বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
তালমূদ ও ইসমে আজম : ইসমে আজমের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আগে প্রাচীনকালে এ পবিত্রতম বাক্যের প্রচলনের বিষয়টি বলে রাখা দরকার। এ বাক্যের মহিমা-মাহাত্ম্য মহান আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা আল্লাহরই ইলমে রয়েছে। এর পরিচয় ও ব্যবহার যুগে যুগে নবী-রসূলগণ ও তাঁর নৈকট্য লাভকারী মনীষী-সাধকগণের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণভাবে তা সকলের পক্ষে অবগত হওয়া সম্ভব নয়। বিক্ষিপ্তভাবে ইসমে আজম সম্পর্কে ইসলামপূর্ব যুগে এর মহিমা-মাহাত্ম্য ও অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে নানা কাহিনীর কথা জানা যায়। এর ধারাবাহিক তথ্য লিখিত আকারে দুর্লভ হলেও বিক্ষিপ্তভাবে ইসমে আজমের প্রচলন ও ব্যবহারের নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ হজরত সুলাইমান (আ.)-এর যুগের একটি প্রচলিত কাহিনীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
হজরত সুলাইমান (আ.) ও সাবার রানী বিলকিসের বিখ্যাত ঘটনার বিবরণ কোরআনে সবিস্তারে রয়েছে। রানীর সিংহাসন হজরত সুলাইমান (আ.)-এর নিকট অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে যে হাজির করেছিল তার নাম আল্লামা বাগবীও উল্লেখ করেছেন। অধিকাংশ আলেমের মতে, ‘আসেফ ইবনে বালখিয়া’ এবং তিনি সিদ্দিক ছিলেন। তিনি ইসমে আজম জানতেন। কেননা ইসমে আজমের অছিলায় যেকোনো দোয়া করা হয় তা কবুল হয়। ভিন্ন মতে, লোকটির নাম ছিল ‘তস্তুম’, তবে কারো কারো মতে এটি হজরত জিব্রাইল (আ.) কিংবা খোদ হজরত সুলায়মান (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে। বনি ইসরাইলের তস্তুম নামক আলেম সম্পর্কে বলা হয় যে, তাকে আল্লাহ তায়ালা অসীম জ্ঞানভান্ডার দান করেছিলেন। তার মধ্যে ইসমে আজম অন্যতম। এ প্রসঙ্গে ‘তালমূদ’ গ্রন্থের কথা এসে যায়, যাতে হজরত সুলায়মান (আ.)-এর আংটি হারানোর কল্পিত কাহিনী অন্যতম।
সুলায়মান (আ.)-এর আংটি হারানোর কিসসা :
তালমূদ গ্রন্থের পরিচয় আমরা পূর্বেই তুলে ধরেছি। তালমূদের বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত সুলায়মান (আ.)-এর নিকট একটি আংটি ছিল, তাতে ইসমে আজম খোদাই করা ছিল। এর প্রভাব ছিল এই যে, মানুষ, জীবজন্তু, পশুপাখি, জিন-ভূত, পরী প্রভৃতি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চলে আসত। যখন তাঁর সাম্রাজ্য বিশাল বিস্তীর্ণ হয়ে যায় এবং তাঁর মধ্যে শক্তি, প্রভাব, প্রতিপত্তির গর্ব-অহঙ্কার জন্ম নেয়, তখন তা আল্লাহর নিকট নাপছন্দ হয়, যার পরিণতিতে দেব-দেবীদের রাজ্যের বাদশাহ হামুদিস বিশেষ উপায় ও চাতুর্যের সাথে তাঁর (সুলায়মান-এর) আংটিখানা চুরি করে নিয়ে যায়। যার দরুন তাঁর সমস্ত কাজ-কারবার থেমে যায়, যা আংটির প্রভাবে চলছিল। সুতরাং তিনি এ আংটি পুনরুদ্ধারের জন্য ফকিরদের পোশাক পরে তাঁর দেশ হতে বের হন এবং ‘আলমুন’ নামক বাদশাহের বাবুর্চি হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানে তিনি অবস্থান করতে পারেননি শাহজাদীর প্রতি আসক্ত হওয়ার অভিযোগে। দ্রুত তাকে বের করে দেয়া হয় এবং শাহজাদীকেও তাঁর সঙ্গে ঠেলে দেয়া হয়। এবার তাঁরা উভয়ই ভিক্ষুক বেশে একটি স্থানে পৌঁছেন, সেখানকার এক মাছ ধরা (জেলে) এর নিকট উপস্থিত হয়। ভিখারিনী শাহজাদীর ভীষণ খিদা পেয়েছিল। তাই তিনি জেলেটির কাছ থেকে একটি মাছ খরিদ করেন। আল্লাহর কুদরত, যখন মাছটির পেট চেরা হয়, তখন তার পেট হতে আংটিটি বের হয়ে আসে, যা বাদশাহ হামুদিস চুরি করেছিল। আংটি পাওয়া মাত্রই হজরত সুলাইমান (আ.) তার হারানো সব কিছু পেয়ে যান এবং দৃষ্টি ফেরাতেই তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে পৌঁছে যান। তিনি হামুদিসকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে শাস্তি প্রদান করেন এবং নিজের সাম্রাজ্যের যাবতীয় কাজ-কারবার পুনরায় চালু করেন।
ইহুদিদের মোকাদ্দাস কিতাব তালমূদের আকর্ষণীয়, চমৎকার, মনগড়া এ কাহিনীর মতো এরূপ অসংখ্য কাহিনী ইসলামী ইতিহাসে স্থান লাভ করেছে। লেখক-সঙ্কলকদের অসতর্কতাই এ জন্য প্রধানত দায়ী বলে অনেকের অভিমত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।