Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলপুরে শ্রমিক সংকটে ধান কাটায় কৃষকের পাশে গ্রামাউস ও হেলডস

ফুলপুর সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম

মময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকট ও ধানের দরপতনে লোকসানের মুখে পড়া হতাশ চাষির ধান কেটে ঘরে তোলার কাজে সহযোগিতা করতে কৃষকের পাশে দাঁড়ালো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রামীণ মানবিক উন্নয়ন সংস্থা (গ্রামাউস) ও হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপ।

শুক্রবার উপজেলার কাইচাপুর গ্রামে অসহায় মহিলার ১১ কাঠা জমির ও বৃহস্পতিবার বাতিকুড়ার একজন অসহায় কৃষক আব্দুল জলিলের ৩২ শতাংশ এবং বুধবার সকালে উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের বিধবা শাহেদা খাতুনের ৪৫ শতাংশ ও চাঁনপুর গ্রামের অপর আরেক বিধবা সাহিদা খাতুনের ৩০ শতাংশ জমির ধান কেটে দিতে জেলা পরিষদ সদস্য ও গ্রামাউসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ২৯ জন ও হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপ ২০ জন সদস্য মাঠে নামেন। এ সময় জেলা পরিষদ সদস্য ও গ্রামাউসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল খালেকসহ হেলডস নেতা তাসফিক হক নাফিও, আতিকুর রহমান ও আব্দুল্লাহ আল সায়েম লিঠুসহ অনেকেই ধান কাটার কাজে অংশ নেন। আশপাশের লোকেরা তখন ক্ষেতের পাশে ভীড় জমান। বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে এক উৎসবমুখর পরিবেশে স্বেচ্ছায় ধানকাটা কর্মসূচী পালিত হয়।

এর আগে সোমবার  ফুলপুর উপজেলার রূপসী ইউনিয়নে ঘোমগাঁও গ্রামের মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত দরিদ্র কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকের ৮০ শতাংশ জমির ধান স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কেটে বাড়িতে এনে দেয়ার মধ্য দিয়ে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচির শুভসূচনা করেছে। একাধিক টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রচারমাধ্যম ব্যাপকভাবে দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে সাহায্য করার খবর প্রচার করে। ফুলপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এ বছর বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটার মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছে চরম শ্রমিক সংকট। দুই মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে মিলছে না একজন শ্রমিক। শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ধান কাটতে পারছে না অনেক কৃষক। তাদেরই একজন আবু বক্কর সিদ্দিক, বিধবা শাহিদা খাতুন। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তাদের পাকাধান। শ্রমিকের চড়ামূল্যে ও বাজারে ধানের দাম কম থাকায় অসুস্থ এ কৃষক মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। শুধু আবু বক্কর ও শাহিদা খাতুন নন, এমন হতাশা ও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফুলপুরের সব কৃষককে।
ক্ষেতে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে অথচ কাজের লোকের অভাবে বা বেশি মাহিনা চাওয়ায় ধান ঘরে তুলতে না পারায় কৃষকরা হতাশা অনুভব করছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপ ও গ্রামাউসের কিছু তরুণ তাদের সাহায্যের হাত বাড়ান। তারা গরিব ও অসহায় চাষিদের তালিকা তৈরি করেন এবং শ্রমিক সংকট মূহুর্তে এভাবেই অসহায় কৃষকদের সাহায্যে সহযোগিতা করে যাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। গ্রামাউসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, আল্লাহ রহমত করলে, পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন অসহায় কৃষকের ধান কেটে দেয়া হবে। সুশীল সমাজের সদস্যরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ছেলে মেয়েদেরকেই এভাবে যে কোন সংকট কাটিয়ে উঠার মত যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। তা নাহলে মানুষ যেভাবে গরিব থেকে ধনী হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে সর্বক্ষেত্রেই কাজের লোকের সংকট আরো প্রকট হতে পারে।

কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকপিছু মজুরি দিতে হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বর্তমানে  বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। ফলে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষকের মনে আনন্দ নেই।

ফুলপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ফুলপুর উপজেলায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে ৬ থেকে ৮ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তা গত বছরের তুলনায় বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ