Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অধরা কাভার্ডভ্যান চালক

ফলোআপ : সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) নিহতের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালককে আটক করতে পারেনি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে সনাক্তকরণসহ আটকের চেষ্টা চলছে। তবে পলাতক উবার চালক সুমন হোসেনের খোঁজ মিলেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। বর্তমানে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, লাবণ্য নিহতের ঘটনায় তার বাবা কাজী ইমদাদুল হক বাদী হয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামলী ও সাভারে পৃথক জানাজা শেষে সাভারে নানাবাড়িরতে পারিবারিক কবরস্থানে লাবণ্যেকে দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ২ নং রোডের ২৫ নং বাসার ৬ তলা থেকে সুমনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইসঙ্গে লাবণ্যকে বহনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও (ঢাকা মেট্রো হ- ৩৬-২৩৫৮) উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে গতকাল পর্যন্ত ঘাতক কাভার্ডভ্যান ও চালকের কোন খোঁজ পায়নি শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
বিপ্লব কুমার সরকার উবার চালক সুমনের বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনার দিন সকালে রাজধানীর কলেজ গেটে অবস্থান করছিলেন সুমন। লাবণ্যের কল পেয়ে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে উবার চালক সুমন তাকে ফোন দেন। লাবণ্য খিলগাঁও ছায়াবীথি মসজিদের সামনে যেতে চান জানিয়ে সুমনকে শ্যামলী ৩ নং রোডের ৩১ নং বাসার সামনে আসতে বলেন। পরে সুমন আসলে লাবণ্য তার মোটরসাইকেলে আরোহন করেন।
চালকের বরাতে তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছালে অজ্ঞাত এক পথচারী বাইকের সামনে দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পার হতে গেলে সুমন ব্রেক কষেণ। এ সময় একটি কাভার্ডভ্যান পেছন থেকে তাদেরকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ও লাবণ্য রাস্তায় পড়ে আহত হন। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক লাবণ্যকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কাউকে না বলে বাসায় চলে যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর উবার চালক সুমন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে খুঁজে বের করা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, সুমনকে আটক করা হয়নি। চালক হিসেবে তার অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশি নজরদারির মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসআই নুরুল ইসলাম আরও বলেন, লাবণ্য নিহতের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হচ্ছে ঘাতক কাভার্ডভ্যান। সেই কাভার্ডভ্যানের চালক পলাতক রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তাকে আটক করা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে সনাক্তকরণসহ আটকের চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই তাকে আটক করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
পরিবার ও বন্ধুদের সূত্রে জানা গেছে, লাবণ্য আহত হওয়ার সময় তাৎক্ষণিকভাবে পরিবার ও স্বজনরা খবর পাননি। তবে তারা যখন খবর পান তখন লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ছুটে যান স্বজন ও বন্ধুরা। সেখানেই শিক্ষার্থী ও স্বজনরা ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালকসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
লাবণ্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরমান বলেন, লাবণ্য সব সময় হাসিখুশি থাকতেন। সবার সাথে তার খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল। খুব সহজে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও তার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু ঘাতক চালকের কারণে অকাল মৃত্যু হয়েছে। পরিবার ও বন্ধুরা ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাবণ্যের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে শ্যামলী শিশু পল্লী জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে সাভারে নানাবাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার শ্যামলী থেকে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল উবারে করে খিলগাঁও যাওয়ার পথে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের কাছাকাছি একটি কাভার্ডভ্যান তাদেরকে ধাক্কা দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ফাহমিদা হক লাবণ্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। তিনি রাজধানীর শ্যামলীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তার বাবা কাজী ইমদাদুল হক পেশায় ব্যবসায়ী। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন লাবণ্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চালক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ