Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেব্রুয়ারিতে কাউন্সিল সিলেট বিএনপির

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফয়সাল আমীন : কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে জেলা মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। আহবায়ক কমিটি গঠনের দেড় বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ কাউন্সিল এখন সিলেটে বিএনপির জাগানিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি একই দিনে দু’টি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এদিকে, কাউন্সিলের কারণে পুরোদমে তুঙ্গে সিলেট বিএনপি। অভ্যন্তরীণ লবিং গ্রুপিং-সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পদ বাগিয়ে নিতে ঢাকায় ছুটছেন সম্ভাব্য পদপ্রার্থীরা। আর তাদের ঘিরে তৃণমূলও ফুরফুরে মেজাজে।জেলা ও মহানগর নেতারা জানিয়েছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মুসলিম সাহিত্য সংসদের সোলেমান হলে জেলা বিএনপির ও বিকেলে মহানগর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এবার  কেবল কাউন্সিলই হবে।কোনো সম্মেলন হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনাক্রমে এই আয়োজন করা হয়েছে। জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র  নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে সমঝোতায় কমিটি গঠন করা দুরূহ ব্যাপার। এ কারণে ভোটের মাধ্যমেই এবার নেতা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও চাচ্ছেন কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। সিলেট  জেলা ও মহানগর বিএনপির ইলিয়াস আলী ২০০৯ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছিলেন।
এরপর ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ওই দুটি কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুটি আহ্বায়ক কমিটি তৃণমূলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করলেও আন্দোলনের কারণে জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা যায়নি। পাশাপাশি দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী ছিলেন কারাগারে। এখনও সিনিয়র বেশ কয়েকজন  নেতা কারাগারে রয়েছেন।
একাধিক মামলা থাকার কারণে তারা কাউন্সিলের আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দলীয়  নেতারা। এই অবস্থায়ও কাউন্সিলকে  কেন্দ্র করে  ফের সতেজ হয়ে উঠেছে সাংগঠনিক কর্মকা-। তবে, এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন অনেক মুখই দুটি কমিটিতে স্থান পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তারা জানান, নতুনরা গেল আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন বেশি। এ কারণে অনেকেই এখন কারাগারে।কেউ  কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে চলে  গেছেন লন্ডনে। ফলে নতুনদের দিকে নজর দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা। যারা দলকে শক্তিশালী করতে পারবেন তাদের দিকেও রয়েছে বিশেষ নজর।
 জেলার সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন সাবেক এমপি দিলদার হোসেন  সেলিম ও বিএনপি  নেতা আবুল কাহের শামীম।  আর কাহের শামীম পদত্যাগকারী  নেতা সমশের মুবীন বলয়ের শীর্ষ  নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই পদে তৃণমূলের  নেতারা চাইছেন বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদী লুনাকে। কিন্তু লুনা এ পদে আগ্রহী নন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ততটা মাথা ঘামাচ্ছেন না। এ কারণে  জেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে লুনামুিখ হয়েছেন সিলেটের নেতারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন  নেতা ঢাকায় গিয়ে তার সঙ্গে   দেখা করেছেন।  দোয়া ও সমর্থন চেয়ে চলে এসেছেন সিলেটে। সিলেট  জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে দুই তরুণ  নেতা অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান ও আলী আহমদ। এখন সিলেট বিএনপির কাছে এই দুই  নেতার জনপ্রিয়তার কমতি  নেই। দুজনকেই সুসংহত অবস্থানে  দেখতে চায় তৃণমূলের  নেতাকর্মীরা। কিন্তু  জেলা সেক্রেটারি পদে এই দুই নেতা এক সঙ্গে প্রার্থী হওয়ায় এখানে প্রার্থী যাচাইয়ে বেগ পেতে হবে কেন্দ্রকেও। অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান নিখোঁজ বিএনপি  নেতা ইলিয়াস বলয়ের শীর্ষ  নেতা। তিনি ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের একক কা-ারি।
এ ছাড়া  গেল আন্দোলনেও ছিলেন ফ্রন্ট লাইনের নেতা। অর্ধশতাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন অ্যাডভোকেট জামান। ওদিকে, আন্দোলন -সংগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া সিলেট জেলা বিএনপিকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছেন যে কয়েকজন নেতা তার মধ্যে আলী আহমদ অন্যতম। মামলায়ও বিপর্যস্ত তিনি। এরপরও মাঠ ছাড়েননি। শক্ত হাতে হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে   গেছেন। জামান ও আলীর এই লড়াইয়ে  যে  কোনো একজন হারলেই দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন  নেতারা। আবার দুজনকে সমানভাবে সম্মান  দেয়ার প্রক্রিয়াটাও হবে কঠিন। এদিকে,  জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সিলেট  জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী,  কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান কারাবন্দী  নেতা আবদুল আহাদ খান জামাল, ছাত্রদলের সাবেক তুখোড় নেতা অ্যাডভোকেট হাসান পাটওয়ারী রিপন ও জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও এম ইলিয়াস আলীর একান্তজন মইনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদের স্বপ্ন  দেখছিলেন বর্তমান কারাবন্দী সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সিটি  মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে হারিয়েছেন মেয়রের আসন। দলীয়ভাবে তার অনুপস্থিতির কারণে সুসংহত অবস্থান নেই। তবে, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার  হোসেন  চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নাসিম হোসাইন, অধ্যাপক মকসুদ আলী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকি সভাপতি হতে লবিং চালাচ্ছেন। মহানগরে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম।কিন্তু ইলিয়াস বলয়ের শীর্ষ  নেতা ও সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হতে জোরালো লবিং চালাচ্ছেন। এ ছাড়া এ পদে, সিটি কাউন্সিলর ও সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস  লোদী ও অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিবের নামও আলোচনায় এসেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেক। তার সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে রয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক হুমায়ূন কবির শাহীনও। এ ছাড়া এমদাদ  হোসেন চৌধুরী, মিফতা সিদ্দিকী, সিটি কাউন্সিলর  সৈয়দ  তৌফিকুল হাদীর নাম আলোচিত হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেব্রুয়ারিতে কাউন্সিল সিলেট বিএনপির
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ