বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
খুনি চেয়েছিল লাইভে দেখিয়ে সারা দুনিয়ায় দাঙ্গা বাধাতে। মুসলমানদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে। সংখ্যালঘু এলাকায় মর্মাহত মুসলমানদের বিক্ষোভে জড়িয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে হত্যা করতে। কমপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে অসহায় খ্রিষ্টানদের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার মতো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। কিন্তু খুনি বা তার নেপথ্যের সহায়ক শক্তি তাদের সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। খুনি গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলা ও বিচারের মুখোমুখি হবে। ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়েছে। তার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রভাবশালী নেতা পচা ডিম খেয়েছেন। ডিম কোনো মুসলমান মারেনি। মেরেছে বিবেকবান একজন মানুষ। পরিচয়ে খ্রিষ্টান এক তরুণ। সে এখন হিরো।
আরো ডিম কেনার জন্য পশ্চিমের খ্রিষ্টানরাই তাকে এক দিনে ৪৫ হাজার ডলার চাঁদা তুলে দিয়েছে। তরুণ এ টাকা শহীদ মুসলমানদের পরিবারকে দিচ্ছে। মিডিয়ায় এসেছে, পশ্চিমের তরুণীরা প্লে-কার্ড নিয়ে মিছিল করছে, ‘আমরা এই ডিম তরুণকে বিয়ে করতে চাই।’ এসব বিবেকের সাড়া। মানবতার ভাষা। গোটা পৃথিবী এখনো কেবল অন্ধদের হয়ে যায়নি। উগ্রদের হয়ে যায়নি। খুনিদের তো নয়ই।
দুই কোটি মুসলমানের রক্ত বৃথা যাবে না। মিথ্যা প্রচারণার একতরফা লড়াই আর বেশি দিন চলবে না। ৫০ জন নামাজির শাহাদত খুব দ্রুতই অন্তত ৫০ কোটি হৃদয় জয় করবে। ইনশাআল্লাহ উপমহাদেশের সংগ্রামী আলেম মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহরের ভাষায়, ‘ক্বাতলে হুসায়ন আসল ম্যা মরগে ইয়াযীদ হ্যায়।/ ইসলাম যিন্দা হো তা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ।’
নিউজিল্যান্ড এক নতুন কারবালা। পশ্চিমা বিশ্ব আজ ইসলামের নতুন বিজয়ভ‚মি। নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ এ ঘটনাকে তাদের জাতীয় শোক হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এক ঐতিহাসিক মানবিক ভ‚মিকা নিয়েছেন। তিনি আরবী ভাষা ও ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করে বক্তৃতা করেছেন। এমন যুক্তিগ্রাহ্য ও দরদি কথাবার্তা বলেছেন, যা শুনে বিশ্ববাসীর মনে ইনসাফ, অসাম্প্রদায়িকতা ও দায়িত্বশীলতার অর্থ ও মর্ম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পার্লামেন্টে তিনি নামাজের জায়গা করে দিয়েছেন।
পার্লামেন্ট অধিবেশনে এবারই প্রথম পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা নিযামুল হক থানভী সাহেবকে দিয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করিয়েছেন। যিনি মাওলানা ইহতেশামুল হক থানভীর পুত্র। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর ভাগ্নের দিকের নাতি। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে মসজিদে স্থানীয় খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ মানববন্ধন করে মসজিদ ঘেরাও দিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘মুসলিম ভাইয়েরা, আপনারা নিশ্চিন্তে নামাজ পড়–ন। আমরা পাহারায় আছি।’ এ দৃশ্য আরো পশ্চিমা শহরে দেখা গেছে।
এ ঘটনার পরপরই নিউজিল্যান্ডে একই বৈঠকে ৩৬০ জন নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের ধারা চলছে। মেলবোর্নে যুবা তরুণ-তরুণীরা মিছিল বের করে বলছে, ‘নো ফিয়ার, উই ওয়েলকাম মুসলিম্স।’ লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে হাজারো খ্রিষ্টান নারী-পুরুষ একত্র হয়ে আজানের আওয়াজ চালু করে মুসলমানদের শোকের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।
সারা বিশ্বের কোথাও কোনো দাঙ্গা হয়নি। মুসলমানরা কোনো অমুসলিমের গায়ে হাত দেয়নি। ইসলামে এমন নিয়ম নেই। দুনিয়ার সব মুসলমান মেরে ফেললেও নির্দোষ কোনো খ্রিষ্টানকে কেউ ফুলের টোকাটিও দেবে না। আর ভয় পাওয়ার প্রশ্ন, সে তো বহুদূর। খুনি ভেবেছিল, নিউজিল্যান্ডে বোধহয় আর নামাজ হবে না। পাশ্চাত্যে বোধহয় আজান ও জামাত বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু কী আশ্চর্য, নির্বোধেরা বোঝে না যে, রণাঙ্গনেও মুসলমানরা নামাজ বাদ দেয় না। মৃত্যুর মিছিলেও জামাত চালু থাকে। বোমা বর্ষণ আর ধ্বংসলীলায়ও আজান ধ্বনিত হয়। যার জন্য সেজদা করা, তার জন্যই জীবন দেয়া। যার জন্য বেঁচে থাকা, তার জন্যই আবার সেজদা করা। এই তো জীবনের সার্থকতা।
এরপর থেকে নিউজিল্যান্ডের ওই দুই মসজিদসহ বাকি সব মসজিদ এবং পশ্চিমের বহু মসজিদে নামাজ দেখার জন্য নানা ধর্মের নারী-পুরুষ মসজিদে জামাত চলাকালীন ভিড় করছে। অনেক মসজিদে দেখা গেছে, নামাজের কাতারের পেছনে আবালবৃদ্ধবনিতা বসে আছে। কেউ আবেগে কাঁদছে। অনেকে আবার নামাজের মতো উঠাবসা, রুকু, সেজদা করছে। নামাজ শেষে মুসলমানদের কাছে এসে কালেমা পাঠ করছে। মাথায় স্কার্ফ পরে কালেমা শাহাদত উচ্চারণ করছে।
ঘটনার পরের জুমায় প্রধানমন্ত্রী নিজে তার রাষ্ট্রীয় লোকজনসহ দাঁড়িয়ে থেকে উন্মুক্ত ময়দানে জুমার নামাজ প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই বিখ্যাত হাদিস উদ্ধৃত করে বক্তব্য রেখেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ঈমানদাররা একটি দেহের মতো। যার একাংশে আঘাত এলে সারা দেহ ব্যথা অনুভব করে। সারা দেহে জ্বর আসে। সেদিনটিতে তিনি নারী কর্মকর্তাদের স্কার্ফ পরার নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রীয় টিভি জুমার আজান ও নামাজ লাইভ প্রচার করে। শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ আয়াতাংশ খচিত স্মৃতিসৌধ। সত্যিই নিউজিল্যান্ডের নেত্রী ও তার দেশের নাগরিকরা মানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করছেন। অন্তর থেকে দোয়া করছি, তাদের যেন আল্লাহ হেদায়াতের পরম সৌভাগ্যের শেষ দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এ যেন ইসলামকে ভালোবাসার এক নতুন জোয়ার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।