Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শহীদী রক্তে রচিত হয় অমর কাব্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা জুমার নামাজে শাহাদত বরণকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, ভারতসহ অন্যান্য দেশের নাগরিক নামাজিদের জন্য শোকসমাবেশের আয়োজন করে সেখানে মোমবাতি জ্বালানো বা নীরবতা পালন বাদ দিয়ে তারা দাবি তুলেছে পবিত্র কাবাগৃহের আওয়াজে লাউডস্পিকারে আজান দেয়া হোক।
আজানের উচ্চারণে বিমোহিত হাজার হাজার খ্রিষ্টান ছাত্রছাত্রী যেন শোক ভুলে এক অনাস্বাদিতপূর্ব ঐশী আনন্দের স্পর্শ লাভে আপ্লুত হচ্ছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী শোক প্রকাশকারীদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে, যেসব দেশ এবার শোক প্রকাশ করেনি, তাদের আচরণ আমাদের মনে থাকবে। আর নিউজিল্যান্ডকে বলব ঘটনার উপযুক্ত বিচার করতে। নাগরিক অস্ট্রেলিয়ার, তারও দায়িত্ব আছে বিচারের। আমরা অপেক্ষা করব। যদি বিচার না হয়, তাহলে তুরস্ক এর বিচার করবে।’ এ হচ্ছে একজন অভিভাবকের বক্তব্য।
আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ন্যায়বিচার কামনা করি। পাশাপাশি মুসলিম জাতির আত্মবিশ্বাস ও মেরুদন্ড সহসাই শক্ত হবে এ আশা পোষণ করি। বিশেষভাবে মোবারকবাদ জানাই সব ধর্মের মানবিক মানুষকে। যারা ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার ওপরে উঠে আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দুঃখ ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। যারা মসজিদের পাশে এসে ফুল দিয়ে দু-ফোঁটা চোখের পানি ফেলেছেন। যারা নানাভাবে মজলুমের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ সেসব ভাগ্যবান মানুষকে, যারা এ শোককে পরিণত করেছেন ইসলাম প্রচারের শক্তিতে, ইসলামকে পশ্চিমা জগতে তুলে ধরার শক্তিতে। আর হৃদয় থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাই সেসব ভাইবোনকে, যারা এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসলাম গ্রহণ করছেন। সত্যিই এটি আমাদের শোককে ছাপিয়ে ওঠার মতো এক আনন্দ, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা সবাইকে ইসলামে স্বাগত জানাই।
মুসলমান যেখানে রক্ত দেয়, সেখানে ঈমানের ফুল ফোটে। ইতিহাস এরই জীবন্ত সাক্ষী। যে ত্যাগ আর কোরবানির ফলে, যে রক্ত ও ধৈর্যের ফলে বাগদাদ, তেহরান, কাবুল, লাহোর, মুলতান, দিল্লি, পাটনা, কলকাতা, ঢাকা, কুয়ালালামপুর, জাকার্তা আমাদের হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার, এমন ভালোবাসা ও মানবিকতার ফলে রোম, প্যারিস, মাদ্রিদ, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, নিউজিল্যান্ড, সিডনি, মেলবোর্ন, টোকিও এবং বেইজিংও যে আমাদের হবে না, তা কে বলতে পারে।
একদিন ইস্তাম্বুল, কায়রো, ত্রিপোলি, আলজিয়ার্স, মরক্কো ও তিউনিসও তো আমাদের ছিল না। এসব তো আমরা রক্ত দিয়ে, ধৈর্য ও ত্যাগের বিনিময়ে, প্রেম ও ভালোবাসার মূল্যে কিনেছি। ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর আচরণ দিয়েই পৃথিবীকে জয় করা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। অতএব, শত দুঃখের মাঝেও আমরা আশার প্রদীপ জ্বালতে জানি। হিন্দি কবির ভাষায়- তুফান কার রাহা হ্যায় ম্যারে আয্ম কা তাওয়াফ/ দুনিয়া সমঝ রাহে কেহ্ কাশতি ভোঁওর মে হ্যায়।
অর্থ : আসলে ঝড়ঝঞ্ঝা আমার সাহসিকতার তাওয়াফ করছে, দূর থেকে দুনিয়ার মানুষ ভাবছে, আমার নৌকা বুঝি ডোবার পথে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বলে গেছেন, আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি।
নিউজিল্যান্ডের এই নতুন কারবালা আসলে কারবালা নয়। এ হচ্ছে আগামী দিনের নতুন এক ইসলামী জাগরণের সূচনা। কবির ভাষায়, ‘ঝুকায়া থা সর বারে গাহে খোদা মে,/ ওহী সর কলম হো গায়া কারবালা মে।/ শাহাদাত কি মনযিল কো পায়া হে মাই নে,/মাই মুর্দা নেহী হো জিলায়া গায়া হো।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর দরবারে সেজদায় মাথা ঝুঁকিয়ে ছিলাম। এ অবস্থায়ই দুশমনরা আমার মাথা কেটে নেয় কারবালায়। আমি এতে ঠকিনি, বরং শাহাদতের মর্যাদা লাভ করেছি। এতে আমার মৃত্যু হয়নি, আমি বরং চিরঞ্জীব হয়ে গেছি। চির অমর হয়ে গেছি।
ইমাম হোসাইন রা.-এর তরফে কবির এ অভিব্যক্তি বা ভবিষ্যদ্বাণী নিউজিল্যান্ডের এ ঘটনায়ও সমানভাবে স্পষ্ট। গত ২০ বছরে দুশমনের হাতে নানা ছুতায় জীবন দানকারী পৃথিবীর দুই কোটি শহীদ আবালবৃদ্ধবনিতার ক্ষেত্রেও এ অনুভূতি কম স্পষ্ট নয়। এর বেশি আর কিছু এ মুহূর্তে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।



 

Show all comments
  • Nazim Kanon ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ OIC এর রিপোট অনুযায়ী প্রতিদিন সারা বিশ্বে গড়ে ৮৫০০ জন কালিমা পড়ে মুসলমান হচ্ছে। আল্লাহ যেন সবাইকে কবুল করেন ৷
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hasan ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
    এভাবেই পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়বে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Anik ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ একদিন মুসলিমদের নেতৃত্বেই আবার বিশ্ব পরিচালিত হবে। কারণ ইসলাম ই সত্য....
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Tafiqul ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    নিউজিল্যান্ডএ দেখছি শান্তির র্বাতা আর বাংলাদেশ এ দেখছি অশান্তির র্বাতা ।মাজার পূজায় কবর পূজায় ভরে গেছে বিদাতি কাজকাম কাজে ভরে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    নিউজিল্যান্ড যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এ বিষয়টিকে ইসলামের পুনর্জাগরণ বলা যেতেই পারে। দেশটির ন্যায়সঙ্গত শক্তিশালী ভূমিকায় ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীরা কড়া জবাব পেয়েছে। মুসলমানদের সম্পর্কে সেখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী মোঃ মাঈনুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    সুবহানাল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন