পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদীর স্রোতের মতো সময়ও বয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। দেখতে দেখতে দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের পঞ্চম বর্ষ পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে মামলার প্রাপ্তি হচ্ছে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতের রায়। মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা আসামিদের আপিলের প্রেক্ষিতে এখন চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশনে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে নিহতদের স্বজনদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ করে রায় বাস্তবায়ন করা। তা না হলে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ দিকে যথারীতি এ দিনটিকে সামনে রেখে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ, দোয়া ও এতিমখানায় খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এই মামলায় ইতোমধ্যেই নিম্ন আদালত এবং হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ে নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ২৬ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছিল। হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন। এই চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার ৫ বছর পূর্তিতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুততার সাথে মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ তার ৪ সহযোগীকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ দৃশ্য দেখে ফেলায় নজরুল ইসলামের গাড়ির পেছনে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়। অপহরণের ৩ দিন পর ৩০ এপ্রিল বন্দরের শান্তিরচর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অপহৃতদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ দিকে ঘটনার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছিল। অভিযোগপত্র জমা দেয়ার ১০ মাসের মধ্যে শুরু হয় বিচার কাজ। বিচার কাজ শুরুর ১১ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হয়। এ ছিল নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলায় ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ ৭ খুনের ঘটনার পর ৩৩ মাসের মধ্যে (২ বছর ৯ মাস) নিম্ন আদালত রায় ঘোষণা করেছিল। আর নিম্ন আদালতের রায়ের ৭ মাসের মাথায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে এখন মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিম্ন আদালতে মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ৭ খুনের ঘটনার পর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছিল। দ্রুততার সঙ্গে চাঞ্চল্যকর মামলাটির রহস্য উদঘাটন এবং একটি এলিট ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ৩ জন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে ওই সময় অভিযোগপত্র দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিল পুলিশ তথা তদন্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনার অভিযোগপত্র জমা দেয়ার ১০ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়। বিচার কাজ শুরুর ১১ মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা হয়। রায়ে নূর হোসেন, র্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ, উপ-অধিনায়ক আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ২৬ জনেক ফাঁসি ও বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়।
আর নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর মাত্র ৭ মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্টে মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি সম্পন্ন হয় এবং সেখানে নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানাসহ ১৫ জনের ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। নিম্ন আদালতে ফাঁসির দন্ড পাওয়া বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানি পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির সব কিছুই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে গিয়ে সবকিছু যেন থমকে গেছে। এটি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের গাফিলতি বলে উল্লেখ করেন তিনি ।
সাত খুনের ঘটনায় হওয়া দুই মামলার প্রথমটির বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের এখন একটিই চাওয়া, সেটি হলো যত দ্রুত সম্ভব আদালতের কার্যক্রম শেষে খুনিদের রায় কার্যকর করা। তাহলেই নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।
দ্বিতীয় মামলার বাদী এবং নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের বড় মেয়ের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, ৭ খুনের রহস্য উন্মোচনে গণমাধ্যমের ভ‚মিকাই ছিল মুখ্য। কারণ ঘাতকরা গ্রেফতারের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে যা উল্লেখ করেছে তা আগেই গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের অনুসন্ধানে তুলে এনেছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে মামলাটি গতি পায়।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কারণে মামলাটির রহস্য উন্মোচিত হয়েছিল। আমরা আশা করি আবার গণমাধ্যমের লেখালেখির কারণেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে দ্রুত নিষ্পত্তি হতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু এত বড় ঘটনার সঙ্গে জড়িতরাও হাইপ্রোফাইল, তাই চ‚ড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত তারা আশান্বিত হতে পারছেন না। কারণ শেষ পর্যায়ে যদি আসামিদের সাজা কমে যায় বা মওকুফ হয়ে যায়? তাই মামলাটির বিষয়ে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, নিম্ন ও উচ্চ উভয় আদালতের রায়েই তারা সন্তুষ্ট। তবে রায় কার্যকরের আগে তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভার হতে পারছেন না। রায় কার্যকর হলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্যই তা মঙ্গল বয়ে আনবে। কারণ এ রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশবাসীকে একটি মেসেজ দেয়া সম্ভব, সেটি হলো অপরাধী যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, ৭ খুনের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের সবাই ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হতো তাহলে পরিবারগুলো অন্তত ভালো থাকার চেষ্টা করত।
নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্সে যে রায় বহাল আছে সেটিই যেন অ্যাপিলেট ডিভিশনে বহাল রাখা হয়।
নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, সরকারের সদ্বিচ্ছায় এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি এ পর্যন্ত এসেছে। হাইকোর্টে যে রায় দেয়া হয়েছে সেটিই যেন অ্যাপিলেট ডিভিশনে বহাল রাখা হয় এবং রায় যাতে দ্রুততার সঙ্গে সরকারের এই মেয়াদেই যেন রায় কার্যকর করা হয়, যাতে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
নিহত স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শামসুন নাহার আক্তার নূপুর জানান, ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ২ মাস পর আমার একমাত্র সন্তান রোজারও ৫ বছর পূর্ণ হবে। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. আইভী মাস্টার রোলে ৬ হাজার টাকা বেতনে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ কার্যালয়ে একটি চাকরি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে আমার সন্তান নিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। চাকরিটি স্থায়ীকরণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের ডেকে নিয়ে সহযোগিতা করার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সবিনয়ে অনুরোধ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।