পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ছে উচ্চ দক্ষতার জনবলের। কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চ দক্ষতার জনবল বৃদ্ধির হারও কাঙ্খিত মানে হচ্ছে না। এতে শ্রমবাজারে এ ধরনের চাহিদা ও জোগানে দেখা দিচ্ছে মন্দাবস্থা। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের শ্রমবাজারে। কমছে মাঝারি দক্ষতার জনবল। এ ঘাটতি পূরণে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে বাংলাদেশে থাকা কোম্পানিগুলোর।
২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চাকরির বাজার বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৯: দ্য চ্যালেঞ্জিং নেচার অব ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে মাঝারি মানের দক্ষতার শ্রমিক কমলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বল্পদক্ষতার শ্রমিকসংখ্যা। এতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার স্বল্পদক্ষতানির্ভর হয়ে পড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে উচ্চ দক্ষতার জনবল তৈরির প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ, যা উন্নয়নশীল আট দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অথচ এ সময়ের পূর্বে বাংলাদেশে উচ্চ দক্ষতার জনবল তৈরির প্রবৃদ্ধির হার বেশি ছিল। ২০০০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে আগের চেয়ে ২০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে উচ্চ দক্ষতার জনবল তৈরি। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বলিভিয়ার উচ্চ দক্ষতার জনবল বৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এ সময়ে মাঝারি মানে দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের হার কমেছে এক দশমিক তিন শতাংশ, যা উন্নয়নশীল আট দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে বাংলাদেশের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি কমেছে মাঝারি মানের দক্ষতার শ্রমিক। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যাওয়ায় অনেক শ্রমিকই নতুন মেশিন চালাতে পারছেন না। এতে করে তাদের চাকরি ছাড়তে হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে বাংলাদেশে স্বল্পদক্ষতার শ্রমিকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ১৫ শতাংশ, যা আটটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝারি মানের এ জনবলের একটি অংশ তার নিচের ধাপের বেতন নিয়ে চাকরি করছে। এতে করে বাংলাদেশে স্বল্পদক্ষতার শ্রমিক বাড়ছে।
অপরদিকে মাঝারি দক্ষতার শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে এখন বিদেশনির্ভরতা বাড়ছে দেশে উৎপাদনে থাকা দেশীয় ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) স¤প্রতি এক সেমিনারেও বিষয়টি আলোচনা হয়। এতে আলোচকরা বলেন, দক্ষ জনবল সংকট পূরণ করা হচ্ছে বিদেশি কর্মীদের দিয়ে। এতে তারা প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর ১৮ থেকে ২১ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেও অর্ধেকের বেশি বেকার থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ জনবল তৈরির জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক। ভাষা ও প্রযুক্তিগত বিষয়েও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য এ খাতের বিকাশে সরকারি প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা প্রয়োজন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এ খাতে গুরুত্ব দিলে সফলতা মিলতে পারে। তাহলে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। এজন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, উচ্চ দক্ষতার পেশার তালিকায় বিশ্বব্যাংক স্থান দিয়েছে ব্যবস্থাপক, বিষয়ভিত্তিক পেশাদার, কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের। মাঝারি মানের দক্ষতার পেশা হিসেবে চিহ্নিত করেছে করণিক কাজে সহায়তাকারী, বিক্রয় ও সেবা খাতের কর্মী, কারু ও ব্যবসা খাতে নিয়োজিত কর্মী, কৃষিতে দক্ষ জনবল, বনায়ন, মৎস্যজীবী, মেশিন অপারেটরদের। এছাড়া স্বল্পদক্ষতার কর্মী তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও তাদের সহযোগী, কৃষিশ্রমিক, মৎস্য ও বনায়নে নিয়োজিত মজুর, খনিশ্রমিক, নির্মাণ খাত, উৎপাদন, পরিবহন, প্রস্তুতকৃত খাদ্য তৈরির কাজে নিয়োজিত, ফুটপাত এবং যেখানে-সেখানে পণ্য বিক্রয়কারী ও সমজাতীয় কাজ করে এমন পেশাকে।
জানা গেছে, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) গঠন করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষকদের মতে, এনএসডিএকে যত দ্রæত সম্ভব কার্যকর করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। সরকারি পর্যায়েও চাকরির বাজার চাহিদা নিয়ে গবেষণা থাকতে হবে। এটি বেসরকারি পর্যায়ে থাকাটাও জরুরি। তারাও নিজেদের জনবলকে সময় সময় উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।