Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণে কাজের সন্ধানে উত্তরের দিনমজুর

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৯, ১:৫৩ এএম

গতকাল বৃহস্পতিবার, সকাল সোয়া ১০ টা। নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশন। স্টেশনের প্লাটফরম এবং প্লাটফরমের বাইরে ৭/৮ জন কিংবা ১০/১২ জন করে দলবদ্ধ হয়ে বসে আছেন। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আছে একটি করে ব্যাগ। সেই সঙ্গে কারো হাতে আছে কাস্তে, কারো হাতে আছে বাঙ্কুয়া। তারা সকলেই দিনমজুর (কামলা)। তারা মূলতঃ চিলাহাটি থেকে খুলনাগামি আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষা করছে। আর চেয়ে চেয়ে দেখছে কখন উত্তর সীমান্ত থেকে তাদের কাঙ্খিত রূপসা ট্রেনটি সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে ঢুকবে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা এসব দিনমজুরের বাড়ি নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তারা উত্তরের জেলা থেকে কাজের সন্ধানে দক্ষিণের জেলা নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাট জেলায় ছুঁটছেন। কারণ ওইসব এলাকায় এখন পুরোদমে চলছে ইরি- বোরো ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ। আর উত্তরের জেলাগুলোতে আরো পক্ষকাল পরে শুরু হবে ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজ। এখন এখানে তেমন কোন কাজকর্ম নেই। তাই এ অঞ্চলের দিনমজুররা কাজের সন্ধানে এবং বাড়তি কিছু আয়ের আশায় ছুটছেন দক্ষিণের জেলাগুলোতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সৈয়দপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে বের হওয়া বেশ কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে। এমন একজন মো. ইলিয়াস (৩৫)। তাঁর বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউপি নিতাই কাচারীপাড়ায়। তিনি বলেন, হামরা দিনমজুর (কামলা) মানুষ। দিনমজুরি করি যে রোজগার হয় তা দিয়ে হামার সংসার চালাই। এখন হামার এলাকাত কোনো কামকাজ নাই। আর প্রতেক দিনই তো সংসার খরচা লাগে। বাড়িত বসি থাকিলে সংসার খরচা কায় দিবে হামাক। তারে বেদেন (জন্য) হামরা ( আমরা) ১১ জন মিলি দল করি কামের জন্যে বাড়ি থাবি বাহির হয়ছি। যাম ,বগুড়ার সান্তাহার, নওগাঁ, নাটোর এলাকায়। ওই এলাকায় এখন ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হইছে। ১০/১২ দিন কাজ করির পাইলে ৭/৮ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি আসির পাইম। এর কয়েকটা দিন পরইতো হামার এলাকাতও ধানকাটা মাড়াই শুরু হইবে। তিনি আরো বলেন, বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। যে কয়দিন তিনি বাড়ি বাইরে থাকবেন তার জন্য সংসারের সব খরচপাতি করে দিয়েছেন। প্রয়োজনে বউয়েরা বাড়ির কাছে দোকানপাট থেকে বাকিতে বাজারঘাট দিবেন। হামরা বাড়ি ফিরি বাকির টাকা শোধ করিম। ওই দলে ছিলেন আরেক দিনমজুর কাবুল (৪০)। তাঁর বাড়িও নীলফামাীর কিশোরগঞ্জের নিতাইয়ে। তিনি বলেন, নওগাঁয় কাজের খোঁজে বের হয়ছি। বাড়ি থাকি বের হয়ছি ফজরের নামাজের আগেই। সকাল থাকি স্টেশনে বসি আছি হামরা। এখনও ট্রেন আইসে নাই। আজ নাকি ট্রেন দেরি করি আসবে। তিনি সৈয়দপুর থেকে সান্তাহার যাওয়ার জন্য ১৩০ টাকায় শোভন শ্রেণীর একটি টিকিট কেটেছেন। কবে বাড়ি ফিরবেন জিজ্ঞাসা করতে ঝটপট জবাব, কাজ যয়দিন হয়, তয় দিন থাকিম। কাজ না থাকলে বাড়ি চলি আসিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ৮/১০ দিন যাবৎ এসব দিনমজুর কাজের সন্ধানে ট্রেনে দক্ষিণের জেলাগুলেতে ছুঁটছেন। প্রতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে কয়েক হাজার দিনমজুর দক্ষিণের জেলায় যান ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজে। আর অন্য যানবাহনের চেয়ে ট্রেনে খরচ কম পড়ায় তারা মূলত ট্রেনেই যাতায়াত করে থাকেন। এ সময় ট্রেনগুলোতে দিনমজুরদের চাপে প্রচন্ড ভীড় হয়। অতিরিক্ত ভীড়ে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদেও যান। অনেকেই আবার ট্রেনের টিকিট করে প্রচন্ড ভীড়ে বগিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। অপেক্ষায় থাকে পরের ট্রেনের। সৈয়দপুর রেলস্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মো. আলমগীর হোসেন জানান, গত সপ্তাহখানেক ধরে দিনমজুরদের চাপে ট্রেনগুলোতে ভীষণ ভীড়। অনেকে ট্রেনের টিকিট কাটার পরও বগিতে উঠতে পারেনা। তখন আমাদের কাছে টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে বসে। এ সময় আমরা কিছুই করতে পারি না তাদের জন্য। তবে দিনমজুররা সকলেই ট্রেনের টিকিট কেটে ট্রেনে চড়েন বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণে কাজের সন্ধানে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ