পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘মর্নিং শোস দ্য ডে’। সকালের সূর্যই নাকি বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে? তেমনি সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায় এই সরকারের ৫ বছরে মেয়াদ কেমন যেতে পারে। বাংলাদেশে একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা যিনি টানা তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাঁর তৃতীয়বারের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও ২০১৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তেমন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। আওয়ামী লীগের ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে ‘প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি’ও প্রতিশ্রুতি ছিল না। তবে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দেয়া নিয়ে গুরুত্বর অভিযোগ এবং নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় পুরানো অভিজ্ঞ ৩৬ জনকে বাদ দিয়ে নতুন ৩১ জনের অন্তর্ভুক্তির ‘চমক’ দেখে মানুষ ধরে নেয় কাজের মাধ্যমেই সরকার ‘সব বিতর্ক ম্লান’ করে দেবে। এমন প্রত্যাশা অমূলক নয়। সরকার কি সেটা পেরেছে? জনবান্ধব প্রশাসন, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা, মানবাধিকার সুরক্ষায় কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?
বিশ্বের বহুদেশে নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রম নির্ধারণ ও মূল্যায়ন নতুন কোনো ঘটনা নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্টের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালের ৪ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন। অতপর বহুদেশে দেখা গেছে দেশেই রাষ্ট্র নেতারা তাদের সরকারের দিশা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ‘প্রথম ১০০ দিন’ বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। শেখ হাসিনার সরকার তৃতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর এবার তেমন কিছু প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও পর্দার আড়ালে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা কে কেমন করছেন, কার মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি কতটুকু তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কর্মদক্ষতার পুনর্মূলায়ণের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সংসদে অনুগত বিরোধীদল গঠন করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আনপ্রেডিক্টেবল এইট এম এরশাদ ধানাইপানাই টেকল দিতে আগাম বিকল্প হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুদের বিরোধী দলে রাখা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় গত ৭ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ৬টি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৩৬টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যা ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক কম। গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২টি নীতি বা কর্মকৌশল এবং একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ৫টি। ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় ভারতীয় চ্যানেলে বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ভূমি, নৌ-পরিবহন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কাজের হিসাব নেয়া প্রয়োজন। এবার সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনেক নতুন মুখ এসেছে। তিন মাসে কাজের মূল্যায়ন করা অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর যে পর্যবেক্ষণ সেটাকে তিনি আরও নিবিড় করবেন। এতে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। ৭ জানুয়ারি নতুন সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নেন। এখন সরকারের ১০০ দিন মেয়াদের মধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কেমন করছেন সে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে কয়েকজন বিতর্কিত মন্ত্রীর কারণে বিব্রত হওয়ায় এবার মন্ত্রীদের সবাই ওপর কঠোর পর্যবেক্ষণ চলছে। সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের দৃষ্টিতে সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের অনেকেই মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বাড়াতে উদ্যোগী ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা নীরবে কাজ করে চলেছেন। অনেকের কাজ প্রশংসিতও হচ্ছে। তবে কোনো কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ক্ষেত্রে কাজের কিছুটা ছন্দপতন দেখা গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহানুভুতি ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তেমন সাফল্যের দেখা নেই। কিছু মন্ত্রণালয়ের কাজ দেখা গেছে গতানুগতিক। গত ২১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় মন্ত্রিসভা সদস্যদের হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেছেন, ‘অর্থ, বিত্তবৈভব সবই করতে পারবেন। কিন্তু পচে যাবেন। নিজেদেরকে কোনো রকম অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়াবেন না। সবার খবর আমার কাছে আছে’। তাঁর ওই বক্তব্যের পর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য সতর্ক হয়ে যান। নতুন সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড দেখতে মন্ত্রণালয়গুলো পরিদর্শন শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।
সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। রাজধানী ঢাকার যেদিকে চোখ যায় শুধু উড়াল সেতু আর উড়াল সেতু। ভুল নকশায় উড়াল সেতু নির্মাণ করায় সেখানেও যানজট। মেট্রোরেলসহ অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে; হাজর হাজার কোটি টাকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু পদ্মাসেতু ছাড়া অধিকাংশ বড় প্রকল্পের কাজে দেখা যাচ্ছে মন্থর গতি। এই ১০০ দিন সময়েই হয় মন্থরগতি। ঢাকা শহরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে এতোগুলো ফ্লাইওভার করা হয়েছে; অথচ সাধারণ মানুষ খুব বেশি সুবিধা পাচ্ছে না। ঢাকার চারপাশে নদীগুলো বাঁচানোর জন্য উচ্ছেদ অভিযানে সাফল্য দেখালেও রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে পারেনি। এক ঘণ্টার বৃষ্টি হলে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হয় কোমড় পানি। অথচ একবছর আগেও দেখা যেত হাঁটুপানি। সরকারের মেয়াদের ১০০ দিন পূরণ হওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ২৮ বছর পর সরকার এই নির্বাচন সরকারের কৃতিত্ব; তবে সেখানে ছাত্রলীগের ব্যালট বাক্স দখল, রাতের আধারে ভোট দেয়ায় উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসকে করেছে কলঙ্কিত। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে নাড়া দিয়েছে। সরকার যার বাহনে শৃঙ্খলা এনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি কমেনি বরং বেড়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সরকার রাজধানীতে পরীক্ষামূলক সার্কুলার রুটের বাস চালুর ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী মাসে মাত্র ৬ রঙের বাস চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমকরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় তাদের সিন্ডিকেট দুর্বৃত্তপনা রোধ করতে পারেনি। বরং বিতর্কিত ব্যক্তি সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিনের ঘটনাক্রম স্বস্তিদায়ক নয়, বরং সুপ্ত সঙ্কটের আলামত বৈকি। নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ‘ভোটের বক্স ভর্তির’ করার মতো অভিযোগে প্রতিবাদী হয়ে উঠে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট এ নিয়ে দফায় দফায় গণশুনানি করে। সেখানে রাতের আধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভোট দেয়ার সুনিদৃষ্ট চিত্র উঠে আসে। যা দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। এ সময় ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক জাসদের একাংশের নেতা শরিফ নুরুল আম্বিয়া ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সীল মারার কথা স্বীকার করে বক্তব্য দেয়। যা নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সরকারের বিজয়ী হওয়াকে তীরবিদ্ধ করে। অতপর নির্বাচন কমিশন এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কথাও প্রকাশ পায় ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে নৌকায় সীল মেরে বাক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ‘রাতের ভোট’ দেয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে তিনি নানান পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যদিও আগে থেকেই এই অভিযোগ করেন। বাস্তবেও দেখা যায় নির্বাচনের প্রতি আস্থাহীনতায় কারণে দেশের মানুষ কার্যত নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও দফায় দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সে চিত্র দেখা গেছে। জনগণকে ভোট বিমুখ হওয়ার মতো ঘটনা এই সরকারের শাসনামলে ১০০ দিনের মধ্যে ঘটেছে।
বিশ্বে নতুন নতুন শ্রম বাজার খোঁজার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তা সফল হয়নি। বরং মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের শ্রমিক নেয়া কমে দিয়েছে। আবার রেমিট্যান্স আয়ের অন্যতম উৎস গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও ছাঁটাই বন্ধের আন্দোলনের সমস্যা, যৌক্তিক ও মানবিক সমাধান হয়নি। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে নতুন বিনিয়োগ আসছে, চীন বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে, বাণিজ্য বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু বিদেশ শ্রমিক প্রেরণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। বিদেশে নারী শ্রমিক হেনস্তার যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তা দেশের নীতি নৈতিকতার ভীত ধরে টান দিয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা শোচনীয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেলেও বাজার নিয়ন্ত্রিত। শেয়ারবাজারে চীনা বিনিয়োগের পর যারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন; শেয়ারবাজারের অব্যাহত অধঃপতনে সেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মেয়াদে সরকার গঠনের পর ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি সেবা খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বত্র আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ’ করবেন। বাস্তব চিত্র কি চিত্র দেখছে মানুষ? গতকালও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, দেশে বিচারহিনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় বিচারকরাই এখন বিচারে আস্থা পান না। ফেনীতে যে আলিম পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের পৈচাসিক ঘটনা ঘটেছে; তার পিছনে যারা তাদের একজন জামায়াতের হলেও অন্যরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যত সংঘাত সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটেছে তা আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মী। একের পর এক যে পৈচাসিক ঘটনা ঘটছে তা কয়টির বিচার হয়েছে? অপরাধীদের কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছে ক্ষমতাসীন দলের কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হয় না। ইদানিং অগ্নিকান্ডে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। সব ঘটনার পর তদন্ত টীম গঠন করা হয়। কয়টি তদন্তের খবর মানুষ জানতে পায়? আর কয়টি তদন্তের পর অপরাধীদের বিচার হয়?
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ গড়তে ইশতেহারে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় করে সরকার। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ইসতেহারে ২১ দফা অঙ্গীকার করে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির সামনে তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন তুলে ধরা হয়। কিন্তু মাঠের চিত্র?
ইনবিলাবের সচিবালয় বিটের রিপোর্টারের অনুসন্ধানে যে চিত্র উঠে এসেছে তা এমন :- সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা না দিলেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের ১০০দিনের কার্যক্রম দেখতে চান। সেটা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কার্যক্রমে দেখা যায় অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের মন্ত্রণালয়ের ভাল কাজ করেছেন। আবার যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কাজ দেখাতে পারেনি তাদেরকেও বার বার শর্তক করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যে সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ও অগ্রগতি দেখা গেছে সেগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভুমি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ,বানিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যেসব মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করতে পারেনি বা অগ্রগতি কম এমন মন্ত্রণালয়ের তালিকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত কিছু করে দেখাতে হবে। প্রথম তিন মাস কিংবা ১০০ দিনের মধ্যে সরকারের এমন কিছু কর্মসূচি নেওয়া উচিত ছিল যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার সম্পর্কে ভালো ধারণা জন্মায়।
৫ বছর মেয়াদের বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে সামনে বিশ্লেষণ হবে। তবে সামনে পড়ে রয়েছে আরো বিস্তর সময়। সেই সামনের সময়গুলোতে কি করবেন সেটাই দেখার জন্য দেশবাসীর অপেক্ষার পালা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।