Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে নুসরাত

ফেনীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে মাদরাসা ছাত্রীর গায়ে আগুন

সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সোনাগাজী ফাযিল মাদরাসায় পরীক্ষা দিতে এসে দৃর্বত্তের আগুনে পুড়ল এক ছাত্রী। তার নাম নুসরাত জাহান রাফি (১৮)। ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ছটফট করছে সারা শরীর আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাত। আলীম পরীক্ষার্থী ছাত্রী নুসরাতের অবস্থা এখন সঙ্কটাপন্ন। পৈচাষিক এই ঘটনা ঘটে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের আর পরীক্ষা দেয়া হলো না। আগুনে ঝলসে যাওয়া পরীক্ষার্থী নুসরাতকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপপ্লেক্সে ও পরে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আগুনে শারীরের ৮০ শতাংশ ঝলসে যাওয়ায় পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধ নুসরাত সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামের একে এম মুসার মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক শিক্ষকসহ ২ জনকে আটক করেছে।
পরিবারের লোকজন জানায়, গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় যায় নুসরাত জাহার রাফি। এ সময় কতিপয় বখাটে তাকে একটি ভবনের চারতলায় ডেকে নেয়। এরপর তাকে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব অতপর হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। কেউ বলছেন সহপাঠীদের মধ্যে থেক্ েকেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ দাবী করছেন মেয়েটি নিজেই গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। এতে তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। তার আত্মচিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ও পরীক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আলিম পরীক্ষার আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে নুসরাতকে বাড়ি থেকে মাদরাসায় নিয়ে যান তিনি নিজেই। তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে ভাই বাড়ি ফিরলে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে মাদরাসায় কয়েক শিক্ষার্থী তাকে ফুঁসলিয়ে মাদরাসার ছাদে নিয়ে যায়। এ সময় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেয়। এতে রাজি না হলে একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে নুররাত দগ্ধ হয়ে চিৎকার করলে অন্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে।
এর আগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় সোনাগাজী পৌরশহরের কাশ্মীরবাজার সড়কে কিছু বখাটে নুসরাতকে গায়ে চুন মেখে দেয়। ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, নুসরাতের শরীরে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। তার অবস্থা সংঙ্কটাপন্ন বলে তিনি জানান।
খবর পেয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার হাসপাতালে গিয়ে নুসরাতের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। নুসরাতের চাচাতো ভাই ফরহাদ জানান, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন সোনাগাজী থানায়। ওই মামলায় প্রিন্সিপাল ফেনী কারাগারে আছেন। এ ঘটনার জের ধরে শনিবারের আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পরিবারের সদস্যদের ধারণা। সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন বিষয়টি আত্মহত্যা নাকি বখাটেদের কাজ তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ নুসরাতকে শ্লীলতাহানীর ঘটনায় গত কয়েকদিন নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও অধ্যক্ষের পক্ষে বিপক্ষে একাধিক মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। কেউ ঘটনা মিথ্যা অবিহিত করে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার দাবি করেন। আবার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী শ্লীলতাহানীর প্রতিবাদ এবং প্রিন্সিপালের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নিন্দা
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাযিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যাওয়ার ঘটনায় গভীর নিন্দা জানিয়েছে দেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একমাত্র অরাজনৈতি পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যেসকল দুর্বৃত্তরা অগ্নিদগ্ধ করেছে তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষাধারাকে কলূষিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত করেছে বলে আমরা মনেকরি। তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে দোষিদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি বাস্তয়ন করতে হবে, যাতে এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। মাদরাসা শিক্ষাধারা ইতিহাসে এধরণের ঘটনা নজির বিহীন, ভবিষ্যতে যাতে এমন কোন ঘটনা সংগঠিত না হতে পারে সে ব্যপারে সংশ্লিষ্ট সকলেই সর্বদা শতর্ক থাকবে বলে আমরা আশা করছি। সেই সাথে নেতৃবৃন্দ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা প্রদান করে ফেনী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসা ও সার্বিক সহযোগিতায় পাশে থাকতে বলেন।



 

Show all comments
  • Nizzal Islam ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    নিরব বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply
  • কালো আকাশ নীল বেদনা ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    কোথায় জাবো বাংলাদেশে আর থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না ,, আমার মেয়েদের কি ভাবে মানুষ করবো ,, এখনোও বিয়ে করিনি ,, সত্য কথা হলো এখন থেকে চিন্তা লাগে বিয়ের পর মেয়ে হলে কি ভাবে মানুষ করবো ,, ইসকুল মাদরাসা কোনটাই দেখি নিরাপদ না
    Total Reply(0) Reply
  • Jannatul Naim Zara ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    এজন্যই ব্রুনেইয়ের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানাই। এই শয়তানদেরকে ইসলামি আইনে শাস্তি দেওয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Ishtiak Anam Nobel ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    আহারে!! বাচ্চাটা হয়ত বাচবে না। আমার জীবনে ৫০ শতাংশ এর উপরে পুড়ে যাওয়া কাউকে বাচতে দেখি নি। ডেথ বেড কনফেশন নেওয়া হোক। এক ডেথ বেড কনফেশন এর ধাক্কাতেই ফাসি হয়ে যাবে অপরাধীর।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rumon ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    এটা একটা আলেম কি নিঃস্ব করে তার পদ-পদবী হাতি নেওয়ার জন্য ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ একটা মেয়েকে জীবন্ত পুড়ে ফেলা হয়েছে সম্পূর্ণ ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোকের নাটক আমরা সোনাগাজী বাসি এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত আশা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Zabbar ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    একই দিন একই আসনের আরেক হাইস্কুলের হেড মাষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৫ম শ্রেনীর ছাত্রীকে গর্ভবতী করার কিন্তু সেই বিষয় নিয়ে কোন অলোচনা নাই কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Rahman Aminur ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    ইসলামের শত্রুরা এই ভাবেই ইসলামের দুর্নাম করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন "নিশ্চয়ই মুনাফিকদের
    Total Reply(0) Reply
  • Ashiqur Rahman Ashiq ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    এসব কুকুরের বাচ্চাদের জনসম্মুখে ফাসি দেওয়া হোক। তাহাতে বাকি সব কুকুরের বাচ্চা গুলা ঠিক হয়ে যাবে। এসব শকুনের জন্য ছোট বোনদের একা রাস্তায় বের হতে দিতে ভয় লাগে..।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Motin Jakir ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    ইসলামী আইনে শাস্তি কার্যকর করাহোক। যেহেতু তিনি, ইসলামী জীবন ব্যাবস্থায় আস্থাশীল এবং ইসলামী বিধিবিধানের অনুশীলন এবং শিক্ষাদিয়ে থাকেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৫:৪১ এএম says : 0
    AMI BUJI NA AMADER ........ SHOB CRIMINAL DER BEPARE SHE ATO WEAK KENO ?? YABA SMUGGLAR DER SHE ONEK BOSOR KISU E BOLE NAI , EVEN YABA DON BODIKE SAFE KORAR JONNY HOJE PATHIE DISE ! AKHON BODIR BOW KE NOMINATION DIE MP BANIESE!! SATROLINGER HAJAR HAJAR PANDARA DESH E RAHAJANI KORCHE, POLICE KE MARCHE, DORSHON KORCHE, R AMADER ....... MUKHE KULUP LAGIE BOSHE ROESE, KISU DIN POR POR 2 NOMBOR DOCTOR DORA PRE, KINTU ODER JAIL HOY 6 MASH, KHABARE VEJAL MISHAY, JORIMANA HOY 2-4 LAKH TAKA, KINTU AI ........DER TO TANGGANO WICHITH !!! EDER DARA DESHER KOTO MANUSH OSHUSTHO HOY? KOTO SHONGSHAR JAJRA HOE JAY !!!
    Total Reply(0) Reply
  • MAHMUD ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:৫২ এএম says : 0
    At first hate from heart for this type of incident, I have also daughter. Now in BANGLADESH all father and mother always thinking when daughter go out side/school/college/university/MADRASHA. May be there is two reason.(1) Principal of MADRASA is main issue, due to disturbed the girl. Her Mother submit the case against the Principal, now he is staying in jail, may be his group happening this. (2) May be Anti group of Principle happening this type of incident, for disgrace his character/MADRASHA SIKHHA/"ALEM SOMAZ". Request to peoples of SONAGAZI required deeply investigation. Special request to concern honourable DC and SP sir, I hope you are also father of daughter/son, so please take necessary action.
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মাদ উল্লাহ ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:১৪ এএম says : 0
    এই অধ্যক্ষ আল্লামা শফিকে ...... হুজুর বলে গালি দিতো। কাওমি মাদ্রাসায় নিয়ে বাঝে মন্তব্য করত। আজ সেই অধ্যক্ষ যৌনহরানির আসামি। তাতে উচিত শিক্ষা দেওয়া হক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আগুন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ