পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ও ক্ষোভ এখনই শেষ হচ্ছে না। কমিটিতে বিতর্কিত, চাকরিজীবী, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, মাদক ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামী, ছাত্রী নির্যাতনকারীদের পদ দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার আল্টিমেটাম দিয়েছে পদবঞ্চিত ও কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়া নেতারা। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামীলীগের অন্য কোন সিনিয়র নেতার সমঝোতা মেনে নিবেন না জানিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)’তে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি থেকে কমিটিতে পদ পাওয়া ১৩০ জন বিতর্কিত নেতার তালিকা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে দেয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে পদবঞ্চিতদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিতর্কিতদের ব্যাপারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পদ শূণ্য ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সোমবারের হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জানান, এরইমধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। যারা দোষী তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করে একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। ছাত্রলীগে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে কেউ ছাড় পায়নি, পাবেও না। গত সোমবার ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। ঘোষিত কমিটিতে শতাধিক বিতর্কিত নেতা স্থান পেলেও বাদ পড়েন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ত্যাগী নেতারা। কমটিতে প্রথমবারের মত আসা কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারিরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও বাদ পড়েছেন আগের কমিটির সক্রিয় নেতাদের বড় অংশ। আগের কমিটিতে উপ-সম্পাদক পদে থাকা ত্যাগী নেতা ৩ বছর পরের ঘোষিত কমিটিতেও একই মানের পদ পাওয়ায় পদত্যাগ করে গণঅনশন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন বিদ্রোহী নেতারা। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন হাকিম চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। বিক্ষোভ মিছিলটি অপরাজেয় বাংলা, শ্যাডো হয়ে মধুর ক্যান্টিনে এসে শেষ হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রচার সম্পাদ সাইফ বাবু, সাবেক দফতর সম্পাদ দেলওয়ার হোসেন শাহজাদা, সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি কবি জসিম উদ্দিন হলের সেক্রেটারি শাহেদ খান, বঙ্গবন্ধু হলের আল আমিন রহমান ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, সাবেক উপ স্কুল বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আরাফাতসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাইফ বাবু বলেন, বিগত সময়গুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বাদ কিংবা সঠিক মূল্যায়ন না করে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত সোমবার পদবঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলে এতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জখম করা হয়। আমার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদেও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।
এরআগে সোমবার মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিত নেতাদের হামলার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার রাতে সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সরেজমিন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দফতর সেলে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
হামলাকারীদের দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার বলেন, ৩ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে আমরা তা মানি না। শোভন-রাব্বানীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হামলা হয়েছে। আবার তারা হামলাকারীদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যদি বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে সঠিক তথ্য যায় তাহলে তিনি বিতর্কিত এ কমিটি ভেঙ্গে দেবেন। ঢাবি শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত কমিটি ভেঙে না দিলে বিক্ষোভ, অনশনসহ আমরা গণপদত্যাগ করব।
জসীম উদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান বলেন, আমরা কোনো আওয়ামী লীগ নেতার আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে চাই না আর। ডাকসু নির্বাচনের আগেও তারা আমাদের বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তিনি যে নির্দেশনা দেবেন আমরা তা মেনে নেব অন্য কোনো নেতার নয়।
কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ কমিটিতে বিবাহিত যারা
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর ‘গ’ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। কিন্তু সদ্য ঘোষিত কমিটিতে একাধিক বিবাহিত নেতা নেত্রী স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বিবাহিত বলে অভিযোগ করেছেন পদবঞ্চিত নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া বিবাহিত অন্যদের মধ্যে রয়েছে, সহ-সভাপতি আবু সাঈদ। এছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত এক নেতা।সহ-সভাপতি পদ পাওয়া অন্য বিবাহিত নেতা হলেন সাদিক খান। কমিটি ঘোষণা করার পর বঞ্চিত নেত্রীদেও মারধরের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিবাহিত আরেক সহ-সভাপতি এস এম হাসান আতিক। এছাড়াও এ নেতা ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিবাহিত এক নেত্রী হলেন, মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের বিবাহিত আফরিন লাবণী। কমিটিতে উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পান তিনি।
সভাপতির বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অভিযোগ
কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে। সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ পান রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন। যিনি শোভনের আপন ছোট ভাই বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয় ও কোন আলোচনায় না থাকা সত্তে¡ও কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাওয়ায় সমালোচনা করছেন বিঞ্চিত নেতারা। এরআগে ছোটন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদকের দাযিত্ব পালন করেছেন।
পদ পেলেন ঢাবি ভিসি পুত্র
এদিকে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো আখতারুজ্জামানের পুত্র আশিক খানের ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ২ নম্বর সহ-সভাপতি পদ দেওয়া হয় তাকে। আশিক খান হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।
শোভন রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য পদবঞ্চিত একাধিক নেত্রীর
এদিকে কমিটিতে পদ না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন নারী নেত্রীরা। কমিটি ঘোষণার পরে জেরিন দিয়া নামে এক নেত্রী অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, শোভন ভাই আমাকে সবার সামনে মধুতে সেজেগুজে আসতে বলেছেন। গোলাম রাব্বানী ভাই সবার সামনে বলেছেন দু’দিনের মেয়ে কিভাবে পোস্ট পাইছো বুঝি না? কয়জনের বেডে গেছো এনএসআইয়ের রিপোর্ট করলে জানা যাবে। তখন আপনাদের কথার যোগ্য জবাব দিয়েছিলাম। আমাকে কমিটিতে না রেখে কি তার শোধ নিলেন? আরেক নেত্রী বলেন, নারীদের বিবাহিত হওয়া ও আন্ডারগ্রাউন্ড প্রটোকল দেয়া ছাত্রলীগের কমিটির বড় পোস্ট পাওয়ার মূলমন্ত্র।
ঢাবির হল কমিটির নেতারা পদ পাননি
বিগত কমিটিগুলোতে ঢাবির বিভিন্ন হল শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসলেও এবার রাখা হয়নি অধিকাংশ হলের নেতাদেরই। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান বলেন, যাদের পোস্ট দেয়া হয়েছে তারা আমাদের তুলনায় কোন বিবেচনায় অধিক যোগ্য। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করতে হলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি হলেও ১৯টি হল থেকে মাত্র ৩ থেকে ৪ জনকে পদ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।