পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরাজ উদ দৌলা নামটি উপমহাদেশের মানুষের কাছে অন্যরকম সন্মানের। বাংলা-বিহার-উড়িশ্যার শেষ স্বাধীন নবাব হওয়ায় নামটির প্রতি মানুষের গভীর ভালবাসা। কিন্তু সেই নামকে কলঙ্কিত করেছে ফেনি সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। একটি পৈচাসিক ঘটনার পর জামায়াতের এই নেতার একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর বের হয়ে আসছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক রুপী এই সিরাজ বর্তমানে পুলিশের রিমাÐে।
স্কুল-কলেজে মূল্যবোধের শিক্ষার অভাবে সমাজে যখন অনৈতিকতার নৃত্য; তখন মাদরাসা শিক্ষার প্রতি মানুষের একটি সুদৃষ্টি পড়েছে। মাদরাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নীতি নৈতিকতা, শালীনতা মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়। সে জন্যই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাজা হিরোইনের দিকে ঝুকতে দেখা গেলেও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বেলায় সেটা চোখে পড়ে না। সিরাজ উদ দৌলা মারদারা শিক্ষক। নীতিবান মানুষ গড়া তার দায়িত্ব। কিন্তু জামায়াত নেতা এই মানুষটিই নানা কেলেঙ্কারির হোতা। ছাত্রীদের যৌন হেনস্তা করা তার নিয়মিত অভ্যাস। মাদরাসার আয়ার শ্লীলতাহানি, ছাত্রীদের শরীরের বিশেষ অঙ্গে হাত দেয়া, টাকা আত্মসাৎ, চাচাতো ভাইকে হত্যা চেষ্টার মতো অভিযোগ এখন সেনাগাজীর মানুষের মুখে মুখে। সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগের পর বেরিয়ে আসছে তার নানা অপকর্মের তথ্য। স্থানীয়রা জানান, সোনাগাজীর মাদরাসা ছাড়াও আরো দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবার ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে গতকাল বিকালে কথা হয়। রাফির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পাশাপাশি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার আগের নানা সময়ের এসব অভিযোগেরও ন্যায়বিচার দাবি করেন তারা। জামায়াতের আর্থিক সহায়তায় উম্মুল কোরা ডেভেলপার নামে একটি আবাসন ও ভূমি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটির ১০৯ জন সদস্যের নামে থাকা প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফেনী মডেল থানায় সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে একটি মামলা করেন আব্দুল কাইয়ুম নিশান। ২০১৭ সালে ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মনিরউদ্দিন মিনু জানান, অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিবাদীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। মামলাটি এখন চার্জ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলার বাদী আব্দুল কাইয়ুম নিশান জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে ১০৯জন সদস্যকে নিয়ে শুরু হয় উম্মুল কোরা ডেভেলপারের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে থাকা উম্মুল কোরা মাদরাসা ভবনটি সে বছর রাজু, সোহাগ, নয়ন ও মতুর্জা নামে কয়েক সন্ত্রাসীর সহায়তায় তিনি দখল করে নেন। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কাজে নিয়োজিত থাকা একটি মাইক্রোবাস বিক্রির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ফেনীর মহীপাল এলাকায় কোম্পানির নামে থাকা সাড়ে ১৬ শতাংশ জমিও নিজের নামে করে নেন এই জামায়াত নেতা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ফেনীর পাঠান বাড়ির মোড় এলাকায় উসমান ফার্নিচার নামে জমির দখল দেন অধ্যক্ষ সিরাজ। এই কাজে তাকে ভ্যান নয়ন নামে একজন সহায়তা করে বলে অভিযোগ বাদীর। উম্মুল কোরা ডেভেলপারের অধীনে থাকা এসব সম্পত্তি বেহাত করে সব টাকা নিজের নামে ব্যাংকে জমা করেন সিরাজ-উদ দৌলা। আর কোম্পানির সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করে ফেনীর পাঠান বাড়ির মোড়ে গড়ে তোলেন আলিশান ছয় তলা বাড়ি ‘ ফরদৌসী মঞ্জিল’।
১০৯ জনের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ একা হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাওলানা আব্দুল মালেক বলেন, কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রির সুবিধায় চেয়ারম্যান সিরাজ উদ দৌলাকে একক ক্ষমতার অধিকার দেয়া হয়। লেনদেন ও ব্যাংকের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানের ইসি কমিটির সদস্যরা। তবে, এমন সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় ১০৯ জন সদস্যের জন্য। ২০১৭ সালে আমরা মামলা করতে বাধ্য হই। ২০১৭ সালের ৭ ও ১৩ আগস্ট সিরাজের বিরুদ্ধে ফেনী সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করা হয়। মামলার বাদী আব্দুল কাইয়ুম নিশান জানান, ২০১৮ সালে এই মামলায় প্রায় ২১ দিন জেলও খাটেন সিরাজ উদ দৌলা।
জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ সিরাজ ২০০৭ থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী, কর্মীদের যৌন হয়রানি, ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকার ও নিজের চাচাতো ভাই এবং গাড়ি চালককে হত্যাচেষ্টা করেন বলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে। এছাড়া নাশকতা ও সরকারি গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ২০১৫ সালে ফেনী মডেল থানার এফজিআর ৫১০/১৫ নম্বর মামলায়ও জেল খাটেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা।
২০০৭ সালে ফেনীর দলিয়া এলাকার সালামতিয়া মাদরাসার এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন তিনি। এছাড়া, আল জামিয়াতুল ফালাইয়া মাদরাসায় এক শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগেও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের রংমালা মাদরাসায়ও নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরি হারান জামায়াত নেতা সিরাজ। পরে জাল সনদ দিয়ে ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে চাকরি নেন। সেখান দলকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন নিজের বলয়। সোনাগাজীর ওই মাদরাসায় নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি ছাড়াও তহবিলের টাকা লুটপাট করেন। ২০১৮ সালের ১০ জুন নিজের গাড়িচালক মেফতাহুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টা করেন সিরাজ। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা মামলার দুই নম্বর আসমি শামীম। পরে শামীমের ভয়ে অভিযোগ তুলে নেন মেফতাহুল ইসলাম।
সিরাজের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১২ জুলাই ফেনীর ৮ নম্বর দরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ইশরাফিল নামে একজন। অভিযোগের পর শিবিরের ক্যাডারদের দিয়ে তাকেহত্যার হুমকি দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর নিজের প্রবাসী চাচাতো ভাইকে হত্যার হুমকি দেন। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই বিষয়ে সমঝোতা হয়। একই বছরের ৬ ফেব্রæয়ারি রফিকুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষককে পরীক্ষা কক্ষে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ রয়েছে সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চেক জালিয়াতির অপরাধে তার বিরুদ্ধে ৩২৫/১৮ নম্বর মামলা করা হয়। ২০১১ সালে একবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাদরাসায় অনিয়মের জন্য তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জামায়াতের নেতা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে সেই কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিম। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে যান সিরাজ উদ দৌলা। তবে নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার পর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আবারো মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। নানা অভিযোগে তার বিচারের দাবিতে গতকাল ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কেলেঙ্কারীতের বিব্রত মাদরাসা শিক্ষকরাও তার বিচার দাবী করছেন। মাদরাসার এক শিক্ষক বলেন, সিরাজ উদ দৌলা জামায়াত নেতা হওয়ায় এই অপকর্ম করে এতোদিন পার পেয়েছে। ওই ব্যাক্তি সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের অপমানিত করছেন। এ জন্য তার কঠোর শাক্তি হয়ে উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।