পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কে নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল। উত্তরা-মিরপুর ১০-আগারগাঁও-ফার্মগেট-শাহবাগ-বাংলা একাডেমি-মতিঝিল অংশে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি-৬)। সড়কটিতে পিলার দিয়ে বানানো হবে ফ্লাইওভার। এই ফ্লাইওভারে বসানো লাইনে চলবে মেট্রোরেল। পিলারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কের মাঝখানে। ৭২ ফুট প্রস্থ সড়কটির অর্ধেকই ব্যবহার হচ্ছে নির্মাণকাজে। বাকি অর্ধেক দিয়ে চলছে যানবাহন, যার পুরোটাজুড়েই শুধু বিশৃঙ্খলা অব্যবস্থাপনা। নির্মাণাধীন উত্তরা-ফার্মগেট-মতিঝিল মেট্রোরেলের কারণে সড়কটিতে একদিকে যেমন যানজট বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পথচারী ভোগান্তিও। এজন্য দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, মেট্রোরেলের মতো এত প্রযুক্তিনির্ভর একটি প্রকল্পে এ ধরনের দুর্বলতাগুলো একটু সচেতন থাকলেই এড়ানো যেত। এজন্য বাড়তি টাকা বা সময়ের প্রয়োজন হতো না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনারগাঁও হোটেলের সামনের জেব্রা ক্রসিং বন্ধ করে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। পথচারী পারাপারে রাখা হয়নি বিকল্প ব্যবস্থা। নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কটি পার হচ্ছে মানুষ। একই অবস্থা বাংলামোটর, পরীবাগ, শাহবাগ, পল্টনসহ অন্যান্য ব্যস্ততম পয়েন্টেও।
কাওরান বাজারের আন্ডারপাসের মুখটি ছিল পার্শ্বরাস্তা ও মূল সড়কের মধ্যের ফুটপাতে। মেট্রোরেলের কারণে যান চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে আসায় ফুটপাত ভেঙে পার্শ্বরাস্তাটি মূল রাস্তার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আন্ডারপাসটি পড়ে গেছে ব্যস্ত রাস্তার ঠিক মাঝখানে। এতে আন্ডারপাস থেকে বেরিয়ে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। গত সপ্তাহেও আন্ডারপাস থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় একজনের প্রাণহানি হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজে ফার্মগেট-মতিঝিল সড়কের অনেকগুলো স্থানে ফুটপাত এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদিও পথচারী চলাচলের জন্য নিরাপদ কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে ব্যস্ত সড়কেই চলাচল করছেন পথচারীরা।
বিশৃঙ্খলা ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। ফার্মগেট-শাহবাগ সড়কের কাওরান বাজার, বাংলামোটর, পরীবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল (শেরাটন) হোটেলের সামনে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেব্রা ক্রসিং। পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এসব পয়েন্টে এখন ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটওভার ব্রিজটিও তুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে জেব্রা ক্রসিং দেয়ায় পথচারীরা এখন কোনোমতে পারাপার হতে পারছেন। কোনোরকমে পারাপার হলেও ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। প্রেসক্লাবের উল্টোপাশের ফুটপাতটির পুরোটাই ভাসমান হকার ও দোকানের দখলে।
পুরানা পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কটির অবস্থাও বেশ খারাপ। অবৈধ দখল, পার্কিং আর ফুটপাতের হকারদের দৌরাত্ম্যের কারণে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় পথচারীদের। আবার অন্যান্য সংস্থাও সড়কের কোনো কোনো স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রেখেছে, যা কাজ শেষ হওয়ার পরও মেরামত করা হয়নি। এর ফলে মেট্রোরেলের দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়ে পরিণত হচ্ছে অবর্ণনীয় মাত্রার জনভোগান্তিতে। এসব ভোগান্তি নিয়ে এখন অভিযোগের পাহাড় জমছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে।
নির্মাণাধীন মেট্রোরেল নিয়ে মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রতিদিনই একাধিক অভিযোগ আসছে। অভিযোগের বেশির ভাগই বিশৃঙ্খলা ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এমনই এক অভিযোগে মিরপুর-মতিঝিল সড়কটিকে ‘যন্ত্রণার ফাঁদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন আব্দুল লতিফ নামের এক ভুক্তভোগী। গত ১৪ মার্চ তিনি মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকার নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সড়কটিতে বিশৃঙ্খলার জন্য ছোট যানবাহনগুলোকে দায়ী করেছেন তিনি।
পরিচয় গোপন রেখে বিভাগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আরেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এক বছর আগে ডেসকো (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) আগারগাঁওয়ে রাস্তা খুঁড়ে রাখে। এরপর সেটি আর মেরামত হয়নি। আগারগাঁওয়ের ওই অংশটিতে দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে। বিকল্প পারাপারের ব্যবস্থা না করেই জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ তুলে দেয়ায় পথচারীরা ঝুঁকির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আরেকজন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, মেট্রোরেল হচ্ছে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তায়। অসংখ্য যানবাহনের পাশাপাশি এখানে ফুটপাত দিয়েও প্রচুর মানুষ চলাচল করে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পথচারীদের জন্য কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাই রাখেনি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ তুলে দেয়া হয়েছে ভালো কথা, কিন্তু সাময়িকভাবে পথচারী পারাপারের জন্য তো একটা নিরাপদ ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু বিকল্প পথ তৈরি করে দিলেই হবে না, সেটি সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সাইন-সিগনাল-মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নিজস্ব কর্মী দিয়ে পথচারীদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, এগুলো করতে কিন্তু খুব বেশি টাকা বা সময়ের দরকার নেই। যেটা দরকার তা হলো সচেতনতা। মেট্রোরেল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এখানকার একটা ভালো ব্যবস্থাপনা অন্য প্রকল্পে উদাহরণ হিসেবে কাজে লাগানো যেত। কিন্তু এত প্রযুক্তিনির্ভর একটা প্রকল্পে মানসম্মত পরামর্শক, বিনিয়োগকারী, তদারকি সংস্থা থাকার পরও সেই সনাতনী পদ্ধতিতেই নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।