পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগরের সুদীর্ঘ উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের দুই বেষ্টনী অপরিহার্য। এক. সমুদ্র উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। দুই. ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলসহ সবুজ বেষ্টনী। বিস্তীর্ণ উপক‚লকে রক্ষাকারী উভয় বেষ্টনীর অবস্থা বর্তমানে নড়বড়ে। এরমধ্যে বেড়িবাঁধ নাজুক দশায় গিয়ে ঠেকেছে। অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা বিধ্বস্ত। আবার অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধের চিহ্নই মুছে গেছে। এ অবস্থায় অরক্ষিত বঙ্গোপসাগর উপক‚লে বেড়িবাঁধের বেষ্টনী।
ভাঙা-জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ভেতরে জনপদ ভাসিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিনের সামুদ্রিক জোয়ারের পানি। সেই সাথে লোনাপানির আগ্রাসনে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ক্ষেত-খামার বলতে গেলে অনাবাদী এবং উৎপাদনহীন হয়ে পড়েছে। সমুদ্র গর্ভে বিলীন হচ্ছে একে একে আবাদী জমি। সর্বস্বান্ত হয়ে দিশেহারা হাজারো কৃষক।
অনুুসন্ধানে জানা যায়, দেশের চর, দ্বীপাঞ্চল ও উপক‚লের ৩০ শতাংশ বেড়িবাঁধের চিহ্ন প্রায় মুছে গেছে। উপক‚লের প্রায় ৫০ ভাগ জায়গায় বেড়িবাঁধ কমবেশি ভাঙাচোরা বিধ্বস্ত নড়বড়ে। দীর্ঘদিনের দাবি সত্তে¡ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেই। মাঝে-মধ্যে যা হয় তা শুধুই জোড়াতালি মেরামত। এর আড়ালে বছর বছর চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসৎ প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার মিলে গড়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ‘নয়-ছয়ে’ আরো তৎপর আগ্রাসী বিভিন্ন এনজিও। ভাঙা বেড়িবাঁধ উপক‚লবাসীর জন্য মরণফাঁদ। অনেক তোড়জোড় হলেও উপক‚লে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হচ্ছে না।
দুর্বল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আঘাত হানার সময়ে প্রবল জোয়ারের তোড়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সমুদ্র উপক‚ল, প্রত্যন্ত চর ও দ্বীপাঞ্চলের অনেক স্থানে গ্রাম-জনপদ ফসলি জমি, মাছের খামার-ঘের, বসতঘর ভেসে গেছে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘ফণি’ এবং অমাবস্যা এই দ্বিমুখী প্রভাবে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু প্রবল জোয়ার বয়ে গেছে।
উপক‚লের অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ না থাকায় কিংবা নড়বড়ে হওয়ায় জোয়ারের পানিতে দ্রুত প্লাবিত হয় গ্রাম-পাড়া এবং ফল-ফসলের জমি। এখন মাঠে রয়েছে আধা-পাকা আমন ফসল। সর্বনাশা জোয়ারে আমন ফসল বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষেত-খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। এহেন দুর্যোগের সময়ে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া সমুদ্র উপক‚লের কৃষকদের আর করার কিছুই ছিল না। প্রতিবারের দুর্যোগে একইভাবে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছেন কৃষক। উপক‚লীয় গ্রামীণ অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সমগ্র উপক‚ল, চর দ্বীপাঞ্চলের মানুষের এক আওয়াজ- ‘আমরা রিলিফ চাই না, বেড়িবাঁধ চাই’।
দেশের ১৯টি উপক‚লীয় জেলার সাড়ে ৪ কোটি বাসিন্দার মাঝে অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগের মূল কারণ তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য অপরিহার্য বেড়িবাঁধে অবহেলা। অধিকাংশ স্থানে ক্ষতবিক্ষত, নড়বড়ে ও বিধ্বস্ত বাঁধ কোনোমতে টিকে আছে। উপক‚লীয় জনপদে বেড়িবাঁধ স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। ভাঙা ও বিচ্ছিন্ন বাঁধের কারণে অনেক জায়গায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন প্রায়। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া হয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম উপক‚লের বাঁশখালী, আনোয়ারা, স›দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, মহানগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর-কাট্টলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধের দুর্দশার কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবনধারণ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপক‚লীয় ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখায় বেড়িবাঁধের সেই একই দৃশ্য। ভাঙাচোরা বাঁধ দিয়ে উত্তাল সাগরের লোনাপানি এপাশ-ওপাশ ঢেউ খেলছে।
ঝড়-জলোচ্ছাস ও জোয়ারের আতঙ্ক নিয়েই দিনাতিপাত করছেন উপক‚লবাসী। স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে উপক‚লবাসীর জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত। অনেক এলাকায় তারা হুমকির মুখে। কৃষি-খামার, ফসলি জমি, লবণের মাঠ, চিংড়িসহ মাছের ঘের, পুকুর, সবজি ক্ষেতসহ গ্রামীণ অর্থনীতির পাশাপাশি নিজেদের বসতভিটা সবকিছুই উত্তাল সাগরের করাল গ্রাসের মুখোমুখি রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ অধিকাংশ স্থানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সংস্কার বা মেরামত কাজের মান নিয়ে উপযুক্ত তদারকি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যেন কোনো বালাই নেই। এতে করে জোড়াতালির বেড়িবাঁধ কিছুদিন পরেই সমুদ্রে বিলীন হয়। কিংবা ধসে পড়ে।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সংঘটিত শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসের পর দুর্যোগপ্রবণ সমুদ্র উপক‚ল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে জানমাল সুরক্ষায় অগ্রাধিকার পরিকল্পনার ভিত্তিতে উপযুক্ত অবকাঠামো সুবিধাসমূহ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৭ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করে তৎকালীন সচিব এম মোকাম্মেল হকের নেতৃত্বে গঠিত সরকারি উচ্চপর্যায়ের কমিটি। বহুল আলোচিত সেই ‘মোকাম্মেল কমিটি’র সুপারিশে সমুদ্রবন্দর, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, মৎস্য, কৃষি-খামার সমৃদ্ধ দেশের বিস্তীর্ণ উপক‚লীয় অঞ্চল সুরক্ষায় টেকসই এবং স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। অথচ সেই টেকসই মজবুত বা স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ আজো দৃশ্যমান নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।