বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আরবি ‘জান্নাত’ শব্দটি শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কম-বেশি সবাই জান্নাত শব্দের সাথে পরিচিত। জান্নাত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাগান, উদ্যান। ইংরেজি ভাষায় প্যারাডাইজ ও হেভেন শব্দদ্বয় জান্নাতের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফার্সি ও উর্দু ভাষায় জান্নাতের প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বেহেশত’। যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশ ফার্সি ভাষাভাষীদের দ্বারা বহুদিন শাসিত হয়েছে, সেহেতু বাংলা ভাষাভাষীরাও জান্নাত বলতে বেহেশতকেই বুঝে থাকে এবং বেহেশত শব্দটি তাদের মন-মগজে মিশে গেছে। ব্যবহারিক অর্থে জান্নাত বলতে সেই বেহেশত, উদ্যান, বাগান, হেভেন, প্যারাডাইজ ইত্যাদিকে বুঝায়; যা সুখ-সম্পদপূর্ণ এবং সেখানে ওইসব মুমিন বান্দাকে পরকালে থাকতে দেয়া হবে, যারা ইহকালে সৎকর্ম সম্পাদন করেছে।
আল কোরআনে জান্নাত শব্দটি একবচনে ৬৬ বার এসেছে। সম্বন্ধপদ ‘জান্নাতাকা’ ও ‘জান্নাতি’ রূপে ২ বার এসেছে। ‘জান্নাতাহু’ রূপে ১ বার এবং ‘জান্নাতি’ রূপে ১ বার এসেছে। আর এই শব্দটি দ্বিবচনে ‘জান্নাতানে’ রূপে ৩ বার এবং ‘জান্নাতাইনি’ রূপে ৪ বার এসেছে। আর এ শব্দটির বহুবচন হলো ‘জান্না-ত’। বহুবচনে এ শব্দটি আল কোরআনে ৬৯ বার ব্যবহৃত হয়েছে। মোটকথা, আল কোরআনে বিভিন্ন আঙ্গিকে জান্নাত শব্দটি ১৪৬ বার ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়া হাদিস শরীফে জান্নাত শব্দটি অসংখ্যবার ব্যবহৃত হয়েছে। এর শ্রেণিভিত্তিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই বিধায় সম্মানিত পাঠকদের তা উপহার দিতে পারলাম না। আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সহৃদয়ভাব পোষণ করবেন। এ বিশ্বাস আমাদের আছে।
জান্নাত হক, সত্য। এর ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ। জান্নাত আল্লাহপাকের পুরস্কারের জায়গা। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ অসীম, মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ক. তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে ক্ষমার প্রতি দৌড়, আর দৌড় ওই জান্নাতের প্রতি। যার প্রস্থ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলব্যাপী, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৩৩)।
খ. জান্নাত সুসজ্জিত করে মুত্তাকিদের নিকটবর্তী করা হবে। (সূরা ক্বাফ : আয়াত ৩১)। গ. জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। কেননা, এত অধিক সংখ্যক আয়াত ও হাদিস এ ব্যাপারে এসেছে যে, তা গোপন করা ও গণনা করা প্রায় অসম্ভব। (শরহুল আকাঈদ : পৃ. ১০৫)।
জান্নাতের সৃষ্টি সুসম্পন্ন করা হয়েছে। জান্নাত এখন আপন অবস্থায় বর্তমান ও মজুদ আছে। এ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী সা. ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহপাক যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন- ‘হে জিব্রাইল, তুমি যাও। জান্নাত পরিদর্শন করো। তিনি গেলেন এবং জান্নাতের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। তারপর ফিরে এসে বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তোমার ইজ্জত ও মহত্তে¡র শপথ, যে এই জান্নাতের কথা শুনবে, সে-ই এতে প্রবেশের বাসনা-কামনা করবে। অতঃপর আল্লাহপাক জান্নাতকে কষ্টের আবরণ দ্বারা ঢেকে দিলেন। তারপর বললেন, হে জিব্রাইল, এবার গিয়ে জান্নাত দেখে এসো। তিনি গিয়ে দেখলেন এবং ফিরে এসে বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তোমার মর্যাদার শপথ, আমার ভয় হচ্ছে যে, এত কষ্ট সহ্য করে তাতে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তারপর আল্লাহপাক জাহান্নাম সৃষ্টি করে জিব্রাইলকে বললেন, যাও জাহান্নাম দেখে এসো। তিনি গেলেন এবং জাহান্নাম দর্শন করে ফিরে এসে বললেন- হে আল্লাহ, এমন কেউ নেই, যে এর বিষয় শোনার পর তাতে প্রবেশ করতে চাইবে। অতঃপর আল্লাহপাক জাহান্নামকে শাহওয়াত (কামোত্তেজনা) ও নফসানিয়াত (কামনা-বাসনা) দ্বারা আবৃত্ত করে দিলেন। তারপর বললেন, হে জিব্রাইল, এবার যাও এবং জাহান্নাম দেখে এসো। তিনি গিয়ে দেখলেন এবং আরজ করলেন, হে আমার রব, আমার আশঙ্কা হয় যে, তাতে কেউ প্রবেশ না করে থাকতে পারবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম : খ. ১, পৃ. ৩৫)।
জান্নাত চিরস্থায়ী। অর্থাৎ জান্নাত অনন্তকাল থাকবে। জান্নাতের অধিবাসীরাও তথায় অনন্তকাল অবস্থান করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ভাগ্যবানরা জান্নাতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে। যদি না তোমার প্রভু অন্যরূপ ইচ্ছা করেন। তা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। (সূরা হুদ : আয়াত ১০৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।