বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জান্নাত লাভকারীগণ শেষ বিচারের দিন চূড়ান্ত সফল বলে স্বীকৃত হবেন। এ প্রসঙ্গটি এবং জান্নাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) সেদিন যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করা হবে, তার প্রতি তিনি তো কৃপা করবেন। আর তাই সুস্পষ্ট সফলতা। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ১৬)। (খ) আমি তাদের অন্তর হতে হিংসা-বিদ্বেষ, মনোমালিন্য দূর করে দেব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। (সূরা আরাফ : আয়াত ৪৩)।
(গ) তারা অবস্থান করবে সুউচ্চ উদ্যানে। তার ফলের খোসাগুলো হবে নিকটবর্তী। (সূরা আল হাক্কাহ : আয়াত ২২, ২৩)। (ঘ) আমি তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তাতে প্রচুর ফলমূল আছে এবং তা হতে তোমরা ভক্ষণ করে থাক। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ১৯)। (ঙ) যেখানে কাঁদি কাঁদি কলা থাকবে। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ২৯)। (চ) আমি তাদের (জান্নাতের হুরদের) সৃষ্টি করেছি চির কুমারীরূপে। তারা সোহাগিনী। (তারা নির্ধারিত হবে) আসহাবুল ইয়ামিনের জন্য। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৩৬-৩৮)।
(ছ) আয়াত লোচনা, তাবু অভ্যন্তরে অবস্থানাকরীনী রমণীগণ। (সূরা আর রাহমান : আয়াত ৭২)। (জ) জান্নাতীদের বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সাথে। (সূরা আদ দুখান : আয়াত ৫৪)। (ঝ) জান্নাতে থাকবে বিস্তৃত প্রসারিত ছায়া প্রবহমান পানি, পর্যাপ্ত ফল ফলাদি। (সূরা ওযাকিয়া : ৩০, ৩১)।
বস্তুত : জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতসমূহ অস্বীকারকারীগণ সকলেই কাফির। আহলে ঈমানের সর্বসম্মত মতানুসারে তাদের কঠোর দন্ডে দন্ডিত করা ওয়াজিব। কেননা, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. এ বিষয়ে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও সকল প্রকার ওজর আপত্তির অপনোদনকারী বর্ণনা প্রদান করেছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদীর বিশেষ ব্যক্তি সাধারণ লোকের সকলের নিকট এ সকল বর্ণনা তাওয়াতুর পদ্ধতিতে পৌঁছেছে।
কোনো কোনো ইয়াহুদী এ জাতীয় মাসআলাতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে বলেছে, হে মুহাম্মাদ সা., তুমি বল যে, জান্নাতীগণ খাবে পান করবে। সে খাবে ও পান করবে। সে খাবে ও পান করবে তার তো প্রশ্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সুগন্ধি ঘর্মের সাথে পানাহারের নির্যাস দেহ হতে বের হয়ে যাবে। প্রশ্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : খন্ড ৪, পৃ. ৩১৪)।
এপ্রসঙ্গে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, জান্নাতের কতিপয় নিয়ামতের বর্ণনা খবরে ওয়াহিদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর ওপরও বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি। যদিও এগুলো অস্বীকার করায় মানুষ কাফির হয় না। এক্ষেত্রে অধিকতর সঠিক কথা হল এই যে, খবরে ওয়াহিদ অস্বীকারকারীকে কাফির বলা যাবে না। (শরহে আকিদায়ে ফিফারানিয়াহ : খন্ড ১, পৃ. ১৯)।
মোটকথা, সকল জান্নাতীর জান্নাতে প্রবেশ একমাত্র আল্লাহপাকের দয়া ও করুণার ফলেই হবে। কাওকেই জান্নাত প্রদান করা আল্লাহর জন্য জরুরি ও কর্তব্য নয়। এতদ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তার কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। বান্দাগণ তাদের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ২৩)। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকেই তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।
সাহাবগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকেও না, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, আমিও না। তবে, আল্লাহপাক আমাকে তার রহমতের ছায়ায় ঢেকে নেবেন। (সহীহ মুসলিম : খন্ড ১, পৃ. ৩৭৭)। অধিকতর সঠিক কথা হল এই যে, আল্লাহপাক কাউকে জান্নাত দিলে তা তার করুণামাত্র। আর কাউকে জাহান্নামে দাখিল করলে, তা তার ইনসাফ ও ন্যায় বিচার। (আকীদায়ে তাহাভিয়্যাহ মায়াশ শরহে : পৃ. ৪৩১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।