Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাব্যতা হারাচ্ছে যমুনা

বঙ্গবন্ধু সেতুর নিচে যমুনার বুক এখন ফসলে ভরা বড় বড় ফেরি বাঁধার স্থানে রাখা হয়েছে গরু-মহিষ

মো. আতিকুর রহমান মামুন ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

দেশের বড় নদীগুলোর অন্যতম যমুনা। জামালপুর থেকে শুরু হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জের বুক চিরে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের গোয়ালন্দে পদ্মায় মিলেছে যমুনা। এক সময় যমুনা নদীতে চলতো বড় বড় স্টিমার, জাহাজ, লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান। কিন্তু কালের বির্বতনে প্রমত্তা যমুনা তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃত প্রায়। 

নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে একদিকে যেমন বাস্তুহারা করছে চরাঞ্চলের মানুষকে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে যমুনা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালের আগেও যমুনার পূর্ণ যৌবন ছিল। কিন্তু দেশের সর্ব বৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর যমুনা নদী অস্তিত্ব হারাচ্ছে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর তলদেশে এখন চাষাবাদ হচ্ছে বোরো ধান। শত শত একর জমিতে শোভা পাচ্ছে বোরো ধানের চাষ।
সেতুর উত্তরাংশ টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরের অর্জুনা, গাবসারা, ফলদা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই নদী। এককালে অথৈ পানিতে থৈ থৈ করা নদী পৌষ থেকেই শুকিয়ে মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচরে রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে টাঙ্গাইল দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদী। ফেরি ও যন্ত্র চালিত নৌকার মাধ্যমে নদী পাড় হয়ে উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের এটাই ছিল একমাত্র অবলম্বন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর হাট গোবিন্দাসী গরুর হাট জমে উঠেছিল যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নৌ-পথে গরু আসত এ হাটে। হাটটির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। যমুনার নাব্যতা কমে যাওয়ায় হাটটিও যেন মরে গেছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
যমুনার মাছ সারা দেশে সমাদৃত। এখানে পাওয়া যেত ইলিশ, বোয়াল, চিংড়ি, পাবদা, গোলসাসহ নানা প্রজাতির মাছ। নদীর নাব্যতা কমায় দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা অন্য পেশা ধরেছেন। জেলে ইউসুফ আলী বলেন, ‘কি আর কমু খারি ভর্তি মাছ ধরতাম। আজ খালই এর তলাই ভরতে পারি না। নদীতে পানি থাকে না এবং সঠিক সময় পানি আসেও না, তাই মাছও আসে না। বর্তমানে এ নদীতে মাছের খুব আকাল’।
যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দূর পাল্লার যাতায়াত সহজ হলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। নদী তীরবর্তী টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের লোকজন যেখানে নৌকায় চড়ে বাড়ির ঘাটে উঠা-নামা করতেন, সেখানে বর্তমানে মাইলের পর মাইল হেটে চলাচল করতে হয়। বর্ষা ছাড়াও যমুনায় সারা বছর পানি থাকতো সেখানে এখন ধু-ধু বালুচর।
নৌকায় অল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতে যে সুবিধা মানুষ ভোগ করতো সেখানে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। নৌকার মাঝি রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ‘প্রমত্তা যমুনা আজ হাহাকার বালুচর। অতিরিক্ত স্রোতের কারণে এই নদীতে নৌকা বাইতে সাহস পাইতাম না। এখন নৌকার হালও ধরতে হয় না। এমন অবস্থা যমুনার। কি নদী ছিল আর কি হয়ে গেছে। যে ঘাটে বড় বড় ফেরি বাঁধা থাকত সেখানে গরু বাঁধা থাকে’।
যমুনার নাব্যতা কমে যাওয়ায় এখন প্রায় পানি শুন্য। জেগে উঠা চরগুলোতে চাষাবাদ করছে চরাঞ্চলের চাষিরা। ফলে এখানে লোকজনের বসতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। এর সঙ্গে গড়ে উঠেছে গরু-মহিষের খামার। এতে পাল্টে যাচ্ছে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলের অর্থনীতি।
২০ বছর আগেও যমুনার তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। তখন কেউ চিন্তাও করতে পারেনি যমুনার বুকে এক সময় চাষাবাদ হবে। কিন্তু যমুনা নদীতে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ তৈরি হওয়ার পর থেকে এর নাব্যতা কমতে থাকে। যমুনার বুক এখন ফসলে ভরা। জেগে উঠা বালুচরে এখন উঠতি বোরো ধানের শোভা পাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যমুনার হারানো গৌরব ফেরাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ