পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাবাড় হয়ে যাচ্ছে লালমাই পাহাড়। পাহাড়-টিলা রূপ নিচ্ছে সমতল ভূমিতে। অবাধে মাটি কাটার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গহীন বন। কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে রাতের আঁধারে পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা চালাচ্ছে প্রকৃতি নিধনযজ্ঞ। পাহাড়ের প্রায় ৬০ ফুট উঁচু একটি টিলা কেটে ফেলা হয়েছে। তিন বছর ধরে টিলার প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার মাটি কাটা হচ্ছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের ধনমূড়া ও চৌধুরীখলা এলাকায় ওই টিলার অবস্থান। শুষ্ক মওসুম শেষ না হতেই প্রাক-বর্ষা শুরু হবে। প্রতিবছর দেখা যায় বর্ষায় এমনকি তার আগে-পরেও আকস্মিক ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল নামলেই পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলায় ধস নামে।
শুষ্ক মওসুমে বর্ষার আগে ভূমিদস্যুরা অবাধে পাহাড়-টিলা কেটে-খুঁড়ে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ফেলে রাখে। আর বৃষ্টিপাত শুরু হলেই সেসব টিলার ভেতর বৃষ্টির পানি ঢুকে পাহাড়ে-টিলায় ভয়াবহ ধস নামতে থাকে। কুমিল্লা অঞ্চলের পাহাড়গুলোর ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক গঠন বালুমাটির এবং সেগুলো অত্যন্ত নরম, শিথিল। এতে করে বর্ষায় বৃষ্টির পানি পাহাড়ের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে গেলেই বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
ঐতিহাসিক লালমাই পাহাড় কাটা থেমে নেই। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকারী বিধিনিষেধ থাকলেও প্রতিদিনই অবাধে এই পাহাড়ের কোন না কোন স্থান থেকে মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস, ঐতিহ্য। একই সাথে প্রতিদিনই পাহাড়ের কোথাও না কোথাও নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়িঘর।
“পাহাড় কাটা নিষেধ”। তবে সরকারী এই নির্দেশ শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। ’৮০’র দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলাকালে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের মাটিকাটা শুরু হয়। অব্যাহত মাটি কাটায় নিশ্চিহৃ হয়ে পড়েছে বহু পাহাড়। সৃষ্টি হয়েছে জলাশয়। এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বহু স্থানের নীচু ভূমি বা জলাশয় ভরাটের কাজে।
স্থানীয় ধর্মপুর ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, পাক-ভারত বিভক্তির পূর্বে লালমাই-ময়নামতি পাহাড় ত্রিপুরা মহারাজের অধীন ছিল। তৎকালীন ত্রিপুরা বর্তমান কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলের প্রজাসাধারণ মহারাজের কাছে পাহাড়ের ভূমি বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করে। এতে মহারাজ শ্রেণির আকার পরিবর্তন না করার শর্তে প্রজাদের কাছে পাহাড়ের ভূমি বন্দোবস্ত দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর সেই নির্দেশ কার্যকর থাকেনি। বর্তমানে পাহাড়ের নানা অংশ জুড়ে রয়েছে কমপক্ষে ২৫টি সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে রয়েছে শত শত পাকা ঘরবাড়ি। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে। ফলে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে মূল্যবান ফলদ ও বনজ বৃক্ষ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টিলার চৌধুরীখলা অংশ সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে আনারস ও কলাগাছ লাগানো হয়েছে। এক কিশোরকে সেসব গাছে পানি দিতে দেখা গেছে। ওই কিশোর বলে, রাতে টিলা কাটা হয়। রাতেই ট্রাক্টরে করে মাটি নেওয়া হয়। ধনমূড়া এলাকায় টিলা কাটার পর সমতল ভূমিও কাটার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এভাবে পাহাড়ের গহীন বন উজাড় হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ট্রাক ও ট্রাক্টরের শব্দে ঘুমানো যাচ্ছে না। রাতের বেলায় টিলা কাটা হচ্ছে। পাহাড়ে বসবাসরতরা জানান, আশির দশক থেকে লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ও বারপাড়া ইউনিয়নে মাটি কাটা শুরু হয়। কোটবাড়ি থেকে চন্ডীমুড়া পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকার বিস্তীর্ণ লালমাই পাহাড়ের বিভিন্ন অংশের মাটি অবাধে বিক্রি করা হয়। এর আগে লালমাই পাহাড়ের রাজারখলা, বড় ধর্মপুর, রতনপুর, চৌধুরীখলা, সালমানপুর ও ধনমূড়ার উত্তর অংশের পাহাড় কাটা হয়।
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, লালমাই-ময়নামতি পাহাড় দুটি লালমাই ও বড়ধর্মপুর মৌজায় অবস্থিত। তার মধ্যে লালমাই মৌজা নামের অংশটি পড়েছে ময়নামতি পাহাড়ের অংশ নিয়ে আর বড়ধর্মপুর মৌজাটি লালমাই পাহাড়ের অংশ নিয়ে। বড়ধর্মপুর মৌজাটি প্রায় ৪ হাজার একর এবং লালমাই মৌজাটি প্রায় ১০ হাজার একর ভূমির উপর বিস্তৃত। এই পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়া প্রায় ১শ’ মিটার উঁচু।
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্র জানায়, লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের সর্বপ্রথম নির্মিত স্থাপনা সার্ভে ইনস্টিটিউট। এরপর ময়নামতি সেনানিবাস, ওয়ার সিমেট্রি, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), প্রত্মতত্ত্ব অফিস, ৩৩ বিজিবি হেড কোয়ার্টার, লালমাই ডিগ্রী কলেজ, সড়ক ও জনপথ বাংলো, চট্রগ্রাম বিভাগীয় স্কাউটস অফিস, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাই গ্যাস ফিল্ড (তাল্লো), সামোয়ান এলকে ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানী লিমিটেডসহ আরো বেশ কটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রস্তাবিত সাইনবোর্ড। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে রয়েছে কয়েক হাজার একর জমি। এসকল ভূমি ছাড়া পাহাড়ের অধিকাংশ জমির মালিক সাধারণ মানুষ।
২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলে এখানে ভূমির মূল্য বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, লালমাই ও আশপাশে অর্ধশতাধিক পরিবারের দখলে রয়েছে প্রায় ১ হাজার একরেরও বেশি ভূমি। প্রতিদিনই এখনো লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের বেশকিছু জায়গা জুড়ে চলে পাহাড় কাটা। এর মধ্যে লালমাই কলেজের পিছনে, জামমুড়া, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও এর আশপাশ, বিজয়পুর জেলখানা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো সমানে চলছে মাটিকাটা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো বলেন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশসহ সকলেই জানে কারা মাটি কেটে বিক্রি করছে। তবে কিছু না বলার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীলরা পাচ্ছেন নিয়মিত অর্থ। এভাবে প্রতিদিনই চলছে পাহাড় কাটা। পরিবর্তন হচ্ছে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের শ্রেণি পরিবর্তন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক ছামছুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে টিলা কাটার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।