বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহপাকের আইন ও বিধান মোতাবেক জাহান্নামের যোগ্য কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করার পর সেখান থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে কেবল গোনাহগার মুসলমানের বেলায়। পক্ষান্তরে জান্নাতের যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশের পর সেখান থেকে বহিষ্কার করা হবে না এবং সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ও আল হাদিসে সহিহায় ঘোষণা করা হয়েছে- ক. সৌভাগ্যবানরা চিরদিন জান্নাতে অবস্থান করবে, যতদিন আসমান ও জমিন ঠিক থাকবে; তবে তোমার পরওয়ারদিগার যদি অন্য কিছু চান, এটি হবে নিরবচ্ছিন্ন দান। (সূরা হুদ : আয়াত ১০৮)।
ক. হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে যবের ওজনের পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে। (জামে তিরমিযী : খন্ড ২, পৃ. ৫৪০)।
প্রকৃত প্রস্তাবে জাহান্নাম ও তার শাস্তি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এজন্যই কাফের চিরদিন তাতে অবস্থান করবে। কিন্তু কোনো মুসলমান ঘটনাক্রমে তাতে প্রবেশ করলেও এক সময় তাকে বের করে আনা হবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআন ও হাদিসে রাসূল সা.-এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেমন : ক. তোমরা ওই জাহান্নামের আগুনকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর (নির্মিত দেবদেবী)। তা কাফেরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৪)।
খ. হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. একদা বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো বস্তুকে শরিক না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। (সহি মুসলিম : খন্ড ১, পৃ. ৬৬)। বস্তুত জান্নাতের মতো জাহান্নামও একটি বাস্তব স্থান ও আজাবের জায়গা। যে ব্যক্তি জাহান্নামের বাস্তবতাকে স্বীকার করে না বরং তাকে একটি কাল্পনিক বা অবাস্তব বিষয় মনে করে, সে প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামকে অস্বীকার করে। সুতরাং এমন ব্যক্তি যে ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ হয়ে গেছে, তা সহজেই বলা যায়। মোট কথা জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। কেননা, জান্নাত ও জাহান্নামের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অতি সুস্পষ্ট। তা গোপন করার উপায় নেই। তার বর্ণনা এত অধিক, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। জান্নাত ও জাহান্নামকে একদল দার্শনিক অস্বীকার করে। তারা প্রমাণ উপস্থান করতে গিয়ে বলে, জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনায় বর্ণিত শরীয়তের প্রমাণসমূহ ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। তাদের মতে, জান্নাত-জাহান্নাম বলে মানসিক শান্তি ও মানসিক অশান্তিকে বোঝানো হয়েছে। সুতরাং আত্মার সান্ত¦নাই জান্নাত আর আত্মার বেদনাই জাহান্নাম। বাস্তবে জান্নাত ও জাহান্নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে এ ধরনের কাল্পনিক ব্যাখ্যা ও মনগড়া অর্থ গ্রহণই তাদের কাফের আখ্যায়িত করার জন্য যথেষ্ট। কারণ, এরূপ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে কোরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনাকে অস্বীকার করা হয়েছে। (নিরবাস : পৃ. ২১৯)।
এই শ্রেণীর দার্শনিকদের মতো ইহুদি সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিও ভ্রান্তিপূর্ণ ও অবাস্তব। ইহুদিরা বলে, আমরা কিছু দিনের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করব। অতঃপর আমাদের বের করে আনা হবে। কোরআন মাজীদের তাদের এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে যে, ইহুদি, কাফের ও মুশরিকগণ অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, হাতেগোনা কয়েক দিন ছাড়া নরকাগ্নি আমাদের আদৌ স্পর্শ করতে পারবে না। (হে নবী) আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর নিকট থেকে কোনো চুক্তিপত্র গ্রহণ করেছ? (জেনে রেখো) আল্লাহপাক কখনো তার চুক্তি ভঙ্গ করেন না। নাকি তোমরা আল্লাহর ওপর এমন কথা আরোপ করছো, যা তোমরা জানো না। হ্যাঁ, (বাস্তব কথা হলো) যে ব্যক্তি অপকর্ম অর্জন করবে এবং তার অপরাধ তাকে বেষ্টন করে ফেলবে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮০-৮১)।
উপসংহারে এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, জান্নাত যেমন চিরস্থায়ী, জাহান্নামও তেমনি চিরস্থায়ী। তা নশ্বর বা ধ্বংসশীল মনে করা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা ও সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতা বৈ কিছুই নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।