Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বব্যাপী ইহুদি বিরোধিতা নতুন করে জোরদার হচ্ছে

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গতকালের পর : গবেষণা গ্রুপ আটলান্টিক কাউন্সিলে ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে অনাবাসিক বিশেষজ্ঞ ড. এইচ এ হিলিয়ার বলেন, এটা ইসলামভীতি কবলিত কট্টরপন্থীদের ইহুদি বিরোধী (অ্যান্টি সেমিটিজিম) অত্যন্ত ন্যায়ানুগ লড়াইকে প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারকে দুর্বল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, কালো, মুসলিম, হিজাব পরিহিতা হওয়ার কারণে কংগ্রেস সদস্যা ইলহান ওমর লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন এ কথা স্বীকার করতে তার সাথে একমত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর বহু লোকেরই ধর্মান্ধতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই ও তা বাতিলের আহবান জানানোর রেকর্ড মারাত্মক।
ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘায়িত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার এ সময়ে বিভিন্ন নাগরিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নাগরিকরা যখন আকস্মিক ও জটিল অবিচারের সহজ ব্যাখ্যা পেতে চাইছে সে সময় ইহুদি বিরোধিতার পুনরুভ্যুদয় বিস্ময়কর নয়। বার্লিনে ইহুদি বিরোধী গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান স্টেফানি শুলার স্প্রিংগোরাম বলেন, আগের উদ্বেগপূর্ণ যুগগুলোতে সামাজিক পরিবর্তনের গতি অথবা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য সহজ বলি হত ইহুদিরা । এখন আবার তাই হচ্ছে।
শুলার স্প্রিংগোরাম বলেন, বিশ্বায়ন ও বিশেষ করে ২০০৮-এর সংকট আমরা যা বুঝি না সেই কৌশলের অনুগ্রহ ভাজন হওয়ার অনুভ‚তি জোরালো করেছে, এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এ কারণে যে তা ধ্রুপদি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে মাত্র অল্প কিছুটা দূরে আছে। এ তত্ত্ব সবসময়ই ইহুদি বিরোধিতার গোড়াপত্তন করেছে। বেনজামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ক্রমবর্ধমান ভাবে কট্টর ডানপন্থী হয়ে ওঠা ইসরাইল সরকার সমকালের ইহুদি বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের উৎস হিসেবে কাজ করছে।
হাঙ্গেরির অরবানের মত চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। সে দেশের বামপন্থী ইহুদি বিরোধীরা এর বিরোধিতা করছে। তারা ইসরাইলকে সে দেশ হিসেবে দেখে যে দেশ সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিনিময়ে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে যা কিছু করা সম্ভব তার সর্বোচ্চ করছে। এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এই যে জাতিগত পরিচয় রক্ষার জন্য লড়াইরত আরেকটি ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রী অরবান এটাকে সৎকাজ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সমর্থকদের মত বামপন্থী ইসরাইল সমালোচকরা একে সেভাবে দেখছেন না।
বাম ও ডান উভয়ের কাছেই ইসরাইলের একই ভাব মর্যাদা, বলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডস্মিথ কলেজের সমাজ বিজ্ঞানী, জেরেমি করবিনের সমালোচক ও ইসরাইলকে শিক্ষাগত ভাবে বয়কট করার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ডেভিড হার্স্ট। তিনি বলেন, করবিন বলছেন যে ইসরাইল সেই একক বেপরোয়া মানবাধিকার লংঘনকারী দেশ যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে কোনো মূল্যে তাদের পবিত্রতা রক্ষা করে। হার্স্ট বলেন, আমার সন্দেহ যে চরম ডানপন্থীরা ঠিক একই ভাবে ইসরাইলকে দেখে কিনা।
নেতানিয়াহুর সমালোচকদের জন্যও এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য যে কেন বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের নেতা ইহুদি বিরোধীদের দিকে ঝুঁকে থাকা সত্তে¡ও অরবানের মত চরম ডানপন্থী নেতার সাথে নিজের স্বার্থ অভিন্ন দেখতে পান। নেতানিয়াহু ও অরবান অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন; উদার মতের নেতাদের দমন, মুসলিম সংখ্যালঘুদের অপছন্দ ও চরম ডানপন্থীদের সাথে কাজ করা। অরবানের মত নেতানিয়াহুও বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থায়ন পাওয়া বেসরকারী সামাজিক সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে আইন প্রণয়ন করেছেন। তার সরকার অ-ইহুদিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নিষিদ্ধ করেছে এবং ইসরাইলের সরকারি ভাষা হিসেবে আরবিকে বাদ দিয়েছে। সম্প্রতি নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী বলয়ের একটি বর্ণবাদী দলের সাথে নির্বাচনী আঁতাত করেছেন যা এ বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক ডেরেক পেনসলার বলেন, আমি বিশ্বাস করি না যে নেতানিয়াহু প্রকৃতই আরব বিহীন ইসরাইল রাষ্ট্র চান। আমার বিশ্বাস তিনি এমন এক ইসরাইল রাষ্ট্র চান যেখানে ইহুদিদের এতটাই শ্রেষ্ঠত্ব ও নিরাপত্তা থাকবে যে তাদের কখনোই জাতি-ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য ব্যতীত পাশ্চাত্য ধরনের উদার গণতন্ত্রের কথা বিবেচনা করতে হবে না। তিনি আরো বলেন, এখানে জাতিগত শাসনের আকাক্সক্ষা থাকবে, তার অর্থ এই নয় যে অন্য জাতি গ্রুপ থাকবে না, কিন্তু শাসন করবে আসলে শুধু একটি জাতিই।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়োশি শাইন বলেন, নেতানিয়াহু ও অরবানের মধ্যকার সম্পর্ক বিদেশে বসবাসরত কিছু ইহুদির জন্য যতটা সমস্যা জনক হতে পারে, ইসরাইলিদের জন্য ততটা সমস্যা জনক নাও হতে পারে। শাইন এ বিষয়ে তার প্রকাশিতব্য বইয়ে বলেছেন, অরবান ইসরাইলের টিকে থাকার অধিকার সমর্থন করেন, পক্ষান্তরে তার সমালোচকরা কিছু সংখ্যক ইসরাইলি কর্তৃক উৎসাহিত হয়ে ইসরাইলের জাতীয়তা ও টিকে থাকার অধিকারকে খাটো করছেন। ইসরাইলিদের জন্য এ যুগে ইহুদি বিরোধিতার মূলে আছে এটাই। (সমাপ্ত)



 

Show all comments
  • সাইফুল ইসলাম ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ ইহুদিদের মুসলিমরাই যুদ্ধের মাধ্যমে ধ্বংস করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Ahmed ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    Alhamdulillah
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mehedi Hasan ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    ইহুদিদের দুই গালে গু মাখানো জুতা মারো তালে তালে
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ আলী ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    বিশ্বে যত মুসলমান আছে সবাই জানে মুসলমানদের চির শত্রু হচ্ছে ইহুদী। এই ইহুদীরা অনেকবার মুসলমানদের উপর হামলা করেছে। সেই ইহুদীদের প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিলেন হিটলার। আর বলেছিলেন, 'আমি চাইলে সব ইহুদীদের হত্যা করতে পারতাম। কিন্তু কিছু ইহুদী বাচিয়ে রেখেছি এই জন্যে যে, যাতে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারে, আমি কেন ইহুদী হত্যায় মেতেছিলাম'।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    খুবই ভালো খবর। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন মুসলমানদেরকে সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, “অবশ্যই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদী ও মুশরিকদেরকে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)
    Total Reply(0) Reply
  • বছির উদ্দীন ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    যারা ইহুদী মুশরিক নাছারা তারা শয়তান দ্বারা পরিচালিত। তাদের ঝলমলে সাজ-পোশাক, গান-বাজনা, আনন্দ-উৎসব, বেহায়া-বেলেল্লাপনা, শৌখিন জীবন এসবের ঢাক-ঢোল আজ চারদিকে। সভ্যতার অন্তরালে আজ তারা অসভ্যতার শীর্ষে পৌঁছেছে। কিন্তু শয়তানের কারসাজিতে, ধোকায়, প্ররোচনায় যে তারা এসব কাজ করছে সেটা মুসলমানরা এখনো উপলব্ধি করতে পারছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সিফাত খান ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    মুসলমানদের বুঝতে হবে, ইহুদী মুশরিক নাছারা, মজূসী, মুশরিকরা মুসলমানদের শত্রু। তাদের তর্জ তরীক্বা, নিয়ম-কানুন, আচার-আচরণ কোনো কিছুকেই অনুসরণ করা যাবে না। মুসলমানগণ তাদের নিজেদের ঈমানকে হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বাস্থায় তাদের থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ