Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুলির আঁচড়ে ভরে উঠছে খেলনা ও তৈজসপত্র

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। দেশজুড়ে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। বাঙালির প্রাণের এ উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার বিজয়পুর ও সংলগ্ন এলাকার মৃৎশিল্পীরা। দিনরাত তৈরি হচ্ছে মাটির খেলনাসহ নানা তৈজসপত্র। গত তিনদিনের বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়ায় অনেক খেলনা-তৈজসপত্রের ক্ষতি হয়েছে। এরপরও এখানকার মৃৎশিল্পীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে আবারো পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন। দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে রং-তুলির আঁচড়ে ভরে উঠছে যতোসব বাহারি রকমের মাটির খেলনা আর তৈজস পত্র। এখানকার মাটির পন্য বিদেশে রফতানি হলেও বৈশাখী মেলার সময় বেশি চাহিদা থাকে এই মৃৎশিল্পের।

কুমিল্লার বিজয়পুরের কুমার পাড়ার মৃৎশিল্পীরা মাটির শিল্পকর্মগুলোতে রঙ-তুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। চাহিদা মতো পন্য যোগান দিতে রাতদিন কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি বছরের এই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দারুণ খুশি তারা। আর মাত্র কয়েকটা দিন, এরপরই বাংলা নতুন বছর ১৪২৫। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য মেনে পালন করা হবে পহেলা বৈশাখ। আবহমান কাল থেকে এ উপলক্ষে কুমিল্লার গ্রামগঞ্জ-শহর ও বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। আর ঐতিহ্যগতভাবে এসব মেলার প্রাণ হচ্ছে বিজয়পুরের মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া-পুতুলসহ বাহারি রকমের তৈজসপত্র। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের আশপাশের দুর্গাপুর, বারপাড়া, টেগুরিয়াপাড়া এবং নোয়াপ াড়াসহ আরো কিছু গ্রামের চার শতাধিক পরিবার ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারজাতের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ ঘনিয়ে এলেই মৃৎশিল্পে ঐতিহ্য ধরে রাখা এসব গ্রামে তৈরি নান্দনিক মাটির পন্য-সামগ্রী কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে ভিড় করেন। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের ব্যাপক চাহিদা।
এখানকার মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে মাটির হাঁড়ি, পাতিল, বাটি, বদনা, মটকা, প্রদীপ, ছাইদানী, গেলাস, সানকি, কল্কি, গামলা, জলাবিড়া, জটধুসি, জলকান্দা, চুনপাত্র, সরাই, দুধের হাড়ি, ফুলদানী, মালসা, থালা, পানের বাটা, সন্ন্যাসির গাড়–, মুবঘট, ল²ীঘট, আয়োঘট, পুজারঘট, দোয়াত বৈয়াম, দুধ সানার পত্র, ল²ীসরা, মটকা, কাজলবাটি নাদা, তবলার বায়া, মৃদংগ নাল, পাখোয়াজের মাটিরখোল, গাছাপ্রদীন, দইছোবা, ক্রোকারিজ, শোপিচ সামগ্রীসহ অসংখ্য রকমের দৃষ্টিনন্দন জিনিষপত্র। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে আর রংতুলিতে বর্ণময় হয়ে উঠছে ঘোড়া, বাঘ, গরু, হাতি, মোরগ, জেব্রা, পুতুল, গাঁয়েরবধূ, খেলনা, কলসসহ বাঙালির ঐতিহ্যের মাটির তৈরি নানা জিনিষপত্র।
কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছড়াকার জহিরুল ইসলাম দুলাল বলেন, কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্প, হোমনা ও বৈরাগী পাড়ার বাঁশি শিল্পের সাথে হাজারো পরিবার জড়িয়ে আছে। তাদের শিল্পকর্মে আমরা দেশপ্রেম, চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পাই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এসব শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবেই আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তৈজসপত্র
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ