বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী; তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইয়াকুব (আ.) ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন। মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বারবার করবে। কবি যেমনটি বলেছেন : ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দুই সন্তান হারিয়ে চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলছেন, তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।
বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’- এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৯৭০১)।
বিপদে পড়লে মানুষ যে কিভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও আছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নিয়ামত দিই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৩)।
নানা কারণেই মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্য ধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায়- সামান্য সঙ্কটেই সে ভেঙে পড়ে। কখনো হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গও আরেকজনকে হতাশ করে দেয়। আরবীতে প্রবাদ আছে- ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে।’ এটাই স্বাভাবিকতা। তাই কেউ যদি হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, তাহলে এই হতাশায় একসময় সেও আক্রান্ত হবেই। কখনো আবার প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে। নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। একের পর এক যখন আশাভঙ্গ হতে থাকে, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। আবার এমনও হয়- আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয়, যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মত করতে পারে না। পরিণামে কেবলই হতাশা।
হতাশা যে কেবল পার্থিব বিষয়াদিকেই আক্রান্ত করে এমন নয়, দ্বীনি ও পরকালীন বিষয়েও মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। কারও যখন পাপের পরিমাণ বেশি থাকে, সারাদিন যখন কেউ বড় বড় পাপে ডুবে থাকে, যখন নিজেও পাপ করে, অন্যকেও পাপের দিকে ডাকে। মোটকথা, দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে কেউ যখন কেবলই পাপই করে চলে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দয়াময় প্রভুকে স্মরণ করতে চায়, তখন একরাশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে পারে- আমার যে এত এত পাপ, আমারও কি এখান থেকে মুক্তি সম্ভব? গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, তাও এ হতাশার আঘাতে শেষ হয়ে যায়। আবার এমন গোনাহগার কাউকে দেখে দ্বীনদার লোকেরাও অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে- একে মনে হয় আর ভালো পথে আনা যাবে না! কথা কী, এ উভয় হতাশাই আল্লাহ তায়ালার রহমত সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। আল্লাহর রহমত যখন ভাগ্যে জোটে, তখন তো ইসলামের চরম দুশমনও মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়। একটি উদাহরণ দিই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।