Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অবিশ্বাস্য লিভারপুলের ইতিহাস

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অ্যানফিল্ডে চলছে লিভারপুল-বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ফিরতি ম্যাচ। চিন্তিত মনে গ্যালারিতে বসে আছেন লিভারপুলের আক্রমণভাগের দুই তারকা রবার্তো ফিরমিনো ও মোহাম্মাদ সালাহ। সালাহর পরিহিত হুডির নিচে টি-শার্টে বুকের উপর লেখা ‘কখনও হাল ছেড় না’।

ঠিক এই মন্ত্রই শিষ্যদের কানে সফলভাবে জপে দিয়েছিলেন কোচ ইয়ুর্গুন ক্লপ। প্রথম লেগে তিন গোলে পিছিয়ে থাকার পর দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে তাকে এমনটিই করতে হত। কোচের প্রতিটা বাণী মাঠে অক্ষরে অক্ষরে ফলিয়েছেন শিষ্যরা। তাদের প্রেসিং ও দ্রæতগতির ফুটবলের কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়েছে বার্সা। প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস গড়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে গেছে ক্লপের লিভারপুলও।

পরশু সফরকারীদের অবিশ্বাস্যভাবে ৪-০ গোলে হারায় ‘অল রেড’ খ্যাত দলটি। ফাইনালে যেতে কোন গোল না খেয়ে ঠিক চার গোলই করতে হত লিভারপুলকে। ফিরমিনো-সালাহদের অভাব বুঝতে দেননি ডিভক অরিগি আর জর্জিও ভিনালডাম। দুজনেই করেন জোড়া গোল। দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছে যায় লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যুগে সেমিফাইনালে প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও ফাইনালে যাওয়ার অনন্য কীর্তি গড়ল তারা।

গত বুধবার ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগের ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছিল বার্সা। এই হারে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল স্প্যানিশ জায়ান্টদের। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইংলিশ কোনো ক্লাবের কাছে বার্সার এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়।

লিওনেল মেসিকে এদিন মনে হয়েছে ক্লান্ত পথিক। আলবা-ভিদাল-বুসকেটস-লংলে-পিকেরা সাজিয়ে বসেন ভুল পাসের প্রদর্শনী। ফিলিপ কুতিনহো ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। গোলের সুযোগ হারিয়েছেন মেসি-সুয়ারেজরা। যেন পরিকল্পনাহীন এক ম্যাচ খেলেছে আর্নেস্তো ভালভার্দের শিষ্যরা। চারটি গোলের পেছনেই রয়েছে বার্সা রক্ষণের অমার্জনীয় ভুলের দায়।

অন্যদিকে প্রথম লেগের মত প্রতিপক্ষকে নিচ থেকে গুছিয়ে আক্রমণে উঠতে না দেয়ার পরিকল্পনায় এ যাত্রায় সফল ক্লপ। ফাবিনহো এক মুহূর্তও মেসিকে চোখের আড়াল হতে দেননি। অটুট রক্ষণের বিপরীতে ভয়ঙ্কর সব আক্রমণে ম্যাচের শুরু থেকেই বার্সার রক্ষণে হামলে পড়ে স্বাগতিকরা। ফল মেলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই। জর্ডি আলবা বল তুলে দেন সাদিও মানের পায়ে। হেন্ডারসনের পা ঘুরে বল জালে পাঠিয়ে দেন ওরিগি।

প্রথমার্ধে আর কোনো গোল খেতে হয়নি বার্সাকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরো বেশি করে বার্সকে চেপে ধরে লিভারপুল। ফল মেলে দ্রæতই। দুই মিনিটের ঝড়ে জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করে দেন জর্জিও ভিনালডাম। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রবার্টসনের বদলি হিসেবে তাকে মাঠে নামান ক্লপ।

৫৪তম মিনিটেও গোলেও ছিল আলবার দায়। ডি বক্সের মধ্য থেকে ডান পায়ের জোরালো গড়ানো শটে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন ভিনালডাম। দুই মিনিটের মাথায় বাম প্রান্ত থেকে নেওয়া জর্দান সাকিরির ক্রসে অনেকটা লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান ডাচ মিডফিল্ডার। লংলে দাঁড়িয়ে থেকেও তাকে আটকাতে পারেননি।

৭৯তম মিনিটে অরিগির গোলে দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতে স্বাগতিক সমর্থকরা। বার্সার অপ্রস্তুত রক্ষণের ব্যাপারটা এসময় আলেক্সান্ডার অরনল্ডের লক্ষ্য এড়ায়নি। কর্নার থেকে দ্রæত ডি বক্সে নিখুঁত ক্রস দেন অরিগিকে। প্লেসিং শটে মহামূল্যবান গোলটি করেন ২৪ বছর বয়সী বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড।

ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের একের পর এক ভুলের বিষয়টিকেই বড় করে দেখেছেন বার্সেলোনা কোচ, ‘গোল সবসময় কারো দোষে হয়, কখনও ভুলের কারণে। যদি আপনি গোলগুলোর দিকে তাকান দেখবেন প্রতিটাতে কোন না কোন ভুল ছিল। তারা চার গোল করে আমাদের বিষ্মিত করেছে- সম্ভবত আমার খেলোয়াড়রা তা খেয়াল করিনি। লিভারপুল ছিল অনেক স্মার্ট এবং তারা গোল করেছে।’

গত মৌসুমে শেষ আটের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে জিতেও দ্বিতীয় লেগে রোমার কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল কাতালান দলটি। সেই স্মৃতি মনে করে দলীয় স্ট্রাইকার সুয়ারেজ হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অনেক বেশী আত্ম-সমালোচনা করতে হবে। টানা দ্বিতীয়বারের মত একই ঘটনা ঘটলো। টানা দুই বছর একই ভুল আমরা করতে পারি না। কি ভুল হচ্ছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দিনের শেষে একটি কথাই বলবো, আমরাও মানুষ, আমাদের মনেও অনেক কষ্ট হচ্ছে, হতাশা হচ্ছে। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবেনা।’
ওদিকে বিজয়ী শিবিরে বসেছে উল্লাসের মাতম। এমন কীর্তি গড়ার পর বিজয়ী কোচ ক্লপ বলেন, ‘জেতা কঠিন; কিন্তু কোনো গোল না খেয়ে জেতা! আমি জানি না ওরা এটা কিভাবে করল।’ ‘আমাদের সবার কাছে এর অর্থ অনেক। পৃথিবীতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, কিন্তু সবাই একসঙ্গে মিলে এমন আবেগময় আবহ তৈরি করা বিশেষ কিছু। সব কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের।’ জার্মান কোচ বলেন, ‘এটা দেখিয়েছে, ফুটবলে কি সম্ভব। এটা খুবই সুন্দর।’

আগামী ১ জুন মাদ্রিদের ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে হবে ফাইনাল। শিরোপা লড়াইয়ে গতবারের রানার্সআপদের প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম হটস্পার ও আয়াক্সের মধ্যকার আরেক সেমি-ফাইনালের বিজয়ী দল।

 



 

Show all comments
  • ওমর ফারুক ৯ মে, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
    সর্বকালেরসেরা দল কোনটা?
    Total Reply(0) Reply
  • ইসমাইল ৯ মে, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    মেসি ভালো খেলোয়ার আর লিভারপুল ভালো টিম
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ মে, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    সর্বকালের সেরা দলকে হারিয়ে যখন ফাইনালে উঠেছি। আয়েক্স বা টটেনহাম এদেকেও হারাতে পারবো। টটেনহামকে তো প্রিমিয়ার লিগে দুই বার হারানো হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ মে, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
    বার্সার হারের সবচেয়ে বড় কারন হলো খেলাটা বার্সার মাঠে হয়নি!! যেখানে মেসি অপ্রতিরোধ্য!!!
    Total Reply(0) Reply
  • N. Hasan Razu ৯ মে, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    বার্সার হারের একটাই কারন সেটা হল আত্মতুষ্টি। গত দুই চ্যাম্পিয়নস লীগে বার্সা একই ভাবে হেরেছে। এবারও তা ই হল। লিভারপুলের খেলা দেখেই বুঝা যাচ্ছিল ওদের হোম ওয়ার্ক করা আছে দুই তিনটা ট্র্যাকটিস নিয়ে মাঠে নেমেছে। আর বার্সার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দিচ্ছিল ওরা এসেছে গোল আটকাতে তা ও কোন হোমওয়ার্ক ছাড়া। শেষ গোল ওদের পিকনিকি মেজাজ আর গাছাড়া ভাবের বহিঃপ্রকাশ।
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ৯ মে, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    সবচেয়ে বড় কারণ মেসি ঘরের মাঠে ভালো খেলে প্রতিপক্ষের মাঠে নিম্নমানের প্লেয়ার ।আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে মেসি এখনো আর্জেন্টিনার হয়ে কোন শিরোপা জিততে পারেনি এবং নক আউট পর্বে গোল পায়নি তার বড় কারণ এসব টুর্নামেন্ট ন্যু ক্যাম্প বা আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত হয় না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ