Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে নৈতিকতার ভিত্তি

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ইসলামী নৈতিকতার বুনিয়াদ বা ভিত্তি কি এবং কেমন, তা অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে হযরত আতিয়া সাদী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, কোনো বান্দা মুত্তাকী লোকদের মাঝে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিগণিত হতে পারে না, যতক্ষণ না সে কোনো মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেসব জিনিসও পরিত্যাগ করবে, যেগুলোতে কোনো দোষ বা মন্দ থাকে না।
ইসলাম পবিত্র নির্মল জীবন গঠন করার প্রয়াসী। এই জীবনের জন্য যা একান্ত দরকার তা হলো মন্দ থেকে বেঁচে থাকা, মুক্ত ও পবিত্র থাকা। যা মন্দ নয় বা যা মন্দের প্রতি ইঙ্গিতও প্রদান করে না, এমন সব কাজ বা অনুষ্ঠানের পরিণতিও মন্দ হতে পারে।
কিংবা মন্দের সাথে জড়িয়ে পড়ার পথ সুগম করে তুলতে পারে। এই জাতীয় কাজ বা পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা এমন কি যা একান্তই মন্দ তা বর্জন করার মাঝে যে ভিত্তিমূল রয়েছে তা-ই ইসলামী নৈতিকতার ভিত্তি। এখানে নেই কোনো আবর্জনা, আবিলতা ও মন্দের ছোঁয়াচ। এই শ্রেণীর পরহেজগারী ইসলাম নৈতিকতার ভ‚ষণ।
যে ভ‚ষণ ব্যক্তি মানুষকে যেমন সুন্দর করে, পরিমার্জিত করে, তেমনি সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র সুফল বয়ে আনতে পারে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, হে আয়েশা, ছোট ছোট গুনাহও পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা নগণ্য গুনাহর জন্যও আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞেস করা হবে।
ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ উভয় শ্রেণীর মন্দ কাজ পরিহার করার কথা মহান আল্লাহপাক আল কোরআনেও ঘোষণা করেছেন। যেমনÑ ‘যদি তোমরা বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাক তাহলে ছোট গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করবেন।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩১)।
প্রকৃতপক্ষে ছোট ও বড় গুনাহ পরস্পর আপেক্ষিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছোট গুনাহর প্রবণতা যদি বেড়ে যায় তা ক্রমান্বয়ে বড় গুনাহের পথ খুলে দিতে পারে। এ জন্যই ছোট গুনাহর কাজ যেমন বর্জনীয় তেমনি ছোট গুনাহর অভিযুক্ত হওয়ার সন্দেহও যেন দানা বাঁধতে না পারে তৎপ্রতিও লক্ষ রাখতে হবে।
তাছাড়া বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকলে বা বিরত থাকার মনোবৃত্তি গ্রহণ করলে প্রকৃতই গুনাহের প্রতি ঘৃণার ভাব জাগরিত হয়। এতে করে ছোট গুনাহও করা হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে এই আলোর শিখাকে দিকনির্দেশনা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকওয়ার মাঝেই রয়েছে এই আলোর বিচরণ ক্ষেত্র।
কোরআনে পাকের সূরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকীদের পরিচয় তুলে ধরে ইরশাদ হয়েছে ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে ও তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। আর তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে এবং পরকালে যারা নিশ্চিত ইয়াকীন রাখে তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ৩-৪)।
এখানেও গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবনের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের জীবন দু’টি প্রবাহে সমন্বিত। এর একটি বাহ্যিক দিকের পরিচর্যা করে এবং অপরটি অন্তরের পরিচর্যা করে। আন্তরিক পরিচর্যার দ্বারাই তাকওয়ার উন্মেষ ঘটে।



 

Show all comments
  • মিরাজ মাহাদী ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
    মানুষ চাইলে তার নিজের ভেতরটাকে নৈতিকতার বিচিত্র গুণে গড়ে তুলতে পারে। নিজের চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এমনকি তার আচার আচরণে যদি তার ওই গুণাবলি পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসিবুল ইসলাম ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
    নৈতিক গুণাবলি ব্যক্তির ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক গুণাবলির গুরুত্ব এতো বেশি যে একজন মানুষ যদি সকল জ্ঞান ও বিজ্ঞান অর্জন করে এমনকি প্রকৃতির সকল শক্তির ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারও করে তাতে কোনো লাভ নেই, যদি না ওই লোক নিজের ভেতরের শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে না পারলে প্রকৃত উন্নতি ও সৌভাগ্য অর্জন করা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জয়নাল হাজারি ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
    জ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি সকল উন্নয়ন সত্ত্বেও আচরণগত সংস্কার করা না হলে ওই উন্নয়ন হবে সেই আকাশচুম্বী টাওয়ার বা প্রাসাদের মতো যে টাওয়ার গড়ে তোলা হয়েছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিময় পাহাড়ের ওপর। সুতরাং মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণ এককথায় মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ প্রত্যেক সমাজের জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
    পৃথিবীজুড়ে আজ যে অস্থিরতা, অশান্তি, গোলোযোগ, বিচ্ছৃঙ্ক্ষলা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মারামারি, হানাহানি, অরাজকতা-সবই ওই নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণহীনতা থেকেই উৎসারিত। বর্তমান বিশ্ব শিল্প ও জ্ঞানের ভুবনে অনেক উন্নয়ন অর্জন করেছে। এগুলোর সাহায্যে তারা মানুষের পার্থিব জগতের বিচিত্র চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মানবীয় নীতিনৈতিকতার দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে এতোকিছুর পরও মানুষ পতনের অতল গহ্বরে পড়ে আছে কিংবা সেদিকেই অগ্রসর হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো শান্তি নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • স্বদেশ আমার ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    নিঃসন্দেহে মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার জন্যে ইসলাম ধর্মে রয়েছে পরিপূর্ণ এবং যথার্থ দিক-নির্দেশনা। আধুনিক গবেষণাতেও দেখা গেছে জ্ঞানীগুণীরা বলতে বাধ্য হয়েছেন যে ধর্মীয় আচার আচরণ, নৈতিকতা এবং বোধ ও বিশ্বাসের সাথে মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে এমন সব হুকুম আহকাম এবং নীতিমালা রয়েছে যেগুলো মানুষের আত্মার প্রশান্তি নিশ্চিত করে এবং শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন