Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় গ্রিডে ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াট

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্র্রীডে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা হবে। আর এ লক্ষ্যে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে দ্রæত গতিতে।
প্রাথমিকভাবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। বিশেষ করে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ৯ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ হাব তৈরি করার পরিকল্পনায় এগিয়ে চলছে পায়রা বিদ্যুৎ হাব। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুনর্বাসন প্রকল্প উদ্বোধনকালে এ এলাকায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনসম্পন্ন একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদান কেন্দ্রসহ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা দেন।
সূত্র মতে, পাওয়ার সিস্টেম ২০১০ এর পরিকল্পনায় রয়েছে ২০৩০ এর মধ্যে দেশের উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৫০ ভাগ কয়লাভিত্তিক উৎপাদনের। এরই অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তিসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব (আল্টা সুপার ক্রিটিকাল টেকনোলজির মাধ্যমে) দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে।
২০১৫ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশ এবং চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ এবং চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড দেশের প্রথম আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং চায়না সিএমসির ২ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ প্র্রকল্পটিতে বাংলাদেশ এবং চীনের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ ইতোমধ্যে ৭৭ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রীডে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হবে।
তাছাড়া উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক অপারেশনে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জর্জিস তালুকদার। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় গ্রীডে ৬৬০ মেগাওয়াট (১ম ইউনিট) এবং আগামী বছর জুনের মধ্যে অবশিষ্ট ৬৬০ মেগাওয়াট (২য় ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
তিনি জানান, এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিতব্য পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানি করা হবে। দৈনিক ১৩ হাজার টন কয়লা ব্যবহৃত হবে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা জেটির কাজ ইতোমধ্যে নব্বই ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। জাহাজ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৮০০ টন কয়লা আনলোড করার ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি গ্রাবশীপ আনলোডার এ কয়লা জেটিতে ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব আনলোডারের মাধ্যমে কয়লাবাহী জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করে সরাসরি কভার কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে কোল ইয়ার্ডে চলে যাবে। ফলে বাতাসের কোন সংস্পর্শ আসবে না এবং এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিজস্ব সার্ভিস জেটি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরো একটি কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট (২য় ফেইজ) পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মিত হবে। এছাড়াও জার্মান সিমেন্সের সাথে ৩৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এলএনজি বেইসড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ জন্য ১০০ একর জমি নির্বাচন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এর কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়াও সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে ১০০ মেগাওয়াট ও বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে।
পায়রা বন্দরকে ঘিরে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে একাধিক মেগা প্রজেক্ট। সেসবসহ দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণকল্পে ইতোমধ্যে রুরাল পাওয়ার কোম্পানী পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ৯১৫ একর জমি অধিগ্রহণ পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ চালাচ্ছে। এখানে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের জন্য ১ হাজার একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। এছাড়াও সেনাকল্যাণ সংস্থার ১ হাজার একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তারাও নির্মাণ করবে এখানে ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা জেটির ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২২০ মিটার চিমনীর ৭৫ ভাগ কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপদিত বিদ্যুৎ প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পায়রা তাপবিদুৎ কেন্দ্রসহ আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে যাচ্ছে তা এ অঞ্চলসহ দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে এখানকার প্রকৌশলীরা মনে করেন। পায়রা বিদ্যুৎ হাব থেকে আগামী দিনে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা প্রয়োজন একাধিক বড় ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অংশের সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণহ এর রক্ষণাবেক্ষণের দীর্ঘমেয়াদী সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের সকল অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সমানতালে এগিয়ে নিতে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আর এরই অংশ হিসেবে পায়রায় বিদ্যুৎ হাব তৈরি হচ্ছে।
সংশোধনী
গতকাল প্রথম পাতায় ‘পায়রার ডানায় সম্ভাবনা’ ও ২য় পাতায় ‘পায়রা বন্দর রুপ পাবে ২০২১ সালে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে তথ্যগত ভুল রয়েছে। ‘সাড়ে ছয় মিটার দীর্ঘ জেটি’ স্থলে ‘সাড়ে ছয়শ’ মিটার দীর্ঘ জেটি’ পড়তে হবে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।



 

Show all comments
  • Ahmed Moha ১৩ মে, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    Boroy hassokor hazar hazar megawat uthponno kinto 10 bochore dine doibar thaktona biddoth akhon 10 bar thakena
    Total Reply(0) Reply
  • Amin Uddin ১৩ মে, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Giasur Rahaman ১৩ মে, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    আমরা কেন বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছি না ? অন্য দেশের উপর নির্ভর হয়ে নিজ দেশের অর্থনীতি কে দুর্বল না করে, স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৩ মে, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। এতে করে সকলের স্বাচ্ছন্দ বাড়বে বলে আশা রাখছি।
    Total Reply(0) Reply
  • নাইমুল ১৩ মে, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    ভালো সংবাদ। সরকারকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহফুজ আহমেদ ১৩ মে, ২০১৯, ১০:০০ এএম says : 0
    শুনে খুব ভালো লাগলো। এভাবে দেশ সামনে দিকে এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ১৩ মে, ২০১৯, ১০:০১ এএম says : 0
    অনেক খারাপ খবরের মাঝে এমন একটি ভালো খবর সত্যি আমাদেরকে আশান্বিত করে।
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ১৩ মে, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
    শুধু বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ালে হবে না। এর সুষ্ঠ বন্টনও করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পাবেল ১৩ মে, ২০১৯, ১০:০৩ এএম says : 0
    বিদ্যুৎ অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • খোকন ২২ অক্টোবর, ২০১৯, ৭:১৬ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ বাংলাদেশ সরকারকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ