Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘সরকারের ১০০ দিন উদ্যম-উচ্ছ্বাসহীন’

সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নতুন সরকারের ১০০ দিন উদ্যমহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন ছিল- এমন মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল নতুন সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নতুন সরকার যখন নতুনভাবে আসে, তখন সে বিগত সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে নতুন ধরনের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগটা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। আমি মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে যত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছে আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে) ইশতেহার সব থেকে সুচিন্তিত, সুলিখিত ও সুগঠিত।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোনো রকম দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। কিন্তু আমরা দেখছি রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে, অন্যান্য সামাজিক সেবার ক্ষেত্রে সেই দুর্নীতি প্রকটভাবে রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পরিবর্তনের, দিন বদলের। আর ওই বদলকে আটকে রাখছে এমন একটি গোষ্ঠী, যারা এই দুর্নীতি থেকে সুবিধা ভোগ করছে। সুবিধাভোগী সম্প্রদায় যেটা রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে আছে, সেটা রাজনৈতিক পরিবর্তনের শক্তিকে সামনে আসতে দিচ্ছে না। এটাকে যদি সমাধান করা না যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের সুচিন্তিত, সুলিখিত ও সুগঠিত ইশতেহার কাল্পনিক দলিল হিসেবেই ইতিহাসে স্থান পাবে। ড. দেবপ্রিয় আরো বলেন, সরকারের বিগত ১০০ দিন আমরা একটি উৎসাহহীন, উদ্যোগহীন, উচ্ছ্বাসহীন এবং একই সঙ্গে উদ্যমহীন দেখেছি। অথচ আমরা আশা করেছিলাম এটি একটি বড় ধরনের ১০০ দিনের উত্থানের ওপর প্রতিফলিত হবে। এটা আমরা লক্ষ করিনি। আমরা যেটা লক্ষ করেছি গতানুগতিক ধারাবাহিকতা। নতুনভাবে সে রকম কিছু আমরা লক্ষ করিনি, বরং যে ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখেছি, সে ধরনের উদ্যোগ মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। মিশ্র ইঙ্গিত কী দিচ্ছে? আমরা লক্ষ করেছি বিভিন্ন কর ছাড় দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখেছি সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলোর ফলে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে- এটা আমরা মনে করি না। মনে হয় যেন কোথাও সরকারকে একটি প্রোথিত গোষ্ঠী করায়ত্ত করে নীতিনির্ধারণ করছে।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় বলেন, উন্নয়নের যে ধারণা তার সঙ্গে নীতি প্রণয়নের ধারণার অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের যে ধরনের ভূমিকা, সেটা আমরা দেখতে পারছি না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য যে ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের দরকার ছিল, সেগুলোর কিছু হয়নি। এই ১০০ দিনে আমরা আশা করেছিলাম অসঙ্গতিগুলো দূর করা যাবে। আমরা সে ধরনের সচেতনতাও দেখিনি, সে ধরনের পদক্ষেপও দেখিনি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি গণনার পদ্ধতির সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখছি প্রবৃদ্ধি-নির্ভর অর্থনৈতিক আলোচনা। কেমন একটা প্রবৃদ্ধি আচ্ছন্নতা বা আকৃষ্টতা আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি। অথচ অর্থনৈতিক তত্তে¡র সাম্প্রতিককালের চিন্তা দেখলে দেখা যাবে, সকলেই বলবে প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যথেষ্ট নয়। এটা অর্থনীতি শাস্ত্রের দ্বৈতজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য মান উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিককালে জনগণের জীবনমানের বিভিন্ন সূচকের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ যে বৈশ্বিক ঐকমত্য হয়েছে, সেটিও প্রবৃদ্ধির বাইরে গিয়ে অনেক ধরনের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের ধারণাকে সামনে নিয়ে এসেছে। আমরা প্রবৃদ্ধি-নির্ভর আলোচনা করি যেন, ওই পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের আলোচনা আমাদের মনোযোগের বাইরে চলে না যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি দেখি তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উঁচু, প্রশংসনীয় এবং অনেকের কাছে ঈর্ষনীয়। তবে যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাতে ব্যক্তি খাতের বাড়তি কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। ব্যক্তি খাতে যে ধরনের ঋণপ্রবাহ বাড়ার কথা তা আমরা দেখলাম না। পুঁজিপণ্যের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের চাঞ্চল্য থাকে তা দেখছি না।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব দেশে বৈষম্য কম সেসব দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশে ঋণখেলাপি একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যার কথা সবাই স্বীকার করছেন। সরকারও স্বীকার করছেন। এটা কমিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো এটা কমাতে গিয়ে নতুন নতুন সার্কুলার জারি করে ঋণখেলাপিদের সুযোগ সুবিধা দেয়ায় আমরা পেছনের দিকে চলে যাচ্ছি। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পুঁজিবাজারে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার ও উন্নতি নেই। নির্বাচনের আগে মূল্য সূচক কিছুটা বাড়লেও পরে ধীরে ধীরে তা আগের অবস্থানে চলে আসে। তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঋণখেলাপি। এটা কমছে না, বরং দিনদিন বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ