাদের সমালোচনামূলক দেয়াল লেখার কারণে আটক ও নির্যাতনের শিকার হয়। এটা সিরীয়দের গণঅভ্যুত্থানের দিকে চালিত করে ও তা আরব দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তরুণদের নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ তাদের নিজ শহর দারার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আরো বহু লোক আটক ও তার প্রতিবাদে আরো বিক্ষোভ ঘটে।
রিয়াদ আভলার নামে এক তুর্কি নাগরিক বলেন, সাদনায়া কারাগারে বন্দি ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে বন্যাস্রোতের মত গোটা সিরিয়ার আটক ব্যক্তিরা যোগ দেয়। নতুন বন্দিদের মধ্যে আবর্জনা সাফকারী থেকে কৃষক, ইঞ্জিনিয়ার থেকে ডাক্তার তথা সিরিয়ার সকল শ্রেণির মানুষ ছিল।
সিরিয়ার এক কারাগারে গণহত্যা বিষয়ে সিরীয়দের সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে ১৯ বছরের তরুণ রিয়াদ আটক হন। ২০ বছর কাটে তার সিরিয়ার কারাগারে। সিরীয় বন্দী শিবিরগুলোতে কত লোক আটক ছিল বা আছে সরকার সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয় না। মানবাধিকার কর্মীদের মতে এ সংখ্যা কয়েক লাখ থেকে ১০ লাখ হতে পারে।
সকল বিবরণেই জানা যায় যে বন্দী শিবিরগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি বন্দী রাখা হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক বন্দিকে নিয়মিত কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও মিলিশিয়ারা স্কুল, স্টেডিয়াম, অফিস, সামরিক ঘাঁটি ও চেকপয়েন্টগুলোতেও অসংখ্য অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে।
সিরীয় নেটওয়ার্কের হিসেব মতে বন্দিশিবিরগুলোতে এক লাখ ২৭ হাজার ৯১৬ জন বর্তমানে আটক আছে। কিন্তু এটা সম্ভবত সঠিক সংখ্যা নয়। আটক ব্যক্তিদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের হিসেব মতে এ সংখ্যার মধ্যে নিহত বা যারা পরে মুক্তি পেয়েছে, তারা নেই। সরকারি গোপনীয়তার কারণে কেউ জানে না নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে কত লোক মারা গেছে। কিন্তু সরকারি মেমো ও ছবিতে হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর কথা জানা যায়।
নিরাপত্তার স্বার্থে সিজার ছদ্ম নাম নেয়া এক সাবেক সামরিক পুলিশ কর্মকর্তার ছিল লাশের ছবি তোলার দায়িত্ব। তিনি ৬ হাজার ৭০০ লাশের ছবি নিয়ে পালিয়ে আসেন সিরিয়া থেকে। হাড্ডিসার ও বিকৃত লাশগুলোর ছবি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ^ বেদনাব্যথিত হয়ে পড়ে। এ কর্মকর্তা তার বসের ডেস্ক থেকে মৃত্যু বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো মেমোর ছবিও তুলে আনেন। এ সব মেমোতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নির্যাতনের সফর
আলেপ্পোর প্রতিবাদ বিক্ষোভের সংগঠক গাবাশকে পর্যায়ক্রমে ১২টি বন্দি শিবিরে রাখা হয় ও নির্যাতন চালানো হয়। তারপরও তিনি বেঁচে যান। এই যে এক বন্দি শিবির থেকে আরেক বন্দি শিবিরে নেয়া, এটাকে তিনি নির্যাতনের সফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১১ সালে ২২ বছর বয়সে তার দুর্ভোগের শুরু হয়। সরকারি ভবন নির্মাণ ঠিকাদারের বড় ছেলে তিনি দামেস্কের দারায়া উপশহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখে নিজ শহরে আলেপ্পোতেও বিক্ষোভের আয়োজন করেন।
২০১১ সালের জুনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর বিক্ষোভ না করার অঙ্গীকার নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। তিনি বিমর্ষ মুখে বলেন, কিন্তু আমি বন্ধ করিনি। আগস্টে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এ সপ্তাহে সিআইএর এক মেমোতে দেখা যায়, বাশার আল আসাদ দায়িত্ব পালনে শিথিলতার জন্য প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এবং যারা জনগণকে বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দিচ্ছে তাদের গ্রেফতারের জন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
গাবাসকে সামরিক ও সাধারণ গোয়েন্দা স্থাপনাগুলোতে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখা, পেটানো ও চাবুক মারা হয়। অবশেষে তাকে আরো তরুণদের মত দেশ ছাড়ার কঠোর নির্দেশ দিয়ে মুক্তি দেয় তারা।
সমমনারা দেশ ছাড়ছিল বা গ্রেফতার হচ্ছিল। এ অবস্থায় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র না ধরার জন্য চেনা শোনাদের বলেন। কিন্তু তৃতীয়বার তাকে গ্রেফতার করে আলেপ্পোর বিমান বাহিনী ইন্টেলিজেন্স। তার বিরুদ্ধে আলেপ্পোতে বোমা হামলার বানোয়াট অভিযোগ এনে তা স্বীকার করে নিতে চাপ দেয়া হয়।
এ সময় তাকে পেটানোর জন্য টায়ারের সাথে বেঁধে রাখা হত। কখনো তাকে ঠান্ডা ঘরের মধ্যে উলঙ্গ করে রাখা হত ও সে অবস্থায় পেটানো হত। তার মুখের মধ্যে বন্দুকের নল ঠেসে ধরা হত। তাকে দুর্বল করতে বাইরে এক নারীর চিৎকার শুনিয়ে তাকে বলা হত যে তোমার মা কাঁদছে।
প্রায় সব বন্দির কাহিনীই এক। খলিল কে ছদ্ম নামের একজন বলেন, তিনি জিজ্ঞাসাবাদকারীদের ২১ বছরের এক তরুণের গায়ে পেট্রোল ঢেলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে দেখেছেন। গাবাস বলেন, আমি যা করিনি তা স্বীকার করতে চাইনি। এক সাথে ৫ জন মিলে প্রশ্ন করত আমাকে। ঠান্ডায় শরীর অবশ, পিপাসায় কাতর, ঠোঁটে মারধরের ফলে রক্ত, চোখ খুলে দেখতে পাচ্ছেন না কিছু। তার মধ্যে সবাই চিৎকার করছে, পেটাচ্ছে তাকে।
তার পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছিল। পায়ের পাতায় মারতে মারতে সব চামড়া উঠে গিয়েছিল। তিনি সেগুলো প্যান্টের পকেটে রেখেছিলেন। কিন্তু তারা টের পেয়ে প্যান্টটা নিয়ে যায়। ১২ দিনের মাথায় তিনি স্বীকারোক্তি দেন।
পরাবাস্তব শাস্তি
২০১২ সালের মার্চে গাবাসকে মেজ্জি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নেয়া হয়। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।