Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কৃত্রিম জীববিদ্যার অঙ্গীকার ও ক্ষতি

জীবন ঢেলে সাজানো

দি ইকনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিগত ৪শ’ কোটি বছর বা এ রকম সময় ধরে পৃথিবীতে প্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ডিএনএ পরম্পরার জিন উৎপাদন যা ইতিমধ্যে হাতে থাকা পরম্পরার অনুকৃতি। কোনো কোনো সময় এ জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বা সংঘর্ষের কারণে অনুকৃতি সঠিক হত না বা তার পুনরাবৃত্তি ঘটত। তবে তার আড়ালে জিন জিনই থেকে যেত।
এটা আর সত্য নয়। এখন আঁচড় থেকেও জিন লিখিত হতে পারে এবং ওয়ার্ড প্রসেসরের টেক্সটের মত বারংবার সম্পাদিত হতে পারে। এর জীবিত বস্তু পরিচালনার সক্ষমতা মানুষ যে পন্থায় গ্রহের প্রাণিকুলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে তার মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা ব্যবহার করা কঠিন, এমনকি অসম্ভব সব জিনিস তৈরির অনুমোদন দেয়।
ফার্মাসিউটিক্যালস, জ্বালানি, ফ্যাব্রিক্স, খাদ্য, সুগন্ধি সব কিছুই অণুর পর অণু দিয়ে তৈরি হতে পারে। কোষসমূহ কী করে ও কী করতে পারে তাও পরিচালনযোগ্য। ইমিউন কোষগুলোকে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসরণের জন্য বলা যেতে পারে। স্টেম সেলগুলো নতুন টিস্যুতে পরিণত হওয়াই ভালো। নিষিক্ত ডিমসমূহকে সেগুলোর পিতামাতার মত না করে অন্য কোনো প্রাণি হিসেবে জন্মানোর কর্মসূচিতে আনা।
এ ধরনের ‘সিনথেটিক বায়োলজির’ প্রাথমিক স্তর ইতিমধ্যেই বহু শিল্প প্রক্রিয়া পরিবর্তন করছে। ওষুধের রূপান্তর ঘটাচ্ছে এবং ভোক্তা বিশে^ পৌঁছতে শুরু করেছে। অগ্রগতি ধীর হতে পারে। কিন্তু নতুন যন্ত্র ও যন্ত্রশিক্ষার বিরাট ব্যবস্থা, জৈব উৎপাদন শেষ পর্যন্ত প্রকৃতই প্রযুক্তির প্রাচুর্যে রূপ নিতে পারে। কৃত্রিম কাঠ বা প্রবাল থেকে ভবন নির্মাণ হতে পারে। কৌশলকৃত হাতির কোষ থেকে উৎপাদিত অতিকায় প্রাণিরা সাইবেরিয়া দাপিয়ে বেড়াতে পারে।
সম্ভাব্য পরিবর্তনের মাত্রাটা উপলব্ধি করা কঠিন। তবে ইতিহাসের পিছনের দিকে দৃষ্টিপাত এবং প্রাণিজগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক থেকে তিনটি বিশাল রূপান্তর লক্ষ্য করা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি শোষণ, ইউরোপীয়দের আমেরিকা জয়ের পর বিশ্ব ব্যবস্থার বিশ্বায়ন এবং কৃষির প্রথম পর্যায়ে ফসল ও প্রাণির সম্পর্কীকরণ।
সব মিলে সমৃদ্ধি ও উন্নতি আনে। কিন্তু ক্ষতিকর পাশর্^প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কৃত্রিম জীববিজ্ঞান অনুরূপ রূপান্তরের অঙ্গীকার করে। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও ক্ষতি কমিয়ে আনার বিষয়টি অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেখায়।
নতুন জীববিজ্ঞান সবকিছুকে সন্দেহজনক বলে
এ সব পূর্ব পরিবর্তনের সর্ব সাম্প্রতিক বিষয় দিয়ে শুরু করলে দেখা যায়, কয়লা তেলে সঞ্চিত জীবাশ্ম জ্বালানি অতীতের জৈব উৎপাদন ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বর্তমানে মানুষকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটাতে সক্ষম করেছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে অরণ্য হারিয়ে গেছে এবং কোটি কোটি বছর আগে বায়ুমন্ডল প্রত্যক্ষকারী কার্বন অণু গ্রহের গ্রীন হাউস প্রভাবকে এমন মাত্রায় শক্তিশালী করেছে যে তা বিপর্যয়কর প্রমাণিত হতে পারে।
এখানে কৃত্রিম জীববিদ্যা ভালো করতে পারে। পেট্রোকেমিক্যাল কিছু পণ্যের জায়গায় এটা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ে কোনো কোনো জ্বালানির স্থলে তা ব্যবহৃত হতে পারে। এ সপ্তাহে বার্গার কিং তাদের কিছু রেস্তোরাঁয় গরুর গোশতবিহীন এক হপার চালু করেছে যা প্রকৌশলায়িত উদ্ভিদ প্রোটিন থেকে গোশতের স্বাদ দেবে। এ ধরনের উদ্ভাবন পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করা খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। সে সাথে এসব অল্পে বেশি ফল পেতে ব্যবহৃত হতে পারে। উদ্ভিদ ও তাদের মাটির জীবাণু নিজেদের সার ও কীটনাশক তৈরি করতে ও কম পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে সহায়ক হতে পারে।
বিশ্বে ব্যাপক হারে জৈব পরিবর্তনের দ্বিতীয় উদাহরণ হচ্ছে কলম্বিয়ান পরিবর্তন যাতে ১৬ শতকের বাণিজ্যের নতুন বিশ্ব নেটওয়ার্ক নতুন ও পুরনো পৃথিবীর প্রাণি বিনিময় করেছে। ঘোড়া, গবাদিপশু ও তুলা আমেরিকায় প্রবেশ করে। ভুট্টা, আলু, মরিচ ও তামাক প্রবেশ করে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায়। মানুষ যে প্রতিবেশে বাস করত তা বিশ্বায়িত হয় যা আগে কখনোই হয়নি।
আরো উৎপাদনক্ষম কৃষি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ উন্নত খাবার গ্রহণ শুরু করে। তবে বিপর্যয়কর পরিণতিও দেখা যায়। হাম, বসন্ত, ও অন্যান্য রোগের জীবাণু দাবানলের মত নতুন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে যা লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। ইউরোপীয়রা এই বিপর্যয়কে পুঁজি করে এবং রোগাক্রান্ত ও রোগের আক্রমণে বিশৃঙ্খল ভ‚খন্ডগুলো জয় করে।
কৃত্রিম জীববিদ্যা পরিকল্পনানুযায়ী এসব অস্ত্র তৈরি করতে পারে। মানুষকে দুর্বল, শারীরিকভাবে অক্ষম বা হত্যা করতে কিংবা তাদের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমিত রাখতে জীবাণু ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে উদ্বেগের প্রকৃত কারণ রয়েছে, তবে তাৎক্ষণিক শঙ্কা নেই। কারণ সর্বাধুনিক কৃত্রিম জীববিজ্ঞানের অবশিষ্টের মত এ ধরনের অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষ টিম সমূহ ও যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদের সমর্থন।
শহরগুলো ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত করা ও বিপুল সংখ্যায় মানুষকে হত্যার মত বহু পন্থা সেনাবাহিনীর আছে। যখন গণবিধ্বংসী বিষয় আসে তখন পারমাণবিক অস্ত্রের দুর্বল বিকল্প হয় একটি রোগ। বড় কথা হল, আজকের কৃত্রিম-জীববিদ্যা সম্প্রদায় খোলা মত ও জনসেবার আদর্শের অনুরাগী যা কিনা পুরনো দিনের বহু ক্ষেত্রের চেয়ে ভালো। বজায় রাখা ও লালন করা হলে এ সংস্কৃতি বেপরোয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে এই রূপান্তরের পার্থক্য যে কারণে ঘটেছে তা আগে বলা হয়েছে। শুধু মাত্র অতীত দর্শনের ক্ষেত্রেই তাদের গুরুত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সময় দূরদর্শিতা থাকবে। এটা নির্ভুল হবে না, এখানে অবশ্যই অপ্রত্যাশিত প্রভাব থাকবে। কিন্তু কৃত্রিম জীববিদ্যা চালিত হবে লক্ষ্য সন্ধান দ্বারা, প্রত্যাশিত ও কাক্সিক্ষত উভয় দ্বারা। এটা মানুষের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। এটা একে পরাজিত করবে, কিন্তু সতর্কতার সাথে লালন করা হলে এটা এর বিস্তৃতিতেও সাহায্য করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ