Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরনো গোমতী তুমি কার?

কুমিল্লায় বেপরোয়া নদীখেকোরা, প্রমত্তা নদী এখন সরু খালে রূপ নিয়েছে, আঁটঘাট বেঁধেই শুরু হবে উচ্ছেদ অভিযান

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর কুমিল্লার পুরানো গোমতী ও ডাকাতিয়া দখলদারদের চেহারায় আতঙ্কের বলিরেখা ভেসে ওঠেছিল। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকেও জোরালো বক্তব্য ওঠে এসেছিল নদী দখলদারদের বিষয়ে। পরিদর্শন ও পরিমাপের পর তালিকাভুক্ত দখলদারদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হবে এমন আভাসও মিলেছিল।
জেলা প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা হাতে নিয়েই অভিযান শুরু করবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে নদীর দুই তীর অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের মতো কুমিল্লাতেও স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজ, পরিবেশবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা।
কুমিল্লা জেলার উল্লেখযোগ্য নদী বলতে গোমতী, মেঘনা, তিতাস আর ডাকাতিয়াকেই বুঝায়। তবে বড় আকারের এসব নদী ছাড়াও আরও বেশ কিছু নদ-নদী রয়েছে যা একসময় এখানকার গ্রামীণ জনপদ সমৃদ্ধ করেছিল। সময়ের প্রবাহে পরিচিত অনেক নদীই হারিয়ে গেছে কুমিল্লার বুক থেকে। আর যেকটি রয়েছে তার কোনটির দুই তীর দখল করে ঘর-বাড়ি, চাষাবাদের মাঠ, দোকান-পাট এমনকি মার্কেট গড়ে তোলে অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে ফেলেছে।
কুমিল্লা শহরের উত্তর প্রান্তে প্রবাহিত পুরানো গোমতী নদীর দুই পাড় ও পানির অংশে এখনো চলছে দখলের হিড়িক। প্রায় ৪০ বছর ধরে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে অন্তত ৬ শতাধিক দখলদারে পুরানো গোমতী নদী সরু হয়ে খালে রূপ নিয়েছে।
কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলকে কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করার পেছনে বড় অবদান ডাকাতিয়া নদীর। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ বাজার এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার মনোহরগঞ্জ বাজার এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে দীর্ঘদিন থেকে চলছে ডাকাতিয়া নদী দখলের প্রতিযোগিতা। লাকসামে ডাকাতিয়ার দুই তীর দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়াও মনোহরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ঘাগুরিয়া নদীও দখলযজ্ঞে আক্রান্ত।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজার সংলগ্ন কালাডুমুর নদীর কোন কোন অংশে ভরাট হয়ে দোকান পাট, মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রভাবশালীরা নদী দখল করে জায়গা ভাড়া বা দখলস্বত্ত¡ বিক্রি করে দিচ্ছেন। লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ বাজার এবং চান্দিনা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ক্ষিরাই নদীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখলের কারনে নদীর অস্তিত্ব বিলীনের পথে। ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং এবং কুমিল্লা সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঘুংঘুর নদীর ২০ কিলোমিটারই দখল হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর, দোকানপাট আর চাষাবাদের জন্য জমি গড়ে তোলে এক সময়ের খরস্্েরাতা ঘুংঘুর নদীকে গ্রাস করেছে প্রভাবশালীরা। চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় কাকড়ী নদীর পাড় দখলের প্রতিযোগিতাও অব্যাহত রয়েছে।
কুমিল্লার এসব নদ-নদী স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রক্ষা, দখল-দুষণমুক্ত রাখতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ ছাড়াও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, পরিবেশবাদি সংগঠন গ্রীণ ভয়েসসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সভা, সেমিনার, মানববন্ধন করে আসছে। কুমিল্লার ঐতিহ্যের নদ-নদীগুলো দখল-দুষণমুক্ত হচ্ছে না।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে এবারে আটঘাট বেঁধেই উচ্ছেদ অভিযানে নামবে। তবে এবিষয়ে দিনক্ষণ জানা যায়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি প্রফেসর ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লার এসব নদীর কোনটি জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে। আবার কোনটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। অথচ তাদের চোখের সামনেই নদ-নদী দখল-দুষণের ঘটনা ঘটছে।
তারা বলেন, জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যদি মনোযোগের সাথে এসব নদ-নদী দখলযজ্ঞের ঘটনা সরেজমিন দেখতেন তাহলে আরও দুই যুগ আগেই দখল-দুষণমুক্ত থাকতো আমাদের এসব নদ-নদী। একাজটি করা হয়নি বলেই দিন দিন দখলদারদের সংখ্যা বেড়েছে আর কমেছে নদ-নদীর সীমানা। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তো প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষমতা নেই। যাদের আছে তাদের তো ভূমিকা রাখতে হবে। ভূমিকা রাখতে পারলেই কুমিল্লার নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ