বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী তাদের জীবনসঙ্গীর দ্বারা কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার হন। পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতির পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের সমান। অর্থাৎ নারী নির্যাতনের কারণে এই ক্ষতি হয়। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট-২০১৯ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ।
‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইসিডিপি ইন বাংলাদেশ ওভারভিউ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আশা তর্কেলসন। তিনি বলেন, কাজ করছেন এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ। কমেছে বাল্য বিয়ে। স্কুলগামীদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। প্রাথমিকে মেয়ে শিশু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। মাধ্যমিকেও কন্যা শিশুর অংশগ্রহণের হার বেড়েছে, তবে শিক্ষাক্রম শেষ করার হার এখনো খুব কম। আর তরুণদের মধ্যে কর্মহীনদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। সংসদে ২০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ২৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশে নারীরা সমাজে নিম্ন মর্যাদার, পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। মূলত এটাই ঘরে-কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, পাচার, এসিড নিক্ষেপ এবং বাল্য বিয়ের জন্য দায়ী। দেশে পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতির হার খুব বেশি।
ড. আশা তর্কেলসন বলেন, শুধু করণীয় নির্ধারণ করলেই হবে না, পলিসি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মেয়ে ও মহিলাদের সকল দিক থেকে সমান সুযোগ দিয়ে তাদের জীবনের সুরক্ষা দিতে হবে।
ইউএনএফপিএ তাদের রিপোর্টে জানায়, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে ষাটের দশকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক আন্দোলন নিজের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বদলে দিয়েছিল শত লক্ষ নারীর জীবন। ইউএনএফপিএ, জাতিসংঘের যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য এজেন্সি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৫০ বছরে সব অরজনের পরেও সকল মানুষের অধিকার এবং পছন্দ নিশ্চিত করতে পৃথিবীকে এখনও যেতে হবে অনেক দূর।
উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৯ সালের পর থেকে অনেক অর্জন হয়েছে। নারী প্রতি জন্মহারের গত সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৮। বর্তমানে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫। গর্ভধারণ সম্পর্কিত কারণে মৃত্যুবরণ করে এমন নারীর সংখ্যা প্রতি লাখে ৩৬৯ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২১৬ জন। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যাও ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ। তবে এখনো বিশ্বের ২০ কোটি নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সেবা থেকে বঞ্চিত।
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার তাগাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ড বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আসা টরকেলসন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে। মিয়া সেপ্পো বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ড এমন একটি ঘটনা যা বাংলাদেশের নারীর প্রতি সহিংসতার নানা দিক স্পষ্ট করে দিয়েছে। নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকান্ড এমন একটি ঘটনা যা বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মমতা রয়েছে। যেমন সেখানে নুসরাতকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। নির্মমতার আরেকটি বিষয় হলো, এদেশে সহিংসতার শিকার একটি মেয়ে সাহস করে প্রতিবাদ করলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কী হয়। পরিণতি হয় নুসরাতের মতো আরো বেশি সহিংসতার শিকার হওয়া এবং শেষমেশ মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। এ ঘটনায় আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলো নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রত্যেককে নিশ্চিত করতে হবে দোষীরা যেন বিচারের বাইরে না থাকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান বলেন, সোনাগাজীর সেই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এবং তার সহযোগীরা, অন্যদিকে নুসরাত হত্যাকান্ডের আরেক অভিযুক্ত যিনি কি না সোনাগাজী আওয়ামী লীগের নেতা কেউই সরকারের নেওয়া কঠোর ব্যবস্থার বাইরে থাকছে না।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, ড. বারাকাত-ই-খুদা, ড. মুজাফফর আহমেদ, সোহেলি পারভিন প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।