Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

উপকূলবাসীর ঘুমের মধ্যেও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ ও আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত মৎস্য ঘের। পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে গ্রামগুলোতে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গ্রামবাসী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন কিনারা হয়নি।
উপকূলবাসীর ঘুমের মধ্যেও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক জেকে বসেছে। সিডর-আইলায় ক্ষত বিক্ষত বেড়িবাঁধগুলো এখনও ফিরে পায়নি হারানো অস্তিত্ব। উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধ এখনো নাজুক। টেকসই ও দীর্ঘ মেয়াদী মেগা প্রকল্প গৃহীত না হওয়ায় কাল বৈশাখীর মৌসুমে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উপক‚লীয় অঞ্চলের বাঁধ। অপরদিকে, খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের দু’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত দু’তিন দিনে জোয়ারের পানির তোড়ে কোলা গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের প্রায় একশ ফুট এলাকা ধ্বসে যাবার পর এসব গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। আর খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ নদের ঘাটখালি বেরিবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে চলতি বোরো মৌসুমের ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পাউবো, কৃষি ও মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রমতে, বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ দু’টি এলাকায় কাজ করে কোন রকম পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। এদিকে অব্যাহত নদী ভাঙনের কারণে কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, হরিনখোলা ও গোবরা পূর্বচক গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। ভাঙন রোধে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা না নেয়া হলে নদীর তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। খুলনার দাকোপের সুতারখালী নলিয়ান কালাবগী এলাকাগুলোতে যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পোল্ডার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ও সমাজসেবী আলহাজ আব্দুল মালেক ইনকিলাবকে বলেন, বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধে মানববন্ধন, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন করেও আমরা কোন সুফল পাচ্ছি না। তবে কিছু কিছু স্থানে যে সামান্য কাজ শুরু হয়েছে তাতে শেষ রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, গোটা অঞ্চলের মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ অঞ্চলের প্রধান জীবিকা মৎস্য ও কৃষি এখন হুমকির মুখে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা জানান, জোয়ারের পানির চাপে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন খোলপেটুয়া নদীর কোলা পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ সময় পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও পানি ঢুকে পড়ে। এরপরই কোলা ও হিজলা গ্রামে পানি আসতে থাকে। খবর পেয়ে সেখানে পাউবো কর্মকর্তারা, ইউনিয়ন ভূমি অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যান গেছেন। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁধ মেরামতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না আসলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে উপক‚লের ৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে।
উপকূলের নড়বড়ে বেড়িবাঁধ এখন কোটি মানুষের গলার কাঁটা। নিম্নচাপে ভাঙছেই বাঁধগুলো। গত সপ্তাহব্যাপী থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ভেঙে প্লাবিত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। ফলে ক্রমে আতঙ্কিত হয়ে উঠছে উপেক্ষিত উপক‚লবাসী।
জানা গেছে, গত ১৫ দিনে খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা তথা গোটা উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তত শতাধিক স্পটে নীচু বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বাঁধ ভেঙেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ ৮টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ।
যে কোনো সময় জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে এ অঞ্চলের ৩৫টি পোল্ডারের প্রায় ২শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। সেই আশঙ্কা নিয়েই চলতি দুর্যোগ মৌসুমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাট উপকূলের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা এলাকার লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। ১৫-২০ ফুট প্রস্থের বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর মাত্র দু-তিন ফুট অবশিষ্ট রয়েছে।



 

Show all comments
  • ash ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৫১ এএম says : 0
    KOTO HAJAR KUTHI TAKA AMON BAD KORE KHOROCH KORA HOY ??? KOY DIN TIKLO AI BAD ??? ER PORE O KENO PANI WNNOON ER CHOR BATPAR RA OI AKE VABE BALU MATI R MATI MISHANO BLOCK DIE BAD DAY?? KENO CHIKON NET BESIE DHALAI KORA HOY NA? JE VABE ONNANO DESHE KORE??? KENO JE SHOB MANGROVE GAS DIE SHUNDOR BON ROKHA HOCHE OI MANGROVE GAS BAD ER PASHE PANIR SIDE GONO KORE LAGANO HOY NA???? OI SHOB MANGROVE GAS AUSTRALIA , PHILLIPENS ER SHOB ISLAND GOLUR CHOTUR PASHE GONO KORE LAGAY !! KINTU BANGLADESHER PANI WNNOON BOARD ER CHOR GULO KALHI NODIR MATI MISHANO BLOCK BOSHAY, JETATE KONO KAJ HOY NA , KINTU ER PORE O ......RA OI BLOCK E BOSHAY
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেড়িবাঁধ

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ