বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এই পৃথিবীতে এমন লোকের অভাব নাই যে বা যারা জান্নাতকে আল্লাহপাকের পুরস্কারের প্রকৃত জায়গা বলে বিশ্বাস করে না, বরং জান্নাতকে একটি কাল্পনিক জগৎ বলে মনে করে। প্রকৃত প্রস্তাবে তারাও জান্নাত অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত বিধায় তাদেরকে ইসলামের দায়েরা হতে বহিষ্কৃত বলে বিবেচনা করতে হবে এবং তারা আসলেই মুলহিদ।
এ প্রসঙ্গে শরহে ফিকহে আকবারের ১৩৩ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহপাক জান্নাতিদের জন্য যে হুর বালাখানা, মহর, বৃক্ষ, ফলমূল ইত্যাদির শুভ সংবাদ দিয়েছেন, তা সবই সত্য। তথাকথিত বাতেনি ফেরকা নামের এক শ্রেণীর লোক এতে দ্বিমত পোষণ করে। তারা যথার্থই মুলহিদ।
বস্তুত কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট বাণী ও নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাতেনিদের মনগড়া অর্থগ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে ইলহাদ ও কুফুরি। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত জান্নাতকে পুরস্কার ও আনন্দ-আহ্লাদের জগৎ হিসেবে পরিশোভিত করেছেন। জান্নাতের বেশ কিছু নিয়ামতের আলোচনা কোরআন মাজীদে এবং মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, সেসবের ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ।
যেমন জান্নাতে কোনো রকম ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তা থাকবে না। জান্নাতের নিয়ামতসমূহ চিরস্থায়ী ও অক্ষয়। তথায় জান্নাতিদের সব বাসনা পূর্ণ হবে। জান্নাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি এবং তার দিদার নসিব হবে। জান্নাত লাভের যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য যথাসময়েই তার দ্বার উন্মুক্ত করা হবে। প্রত্যেক জান্নাতি ব্যক্তি চার প্রকার নহর লাভ করবে- ক. পানির নহর। খ. দোহনকৃত দুধের নহর, যা বিনষ্ট হবে না। গ. নির্দোষ ও উপাদেয় শরাবের নহর এবং ঘ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মধুর নহর। সব জান্নাতবাসী পরিপূর্ণ বান্দাহ বলে বিবেচিত হবে। জান্নাতিদের অন্তরে পারস্পরিক কোনো দ্ব›দ্ব-কলহ থাকবে না এবং হিংসা-বিদ্বেষের কোনো ভাব উদয় হলে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তা অন্তর থেকে দূর করে দেবেন।
জন্নাতিগণ সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব অব্যাহত রেখে অবস্থান করবে। জান্নাতে উঁচু-নিচু বাগান থাকবে। যার ছড়া, ফুল, ফল ঝুলে থাকবে। জান্নাতিগণ রেশম বস্ত্রের পরিচ্ছদ ও স্বর্ণ-রৌপ্যের কঙ্কন দ্বারা সুশোভিত থাকবে। জান্নাতে আনার, আঙ্গুর, কলা এবং বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল থাকবে।
জান্নাতে পাখির গোশতের ব্যবস্থা, হুর-গেলমানের আয়োজন, দীর্ঘ ছায়াবিশিষ্ট বৃক্ষ, প্রবাহমান পানির ঝরনাধারা থাকবে। এসব নিয়ামতের বিবরণ কোরআনুল মাজীদে আছে। সুতরাং ওইগুলোসহ কোরআন ও মুতাওয়াতির হাদিসে বর্ণিত নিয়ামতসমূহের ওপর ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। ওইগুলোর মধ্য হতে যেকোনো একটির অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস মানুষকে ইসলাম হতে বের করে দেয়।
উপরোল্লিখিত বিষয়াবলির বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে কোরআনুল মাজীদে বিবৃত আছে। যেমন- (ক) আল্লাহপাক জান্নাতিদের বলবেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের কোনো ভয় ও চিন্তা নেই। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৪৯)। (খ) আপনি বলুন, তা-ই উত্তম, না ওই চিরস্থায়ী জান্নাত যার ওয়াদা মুত্তাকিদের জন্য করা হয়েছে। (সূরা আল ফুরকান : আয়াত ৫১)।
(গ) তারা চিরদিন ওই পরিতৃপ্তি ও আনন্দে অবস্থান করবেন, যা তাদের মন চায়। (সূরা আল আম্বিয়া : আয়াত ১২০)। (ঘ) তাদের প্রতিপালক তাদেরকে স্বীয় করুণা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়েছেন। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ২১)। (ঙ) সেদিন অনেক মুখমন্ডল হাস্যোজ্জ্বল হবে, তাকিয়ে থাকবে তাদের প্রতিপালকের দিকে। (সূরা আল কিয়ামাহ : আয়াত ২২-২৩)।
(চ) যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে স্বাগতম জানানো হবে। তারা যখন জান্নাতের নিটে পৌঁছবে, এমতাবস্থায় যে, পূর্ব হতেই তাদের জন্য দ্বারসমূহ উন্মুক্ত থাকবে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে বলবে সালিম...। (সূরা যুমার : আয়াত ৭৩)। (ছ) যাকে জাহান্নামের আগুন হতে দূরে রাখা হয়েছে ও জান্নাতে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়োছে, সে সফলতা লাভ করেছে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৮৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।