বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বর্তমান বিশ্বে শান্তির দেশ বলে খ্যাত নিউজিল্যান্ডে এক নির্মম ঘটনায় বিশ্বের মানুষ হতবাক। সন্ত্রাস, অশান্তি, সঙ্ঘাত, জুলুম ও যুদ্ধের বাতাবরণে পৃথিবী আজ অনেকটাই অশান্ত। গত ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী অমুসলিমদের হাতে নানা অজুহাতে প্রায় দুই কোটি মুসলমান নিহত হয়েছেন বলে পশ্চিমাদের পরিসংখ্যানেই পাওয়া গেছে। যদিও প্রচারণার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা গোষ্ঠী দুনিয়াজুড়ে প্রচার দিয়েছে, মুসলমানরাই সন্ত্রাসী।
নাইন-ইলেভেন থেকে শুরু হওয়া অপপ্রচার, সাজানো নাটক, পেন্টাগনের মোটা টাকায় ব্রিটিশ ফার্মের মিথ্যা ফুটেজ তৈরি করে মুসলমানের বদনাম করা, ওয়ার অন টেররিজম নামে ক্রুসেড পরিচালনা ইত্যাদি সবই পৃথিবী দেখেছে। দেখেছে গণতন্ত্রের নামে লিবিয়া, ইরাক তছনছ করে দেয়া। মিসরে সেনা শাসন এনে পরিবর্তনকামী মুসলিম যুবক, তরুণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নির্মূল করে দেয়া।
গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাস দমনের ছুতায় সিরিয়াকে যতভাবে পারা যায়, যতজনে পারা যায় বোমা বর্ষণ করে করে তামা করা হয়েছে। স্বাধীনতা রক্ষার আফগান জিহাদ শেষ হয়েও হতে পারল না। আগ্রাসী সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করে আবার পশ্চিমা শক্তির ভোল পাল্টে যাওয়ায় আফগান নাগরিকরাই গণ্য হলো সন্ত্রাসী বলে। পশ্চিমাদের তৈরি স্বাধীনতাকামী সমরশক্তি পরে হলো মহাসন্ত্রাসী।
ন্যাটো মিত্রবাহিনী বহু বছর পর তাদের সকল হিংস্রতা ও হত্যাযজ্ঞ শেষে এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থায় আছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানে চেনা-অচেনা সন্ত্রাসীরা নিজেরা মরে এবং মেরে দেশটাকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
শিয়াদের একতরফা সমর্থন দিয়ে পশ্চিমা পলিসি ইয়েমেন, সিরিয়ার প্রায় সব এলাকা আর বৃহত্তর ইরাককে ধ্বংস করে দিয়েছে। জানা নেই কাদের তৈরি আইএস গোটা মধ্যপ্রাচ্যে কেবল ইহুদি-খ্রিষ্টান-শিয়া ছাড়া শুধুই সুন্নি মুসলমানদের হত্যা করল। তাদের নাটের গুরুরা ছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী দেশি-বিদেশি যোদ্ধাদের এনে হত্যা করল। প্রকৃত জিহাদি কার্যক্রমের বদনাম করল। ইসলামের অন্যতম ফরজ জিহাদকে একটি গালিতে পরিণত করল।
ফিলিপাইনে, থাইল্যান্ডে মুসলমানদের মারা হলো। চীনের উইঘুর মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতন অবাধ গতিতে চলছে। ভারতজুড়ে মুসলমানদের ওপর উগ্রতার অভিশাপ জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে। ৭০ বছর ধরে কাশ্মীর হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের বাংলাদেশ।
তাদের স্বাধীনতা আন্দোলন যদি বৈধ নাও হয়, তাহলে ভারতের উদারতা, গণতন্ত্র ও মানবিকতা কেন ব্যর্থ হয়ে গেল? দমন, নির্যাতন ছাড়া কি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশেও ৯২ ভাগ মুসলমানের ঈমানী দাবি উপেক্ষা করে গণবিরোধী মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার নানা পাঁয়তারা অহরহই চলে। এককথায় গোটা বিশ্ব আজ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ।
অশান্তিময় এ জগতে ঈমানদাররা বহু দুঃখ, কষ্ট, বেদনা ও বঞ্চনা নিয়েই দিন গুজরান করছে। তুলনামূলক মানবাধিকার ও শান্তির পরিবেশ ছিল নিউজিল্যান্ডে। এর আগে আমেরিকার নানা শহরে, অস্ট্রেলিয়ার বহু জায়গায়, এমনকি জার্মানি, লন্ডন, প্যারিসেও মুসলিম নারী-পুরুষরা তাদের পোশাক বা চলাফেরার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত, এমনকি হামলার শিকার হয়েছেন।
সবুজ-শ্যামল, বিস্তীর্ণ মাঠ ও অবারিত প্রকৃতির লীলাভ‚মি নিউজিল্যান্ড যখন শান্তির জন্য খ্যাতি কুড়িয়েছে তখন এ যুগের কুখ্যাত নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতবাদে বিশ্বাসী শ্বেতাঙ্গ প্রতিক্রিয়াশীল খ্রিষ্টান জঙ্গি (তার নাম আমাদের লেখায় আনব না। কেননা, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, কট্টরপন্থী, উগ্রবাদী, খুনির নাম আমরা উল্লেখ করতে চাই না। আমরা নাম নেব, যারা সেদিন জুমার নামাজ পড়া অবস্থায় শহীদ হয়েছেন।)
গত ১৫ মার্চ ২০১৯ জুমার নামাজ চলাকালে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে লাইভ ক্যামেরা চালু করে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে পাশবিক কায়দায় চরম নিষ্ঠুরতায় এক এক করে গুলি করে দুই মসজিদে মিলিয়ে ৫০ জন নামাজিকে শহীদ করে। মারাত্মক আহত হন ১১৭ জন। ভয়-আতঙ্কে ও হালকা ট্রমা আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সব মুসল্লি। নির্দোষ, নিরপরাধ, নিরীহ মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডের পবিত্রতম স্থান মসজিদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।