বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কাজের ধীরগতি ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ প্রকল্পের ৩শ’ ৫২ কোটি টাকার কাজ। সংশয় দেখা দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সমাপ্ত হওয়া নিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাদহ, দর্শনা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার শত শত যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানী ঢাকায় যাওয়া আসা করে। এই সড়কটির কাজ শেষ হলে কম সময়ে ঢাকায় পৌছে যাবে যানবাহন। তাছাড়াও দ্রুত সময়ে কৃষি পণ্য ঢাকায় পৌছে দিতে পারলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান পাল্টে যেতে পারে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজবাড়ী কার্যালয়ের তথ্যমতে, আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ প্রকল্প গোপালগঞ্জ জোনের আওতায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি চারটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। প্যাকেজ চারটি হলো:
১: রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় থেকে শহরের জেলা পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৮ কি.মি. এলাকা যার চুক্তিমুল্য ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এই কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর যা চলতি মাসের ৩ তারিখে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিলো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের তত্ত¡াবধানে কাজটির ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে।
২: রাজবাড়ী শহরের জেলা পরিষদের সামনে থেকে আহম্মেদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত সোয়া ৪ কি.মি. এলাকা যার চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এই কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর যা চলতি বছরের ২৬ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্টা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও অহিদ কন্সট্রাকশনের যৌথ তত্ত¡াবধানে কাজটি ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে।
৩: আহম্মেদ আলী মৃধা কলেজ থেকে পাংশা উপজেলার শিয়ালডাঙ্গী এলাকা পর্যন্ত ৩৩ কি.মি.এলাকা। যার চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ২২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এই কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ২২ মে যা চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম ও শামীম এন্টার প্রাইজ লিমিটেডের যৌথ তত্ত¡বধানে কাজটি শেষ হয়েছে মাত্র ২০ ভাগ।
৪: রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারা থেকে জৌকুড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৬ কি.মি. এলাকা। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ২৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এই কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারী যা সমাপ্ত করার কথা রয়েছে চলতি বছরের ২৮ জুলাই তারিখের মধ্যে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্টা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও অহিদ কন্সট্রাকশনের যৌথ তত্ত¡াবধানে কাজটি ৩০ ভাগ শেষ হয়েছে।
এদিকে প্রায় দুই বছর যাবৎ খোড়াখুড়িতে দুর্ভোগ বেড়েছে রাজবাড়ীবাসীর। ধুলোবালিতে অন্ধকার হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অনেকে। এ সময় সমস্যা থেকে বাচতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাগমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাজেদা বেগম জানান, তার বিদ্যালয়টি সড়ক ঘেষে অবস্থান যে কারনে রাস্তার ধুলোবালিতে বিদ্যালয়ের চেয়ার টেবিল বেঞ্চ ময়লা হয়ে থাকে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা দুপুরে মাঠে বসে টিফিন খেলে ধুলোবালি খাবারের উপর এসে পরে। যে কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এতে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি কমছে।
রাজবাড়ী শহরের বড়পুল এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমারা থাকতে না পেরে অবশেষে আন্দোলনে নেমেছি। জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছি। ১৫ দিনের মধ্যে কাজের অগ্রগতি না হলে সড়ক অবরোধ করে এই অঞ্চলের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহা সড়কে চলাচলরত এক বাস চালক বলেন, এই সড়কের ভোগান্তি চলছে দুই বছর যাবৎ। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। প্রতি ট্রিপ মেরেই গাড়ি চেক করাতে হচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্টা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও অহিদ কন্সট্রাকশনের রাজবাড়ীর প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসেন জানান, প্রথমদিকে আমাদের কাজের গতি একটু কম থাকলেও এখন কাজের গতি অনেকটা বেড়েছে। তাছাড়া সড়কে ভোগান্তি কমাতে নিয়মিত পানি দেওয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় প্যাকেজ হচ্ছে, আহম্মেদ আলী মৃধা কলেজ থেকে পাংশা উপজেলার শিয়ালডাঙ্গী এলাকা পর্যন্ত ৩৩ কি.মি.এলাকা। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ২২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এই কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ২২ মে যা চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম ও শামীম এন্টার প্রাইজ লিমিটের যৌথ তত্ত¡াবধানে কাজটি শেষ হয়েছে মাত্র ২০ ভাগ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম ও শামীম এন্টার প্রাইজ লিমিটের সুপার ভাইজার কাজী মুসতাক আহম্মেদ তিনি জানেনই না কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে। তিনি দাবী করেন আরো আড়াই বছর রয়েছে কাজের সময়সীমা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্মাম হোসেন জানান, রাজবাড়ীতে বড়টি প্যাকেজের কাজ নিয়মিত দেখভাল করা হচ্ছে। কাজের গতি কম তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার বলা হয়েছে কাজের মান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার জন্য। জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে পর্যাপ্ত পানি দিতে বলা হয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, চারটি কাজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্যাকেজ ৩ এর। ৩৩ কি.মি.এই সড়কের মাত্র ১৩ কিলোটিার অংশ কেটে রেখে দিয়েছে যে কারনে চলাচলরত রাজবাড়ীর অর্ধেক বাসিন্দা রয়েছে দুর্ভোগে। কোনক্রমেই তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে না। অচিরেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসে গতি বাড়ানোর ব্যপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।