বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জান্নাত লাভের উপযুক্ত মুত্তাকি বান্দাগণ কিয়ামত ও হিসাব-নিকাশের পর জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কিয়ামতের আগে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও আল্লাহপাকের ইচ্ছায় হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) জমিনে অবতরণের আগে জান্নাতে অবস্থান করছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে আদম, তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো, আর ইচ্ছামতো তার ফলমূল তৃপ্তি সহকারে ভক্ষণ করো, তবে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী হয়ো না, অন্যথায় সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ৩৫)। হাদিস শরীফে আছে ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি কিয়ামতের দিন জান্নাতের দ্বারে গমন করে খুলতে বলব। রক্ষী ফেরেশতা বলবে আপনি কে? উত্তরে বলব, আমি মুহাম্মদ (সা.)। দ্বাররক্ষী ফেরেশতা বলবে, আপনার অপেক্ষায় থাকতেই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আপনার আগে অন্য কারো জন্য জান্নাতের দ্বার খুলব না। (সহি মুসলিম : খ. ১, পৃ. ১১২)। মোট কথা, নির্দিষ্ট সময় তথা কিয়ামতের আগে বান্দাদের ক্ষমতা নেই যে, তারা জান্নাতের অবস্থান ও আরাম গ্রহণ করে।
বস্তুত হিসাব-নিকাশের পর যে ব্যক্তি একবার জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে কখনো সে স্থান থেকে বহিষ্কৃত হবে না। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ক. জান্নাতে তাদের ক্লান্তি স্পর্শ করবে না, তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হবে না। (সূরা আল হিজর; আয়াত ৪৮)।
খ. হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে রেওয়ায়েত করেন, বিচারের পর জান্নাতীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীগণ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর তাদের মাঝে একজন ঘোষক দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেবে, ওহে জাহান্নামের অধিবাসীগণ, তোমাদের আর মরণ নেই। হে জান্নাতের অধিবাসীগণ, তোমাদের আর মরণ নেই। সকলেই যে যেখানে আছো, চিরদিন সেখানেই থাকো। (সহি মুসলিম : খ. ২, পৃ. ৩৮২)।
তবে জান্নাতে শুধু ঈমানদারগণই প্রবেশ করবে, কেউ কেউ সাময়িক শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে। কোনো কাফের কখনো জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘জান্নাতে তারা (কাফেরগণ) প্রবেশাধিকার পাবে না, যতক্ষণ না উট সুচের ছিদ্রপথে প্রবেশ করতে পারে। (সূরা আল আরাফ : আয়াত ৪০)। হাদিস শরীফে হযরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে বান্দাহই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল, অতঃপর এই বিশ্বাসের ওপর মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি নিবেদন করলাম, যদিও সে জিনা করে, চুরি করে। রাসূল (সা.) বললেন, যদিও সে জিনা করে, চুরি করে। আমি আবার বললাম, যদি সে জিনা করে, চুরি করে। তিনি বললেন, যদিও সে জিনা করে, চুরি করে। আমি আবারও বললাম, যদি সে জিনা করে, চুরি করে। তিনি বললেন, আবু যরের নাক ধূলিধূসরিত হোক, যদিও সে জিনা করে, চুরি করে (অর্থাৎ আবু যরের নিকট তা অপ্রীতিকর মনে হলেও। (সহি মুসলিম : খ. ১, পৃ. ৬৬)।
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর নিকট এসে নিবেদন করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), দু’টি ওয়াজিবকারী বস্তু কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে এমতাবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরিক করে, নরকাগ্নিতে প্রবেশ করবে। (সহি মুসলিম : খ. ১, পৃ. ৬৬)।
আর যে ব্যক্তি জান্নাত ধ্বংস হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করে, সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। কেননা, কোরআন মাজীদের অনেক আয়াত দ্বারা জান্নাতের চিরস্থায়ী হওয়া স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা চিরকাল তথায় অবস্থান করবে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা আন নিসা : আয়াত ১২২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।