বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একদিকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নারীরা যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে এই সহিংসতা প্রতিরোধে আইনী কাঠামোতে নেই সুনির্দিষ্ট দিক নিদের্শনা। ফলে কর্মক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নারীর অংশগ্রহণ এবং উপস্থিতি। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। একশনএইড বাংলাদেশের নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে ‘নারীবান্ধব নিরাপদ কর্মস্থল’ নামে একটি আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে একশনএইড বাংলাদেশ।
‘কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা: প্রতিদিন প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে ঘটছে’ নামের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নে অবদান রাখলেও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা এবং মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা নারীর মর্যাদা এবং শারীরিক ও মানসিক কল্যাণে বাধা দেয়।
‘সজাগ নেটওয়ার্ক’ কতৃক পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২২ শতাংশ নারী পোশাক কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে অথবা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর বিশ্বাসের অভাবের কারণে তাদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ-ই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটির কাছে প্রতিকার চায় না।
গবেষণা বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সুপ্রিম কোর্ট ২০০৯ সালে একটি নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনা প্রণয়নের নয় বছর পরেও প্রতিষ্ঠানগুলো যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা অনুযায়ী কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অনুষ্ঠানে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বাংলাদেশের নারী ও কন্যা শিশুরা কাঠামোগত বৈষম্য এবং সামাজিক রীতির কারণে বিভিন্ন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্মুখীন হন। এটির সমাধান চায় বর্তমান সরকার। প্রয়োজনে আমরা বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেব।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে সরকার আইন সংশোধন ও নতুন আইন প্রনয়ন করবে। তবে শুধু আইন দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব না। এজন্য আমাদের দৃষ্ঠিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার পেনি মর্টন বলেন, সহিসংতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। আমারা চাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংযুক্তি বাড়–ক। এজন্য নারীর প্রতি সহিংসতা একটি প্রতিবন্ধকতা। এটার সমাধান করতে হবে। কারণ সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা না হলে সমাজের উন্নতি হবে না।
এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, একদিকে আইনে যৌন হয়রানিকে সজ্ঞায়িত করা হয়নি। অন্যদিকে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগেও রয়েছে গুরুতর অভাব। মামলার বিলম্বিত নিষ্পত্তি এবং তদন্ত কর্মকর্তা এবং পাবলিক প্রসিকিউটরদের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্থরা প্রায়ই বিচার পেতে ব্যর্থ হন। এর প্রভাব পড়ছে নারীর মনে, কাজে, সমাজে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেজ এডমিনিস্ট্রেশন-এর অধ্যাপক ও বিজিএমইএ-এর পরিচালক এ মোমেন বলেন, কোন ক্ষেত্রেই আমরা নারীর অবমাননা চাই না। পিতৃতান্ত্রিক চিন্তা বদলাতে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে অপরাধমূলক আইন যেখানে যৌন অপরাধগুলি সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং শাস্তি দেওয়া হয় তা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নয়। মহিলা ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০০০ এর ধারা ৯-এ ধর্ষণের সংজ্ঞা দন্ডবিধির ধারা ৩৭৫-এ বর্ণিত ধর্ষণের সংজ্ঞাকেই বহাল রাখে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অব্যাহতি দেওয়াসহ। এছাড়াও যৌন সস্পর্কের মত শব্দের সংজ্ঞা না দিয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি সংকীর্ণ বিবরণ রয়েছে এ সংজ্ঞায়।
গবেষণায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। উল্লেখযোগ্য সুপরিশ হলো: বিভিন্ন ধরণের যৌন সহিংসতাকে সংজ্ঞায়িত এবং শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের বিভিন্ন ফাঁক ফোকড় চিহ্নিত করে আইন সংশোধনের জন্য এডভোকেসি বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করা। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশেষ আইন প্রণয়নে পদক্ষেপ নেওয়া। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশিকা কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নে এবং প্রয়োগ করার পক্ষে সমর্থন জোরদার করা এবং আনুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের শর্ত নিশ্চিত করার জন্য নীতি প্রণয়ন করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।