বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খুলনাঞ্চলে জুড়ে সর্বত্র এখন বিরাজ করছে ‘ছেলে ধরা’ রোহিঙ্গা আতঙ্ক। রোহিঙ্গারা দিনে অথবা রাতে ছদ্মবেশে অপহরণ কিংবা অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের সর্বত্র। এমনকি রোহিঙ্গা সন্দেহে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে সাতজনকে ছেলে ধরার (অপহরণ) কথিত অপরাধে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনগণ। যদিও বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রীতিমত মাইকিং করে গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। পুলিশের দাবি, এরা রোহিঙ্গা নয়, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধারণা করা যায় এরা মানসিক ভারসাম্যহীন।
এদিকে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা সন্দেহে ৬০ বছরের অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার মাগুর ঘানার কাঠালীয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাহস ঘোষগাতী গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক মেহেদী মোড়ল ও কাঠালীয়া বাজারের মুদি দোকানী মধুসুদন মন্ডলকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, রাতে রোহিঙ্গা সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধকে স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে পাইকগাছার কপিলমনি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে সেখানে তিনি মারা যান।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ওই বৃদ্ধা রোহিঙ্গা কি না জানি না, তবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
অপরদিকে তালা, সাতক্ষীরা, দেবহাটা, শ্যামনগর ও কলারোয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সন্ধ্যা নামতেই খবর ছড়িয়ে পড়ছে, ওই পাড়ায় ছেলে ধরা রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এক কান দু’কান করে এ খবর গ্রামময় ছড়িয়ে পড়তেই নীরিহ গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসাচ্ছে, রোহিঙ্গা ধরার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা আতঙ্ক এতোদূর পৌঁছেছে যে, অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানদের শিক্ষকের কাছে অথবা একা স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। পারলে সঙ্গে নিজেরা যাচ্ছেন, অথবা দলবদ্ধ হয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে বেশ কিছু সংখ্যক নারী ও পুরুষ রোহিঙ্গা সদস্য সেখানকার আশ্রয় শিবির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানব পাচারকারী দালালদের মাধ্যমে তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সদস্যকে সাতক্ষীরা সীমান্তে আনার পর দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পরে এসব রোহিঙ্গা খাদ্যের সন্ধানে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়েছে। এদেরই কারণে জেলাব্যাপী ছেলে ধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা নাম শুনলেই গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে গুজব বলে জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে থানায় থানায়। ছেলে-মেয়ে ধরা গুজব বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ফেসবুকে। থানা পুলিশের ওসিরা নেমে পড়েছেন সচেতনতামূলক প্রচারণায়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে ছেলে ধরা একটি গুজব ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এরপর তা এখন মানুষের মুখে মুখে। এটি গুজব। এমন ঘটনার সত্যতা নেই। না বুঝেই এক ধরনের মানুষ এই গুজব ছড়িয়েছে।
পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, তালা থানায়, সাতক্ষীরা সদরের বাশদাহ এলাকায় ও কলারোয়া থানায় তিনটি ঘটনা ঘটেছে। যেটিতে গুজবের মাত্রা আরও বেড়েছে। তালার নাংলা এলাকায় ছেলে ধরা আতঙ্কে এক বৃদ্ধ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়। পরে দেখা যায় বৃদ্ধ মানুষটি মস্তিষ্ক বিকৃত। এছাড়া কলারোয়া দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তারা ভিক্ষা করে। সাতক্ষীরা সদরে বাঁশদহ এলাকায় একজনকে একইভাবে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়, তিনিও মস্তিষ্ক বিকৃত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।