বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী নৈতিকতার বুনিয়াদ বা ভিত্তি কি এবং কেমন, তা অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে হযরত আতিয়া সাদী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, কোনো বান্দা মুত্তাকী লোকদের মাঝে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিগণিত হতে পারে না, যতক্ষণ না সে কোনো মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেসব জিনিসও পরিত্যাগ করবে, যেগুলোতে কোনো দোষ বা মন্দ থাকে না।
ইসলাম পবিত্র নির্মল জীবন গঠন করার প্রয়াসী। এই জীবনের জন্য যা একান্ত দরকার তা হলো মন্দ থেকে বেঁচে থাকা, মুক্ত ও পবিত্র থাকা। যা মন্দ নয় বা যা মন্দের প্রতি ইঙ্গিতও প্রদান করে না, এমন সব কাজ বা অনুষ্ঠানের পরিণতিও মন্দ হতে পারে।
কিংবা মন্দের সাথে জড়িয়ে পড়ার পথ সুগম করে তুলতে পারে। এই জাতীয় কাজ বা পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা এমন কি যা একান্তই মন্দ তা বর্জন করার মাঝে যে ভিত্তিমূল রয়েছে তা-ই ইসলামী নৈতিকতার ভিত্তি। এখানে নেই কোনো আবর্জনা, আবিলতা ও মন্দের ছোঁয়াচ। এই শ্রেণীর পরহেজগারী ইসলাম নৈতিকতার ভ‚ষণ।
যে ভ‚ষণ ব্যক্তি মানুষকে যেমন সুন্দর করে, পরিমার্জিত করে, তেমনি সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র সুফল বয়ে আনতে পারে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, হে আয়েশা, ছোট ছোট গুনাহও পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা নগণ্য গুনাহর জন্যও আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞেস করা হবে।
ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ উভয় শ্রেণীর মন্দ কাজ পরিহার করার কথা মহান আল্লাহপাক আল কোরআনেও ঘোষণা করেছেন। যেমনÑ ‘যদি তোমরা বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাক তাহলে ছোট গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করবেন।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩১)।
প্রকৃতপক্ষে ছোট ও বড় গুনাহ পরস্পর আপেক্ষিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছোট গুনাহর প্রবণতা যদি বেড়ে যায় তা ক্রমান্বয়ে বড় গুনাহের পথ খুলে দিতে পারে। এ জন্যই ছোট গুনাহর কাজ যেমন বর্জনীয় তেমনি ছোট গুনাহর অভিযুক্ত হওয়ার সন্দেহও যেন দানা বাঁধতে না পারে তৎপ্রতিও লক্ষ রাখতে হবে।
তাছাড়া বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকলে বা বিরত থাকার মনোবৃত্তি গ্রহণ করলে প্রকৃতই গুনাহের প্রতি ঘৃণার ভাব জাগরিত হয়। এতে করে ছোট গুনাহও করা হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে এই আলোর শিখাকে দিকনির্দেশনা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকওয়ার মাঝেই রয়েছে এই আলোর বিচরণ ক্ষেত্র।
কোরআনে পাকের সূরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকীদের পরিচয় তুলে ধরে ইরশাদ হয়েছে ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে ও তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। আর তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে এবং পরকালে যারা নিশ্চিত ইয়াকীন রাখে তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ৩-৪)।
এখানেও গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবনের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের জীবন দু’টি প্রবাহে সমন্বিত। এর একটি বাহ্যিক দিকের পরিচর্যা করে এবং অপরটি অন্তরের পরিচর্যা করে। আন্তরিক পরিচর্যার দ্বারাই তাকওয়ার উন্মেষ ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।