বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম বিশ্বজনীন পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম একটি জীবনবিধান, যা সর্বকালের সর্বযুগের সব মানুষের উপযোগী একটি কল্যাণকর ধর্ম। ইসলাম মানুষকে এমন কোনো বিধান পালন করার আদেশ দেয় না, যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের ওপরে ধর্মের ব্যাপারে কোনো কাঠিন্য আরোপ করেননি।’ (সূরা আল হাজ্জ্ব : আয়াত ৭৮)। তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা কারো ওপরে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সূরা আল-বাকারা : আয়াত ২৮৬)। মহান আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মাখলুকাতের মাঝে মানবজাতির জন্য ঐশী জীবনবিধান অবতীর্ণ করে তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।
তাঁর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এই প্রতিটি বিধানের মাঝেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ ও মঙ্গল। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যেসব বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম একটি বিধান হলো রমজান মাসের রোজা। এই রোজার মাঝেও রয়েছে উভয় জগতের বহু উপকারিতা।
রোজার বিধান : প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানের রোজা রাখা ফরজ হলেও সর্বাবস্থায় সবার জন্য রোজা রাখতে বাধ্যতামূলক বিধান নয়। যারা রোজা রাখতে অপারগ তাদের জন্য বিকল্প সুযোগও রয়েছে ইসলামে। এ বিষয়টি মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কুরআনে স্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন, ‘রমযান মাস এটি, যাতে কোরআন নাযিল হয়েছিল, ... মানবগোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে, আর পথনির্দেশের স্পষ্ট প্রমাণরূপে, আর ফুরকান।
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ মাসটির দেখা পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে। আর যে অসুস্থ বা সফরে আছে যে সেই সংখ্যক অন্য দিনগুলোতে (রোজা পালন করবে)। আল্লাহ তোমাদের জন্য সুবিধা চান, আর তিনি তোমাদের জন্য কষ্টকর অবস্থা চান না, আর তোমরা যেন এই সংখ্যা সম্পূর্ণ করো, আর যাতে আল্লাহর মহিমা কীর্তন করো তোমাদের যে পথনির্দেশ তিনি দিয়েছেন সেজন্য, আর তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। (সূরা আল বাকারা : আয়াত ১৮৫)।
পৃথিবীর দীর্ঘতম দিনের দেশেগুলোতে রোযার বিধান :
পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। সে কারণেই দেশভেদে রোজা সময়ও দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত হয়। ইউরোপের উত্তরের দেশগুলোতে যেমন- সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়েতে এই ব্যবধান আরো বেশি সেখানে গ্রীষ্মকালীন রোজা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে। এসব এলাকার রোজার ব্যাপারে উলামায়ের মতামত হলো, তারা নিজ নিজ এলাকার সময় অনুযায়ী সাহরী ও ইফতার করবে।
ইফতারের সময়ের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কারিমে নির্দেশনা এসেছে, ‘...আর আহার করো ও পান করো যতক্ষণ না তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভোরবেলাতে সাদা কিরণ কালো ছায়া থেকে, তারপর রোজা সম্পূর্ণ করো রাত্রি সমাগম পর্যন্ত। আর তাদের স্পর্শ করো না যখন তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ করো। এ হচ্ছে আল্লাহর সীমা, কাজেই সে সবের নিকটে যেয়ো না। এইভাবে আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে তারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে।’ (সূরা আল বাকারা : আয়াত ১৮৭)।
ইমাম বুখারী (রহ.) তার সহি বুখারীতে ইফতার সময়ের ব্যাপারে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছদ তৈরি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য কখন ইফতার করা জায়েজ হবে? হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূর্য অস্ত যাবার পরে ইফতার করেছেন।’
এই পরিচ্ছেদের অধীনে তিনি অন্য আরেকটি হাদিসও বর্ণনা করেছেন, ‘হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যখন পূর্ব দিগন্ত থেকে রাতের অন্ধকার ছেয়ে আসবে, পশ্চিম দিগন্তে দিনের আলো হারিয়ে যাবে এবং সূর্য এবং সূর্য অস্ত যাবে তখন রোজাদার ইফতার করবে।’ (সহি বুখারী : ১৮৫৩)।
উল্লিখিত কুরআন-সুন্নাহর নুসূসাতের আলোকে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয় যে, ইফতারের সময় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরেই হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ইফতার করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং যেসব এলাকায় দিন অধিক লম্বা ও রাত ছোট সেসব এলাকার বাসিন্দাদেরকেও গোটা দিন রোজা পালন করতে। তবে যদি কোনো ব্যক্তির রোজা পালন করতে অধিক কষ্ট হয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী রোজা রাখলে তার জীবনহানি বা মারাত্মক রোগাক্রন্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।
পরবর্তীকালে যখন সম্ভব সে উক্ত রোজার কাজা করে দেবে। তবে তাদের জন্য সউদীর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ইফতার করার সুযোগ নেই। কেননা তাদের মধ্যে যারা অপারগ শরীয়ত তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। আর যারা অপারগ নয় তাদের রোজা পালনে অন্য এলাকায় লোকের তুলনায় কষ্ট বেশি হবে ঠিক কিন্তু তাদের সওয়াব ইনশাআল্লাহ অধিক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।