পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আট বছরের জায়ান চৌধুরী। শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল বাবা, মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু কাল লাশ হয়ে দেশে ফিরছে ছোট হাস্যোজ্জল জায়ান। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহত জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের ঘরের নাতি। এ নিয়ে শেখ সেলিমের বাসায় চলছে শোকের মাতম।
এদিকে জায়ান মারা গেলেও আর অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তার বাবা শেখ সেলিমের জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। তবে তার দুটি পা ড্যামেজ (অকেজো) হয়ে গেছে। তিনি শ্রীলংকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সে সময় মা শেখ সেলিমের কন্যা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার আরেক সন্তান জোহানকে নিয়ে হোটেলের কক্ষে থাকায় বেঁচে যান।
গতকাল শেখ সেলিমের বনানীর ২/এ রোডের ৯ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। বাসার সামনে ও রাস্তার দুই পাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন। নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। নিহতের আত্মার মাগফেরাতের জন্য করা হয়েছে কোরআন খতম। একে একে মন্ত্রী-এমপি ও আত্মীয়-স্বজন এসে শেখ সেলিমকে সান্তনা দিয়েছেন। একেকজন আত্মীয় আসার সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। কান্নাকাটি আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। দুপুরের দিকে বাসায় আসেন জায়ান চৌধুরীর দাদা এম এইচ চৌধুরী। নাতির মারা যাওয়ার শোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসার ভিতরে নেয়ার সময় তিনি বিলাপ করে বুক চাপাড়াচ্ছিলেন আর বলছিলেন আমার ভাই কই? জায়ান কই? আমার দাদা কইরে? আমার ভাইরে এনে দাও।
এম এইচ চৌধুরী যখন বিলাপ করতে করতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করছিলেন তখন অন্য আত্মীয়-স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক কথায় বলা চলে শেখ সেলিমের পুরো বাসায় শোকের মাতম। এক একজন আত্মীয়-স্বজন আসেন আর তাকে ঘিরে কান্নার রোল পড়ে যায়। আত্মীয়-স্বজনরা বলাবলি করছিলেন ছোট্ট জায়ান ছোট থেকেই খুব মায়াবী ছিল। এ জন্য প্রত্যেক আত্মীয়ের কাছে জায়ান ছিল খুব প্রিয়।
এদিকে শেখ সেলিমের নাতির মৃত্যুর খবর পেয়েই রোববার রাত থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং মন্ত্রীরা তার বাসায় গেছেন। গত রোববার রাতে তার বাসায় যান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই দলের নেতাকর্মী ও এমপি-মন্ত্রীরা বনানীর বাসায় ভীড় করেন। শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। তবে সকাল এগারোটার আগে কেউই শিশু জায়ানের খবর নিশ্চিত করেননি।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শেখ সেলিমের বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শেখ সেলিমের জামাতা খুব বাজেভাবে আহত হয়েছেন। তার দুটো পা ড্যামেজ (অকেজো) হয়ে গেছে। অন্তত ১৫ দিন না গেলে তাকে হাসপাতাল থেকে মুভ করানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, নাশতা করার জন্য জামাতা এবং তার ছেলে জায়ান চৌধুরী ওই হোটেলে পৌঁছেছিলেন। হোটেলের নিচে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে জায়ান নিহত হয়
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ অন্যান্য নেতারা শোকাহত শেখ সেলিমকে সমবেদনা জানান।
শেখ সেলিমের আরেক ভাই শেখ মারুফ সকাল থেকে বাসায়। তিনিই সব আত্মীয়-স্বজনকে টেককেয়ার করছেন। শেখ সেলিমের বাসা থেকে বের হয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাংবাদিকদের জানান, শ্রীলঙ্কার ঘটনা খুব মর্মান্তিক। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারপরও আমরা এসেছি শেখ সেলিমকে সান্তনা দিতে। তিনি বলেন, শেখ সেলিমের নাতি জায়ান মারা গেছে কিন্তু জামাতা এখনো সেভ আছেন। তবে তার দুটি পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। আজ জায়ানের লাশ দেশে এসে যাবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শেখ সেলিমের মেয়ে সোনিয়াও এখন পর্যন্ত জানে না যে তার ছেলে নেই। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন। শ্রীলঙ্কার সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমাদের অ্যাম্বাসির লোকজন যোগাযোগ করছেন।
সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খাঁন কামাল বলেন, শ্রীলঙ্কায় হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সতর্ক আছে। তবে কোনো রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়নি। হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময়ই সতর্ক আছে। আমরা জঙ্গিবাদকে যেভাবে কঠোরভাবে দমন করেছি, তাতে মানুষও সতর্ক হয়েছে।
এদিকে গতকাল ব্রুনাই সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার ফুপাতো ভাই শেখ সেলিম। শেখ সেলিমের মেয়ে জামাই ও দুই বাচ্চা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় ছিল। সেখানে মেয়ের জামাই প্রিন্স, ছেলে সাড়ে আট বছর ওরাও গিয়েছিল.. রেস্টুরেন্টে, সেখানে বোমা পড়েছে। জামাই আহত হাসপাতালে, বাচ্চাটার এখনও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না যে সে কোথায় আছে। আপনারা একটু দোয়া করেন, যেন ওকে পাই।’ এর পরে জায়ানের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।
ব্রুনাই সফরে থাকা শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফাহিম ভাগ্নের লাশ আনতে শ্রীলংকা গেছেন। অপর ছেলে শেখ নাইম তার মাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলংকা পৌঁছেছেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।