পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএর ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ভবনটিকে সৌন্দর্যমÐিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সার হিসেবেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) উচ্চ আদালতের কাছে বার বার সময় চেয়ে ভবন ভাঙা বিলম্বিত করে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত আদালত সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে বিজিএমইএকে তাদের কার্যালয় পুরনো জায়গা থেকে সরানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আর এক সপ্তাহ পরেই হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হচ্ছে।
হাতিরঝিলের ভবন থেকে অফিস সরানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করছে বিজিএমইএ। চলতি মাসেই নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ পুরানো বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু হবে তার চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনো কেউ বলছে না। ভবন ভাঙার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠনটি নেতারা। রিটকারী আইনজীবী এ বিষয়ে বলেছেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী এই ভবন ভাঙতেই হবে। বেঁধে দেয়ার সময় অনুযায়ী ১২ এপ্রিলের পর ভাঙার কার্যক্রম শুরু না হলে আদালত অবমাননা আবেদন করব।
এ মামলায় হাইকোর্টের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, জলধারা আইন লঙ্ঘন করে ভবনটি করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুযারী এই ভবন ভাঙতেই হবে। এখানে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, বিজিএমইএ ভবনটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এখন তারাই ভাঙার কার্যক্রম শুরু করবে। অন্যথায় রাজউক ভাঙাবে। খরচ দিবে বিজিএমইএ। ১২ এপ্রিলের পর ভাঙার কার্যক্রম শুরু না হলে আদালত অবমাননা আবেদন করব। আমি আশা করছি আদালত অবমাননা আবেদন করতে হবে না। কারণ নির্ধারিত তারিখের পর রাজউক আদেশ বাস্তবায়র করবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমÐিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সার আখ্যা দিয়ে একে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। আদেশের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করে ভবন সরাতে ছয় মাস সময় দেন। এর পর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ফের আবেদন করলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর ভবন ভেঙে ফেলতে আরও সাত মাস সময় দেন। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে বিজিএমইএ নির্দেশ দেন। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন আদালত। সর্বশেষ গত বছর ২ এপ্রিল ভবন ভাঙতে এবারের পর আর সময় চাইবে না- বিজিএমইএ দাখিল করা এমন মুচলেকার পর তাদের এক বছর নেন। এ সময় আদালত বিজিএমইএ’র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যতদিন চেয়েছেন ততদিন দিয়েছি। বেশিও দিয়েছি। ১২ মাস ১০ দিন। মনে রাখবেন। আদেশের পর ইমতিয়াজ বিজিএমই এর আইনজীবী মইনুল ইসলাম বলেছিলেন, ২০১৩ সালে বিজিএমইএকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল ভবন ভাঙার জন্য। ওই আদেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য এক বছর সময় চেয়েছিলাম। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। এই আবেদনটি গ্রহণ করার জন্য আদালত অঙ্গীকারনামা দিতে বলেছিল। আজকে আমরা সংশোধন করে অঙ্গীকারানামা দিয়েছি। বিজিএমএই নেতারা বলেছেন, আদালতের নির্দেশমতো ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবন ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
১৫ এপ্রিল থেকে উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিলেও হাতিরঝিলের ভবনটিতে থাকা অন্য অফিস স্থানান্তরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। পরবর্তী তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় নতুন ভবন থেকে সব ধরনের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হবে ১৫ এপ্রিল। গত বুধবার নতুন বিজিএমইএ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা এখন একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে রায় মেনে যত দ্রæত সম্ভব হাতিরঝিলের ওপর নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আদালত ভবনটি ছাড়তে আমাদের যে সময় দিয়েছেন, তা ১২ এপ্রিল শেষ হবে। সে জন্য আমরা দ্রæততার সঙ্গে আমাদের মান-সম্মান রক্ষার্থে বিজিএমইএর কার্যক্রম উত্তরায় নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করছি। ১২ এপ্রিলের পর আমরা এখানে অফিস করব। এ ভবন কবে ভাঙা হবে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কবে কীভাবে হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙা হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ভবনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির বলেন, আমরা তো সরে গেলাম। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানও তাদের অফিস স্থানান্তর করছে। ভবনে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হবে। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়েই ভবন খালি হওয়ার কথা।
ভবন ভাঙার বিষয়ে ফের সময় চাওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিজিএমইএর আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে এখনো সময় আছে, দেখি সেই পর্যন্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।