বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজরত মুসা (আ.)-এর নাম ও তাঁর নানা কাহিনী নানা গ্রন্থে সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর প্রতি তাওরাত নাজিল হয়েছিল। তার বরাত দিয়ে ইহুদিরা অসংখ্য মনগড়া ও অতিরঞ্জিত এবং বহু ভিত্তিহীন আকর্ষণীয় কাহিনী রচনা ও বর্ণনা করেছে। কেবল তাওরাত নয়, যবুর, ইঞ্জিলকেও ইচ্ছেমতো বিকৃত করা হয়েছে। এসব বিকৃতির কথা কোরআনুল কারীমে বলে দেয়া হয়েছে।
ইহুদিদের নিকট বর্তমানে যে তাওরাত রয়েছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে, তা হজরত ঈসা মাসীহ (আ.)-এর চার শ’ চুয়াল্লিশ (৪৪৪) বছর পূর্বে লিখিত এবং হজরত মুসা (আ.)-এর এক হাজার এক শ’ পঁচিশ (১১২৫) বছর পর লেখা হয়েছে, যা এরোশলাম (জেরুজালেম)-এর ‘কিতাবে তাওরাত’ এবং আজরা-এর কিতাবে তাওরাতে উভয় কিতাবকে মিলিয়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে বলে গবেষকদের অভিমত। সুতরাং আসল তাওরাতের অস্তিত্ব দুনিয়ার কোথাও নেই।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সাক্ষ্য দেয় যে, ইহুদিদের নিকট তাওরাত নামে তাদের দ্বীন ধর্মের নামমাত্র পুরনো সম্বল বিদ্যমান ছিল। তারও সমস্ত কিছু বখতে নসরের হামলায় বিলীন ও ধ্বংস হয়ে যায়। কেবল বখতে নসর নয়, বরং তার পরও প্রত্যেক যুগে এমন সব জালেম অত্যাচারী বাদশাহ জন্ম হতে থাকে, যারা ইহুদীয়তকে দুনিয়া হতে মিটিয়ে দেয়ার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
এ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য যে, ‘ইন্টুস’ নামক এক গ্রিক শাসক নির্দেশ দেয় যে, তাওরাতের একটি পৃষ্ঠাও যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকে হত্যা করা হবে। এরপর রূম শাসক ‘তীতাস’-এর আগমন ঘটে। সে এগারো লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। অতঃপর ‘কায়সার হুডসন’ ক্ষমতাসীন হয়। সে পাঁচ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে এবং তাদের প্রত্যেক বস্তু ধ্বংস করে দেয়। এমনকি এরোশলামের নাম পরিবর্তন করে ‘ইলিসিয়া’ রাখে।
এসব ঘটনার আলোকে এটাই সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বর্তমান তাওরাত কিছুতেই মুসা (আ.)-এর কিতাব (তাওরাত) নয়, বরং তার কাল্পনিক অনুবাদ ছাড়া কিছুই হতে পারে না। যদি বাস্তবে মুসা (আ.)-এর তাওরাত হতো, তাহলে তাতে মুসা (আ.)-এর পরবর্তীদের নাম থাকত না এবং মুসা (আ.)-এর ওফাত ও কাফন-দাফনের উল্লেখ থাকত না। তা ছাড়া এ কিতাবে এমন সব বিবরণ পাওয়া যেত, যা কখনো কোনো এলহামী কিতাবের হতে পারে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক স্থানে লেখা হয়েছে যে, হজরত ইয়াকুব (আ.) ও আল্লাহতায়ালার মধ্যে কুশতি হয়, আল্লাহ হেরে যান এবং ইয়াকুব (আ.) জিতে যান। কিতাবে মোকাদ্দাসে এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এরূপ মনগড়া, ভিত্তিহীন কাহিনী কোনো এলহামী কিতাবে কিছুতেই উল্লেখ থাকতে পারে না।
ইহুদিদের মোকাদ্দাস কিতাব : তালমূদ- ইহুদিদের মোকাদ্দাস কিতাব নামে তাদের মধ্যে যা প্রচলিত তা তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, তাওরাত; দ্বিতীয়ত, নাবীম এবং তৃতীয়ত. কিথুবীম। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাওরাত, যাতে ইহুদিদের আইনকানুন তথা সংবিধান পাওয়া যায়। এতদ্ব্যতীত অন্য কিতাবগুলোতেও তাদের আইনকানুন রয়েছে।
আহসাম নামক রিব্বি ইহুদি কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন ইহুদির মোকাদ্দাস বর্ণনা ও রচনাবলিকে একত্রে সঙ্কলিত করা হয়েছে। অতঃপর একটি বৃহদাকারের কিতাব প্রণয়ন করে তার নাম করা হয়েছে ‘শানা’। অতঃপর এ উভয়কে মিলিয়ে ‘তালমূদ’ প্রণীত হয়েছে।
‘তালমূদ’ দুই প্রকারের- একটি বাবুলি বা ব্যাবিলিয়ান এবং দ্বিতীয়টি ফিলিস্তিনি। এরপর এসব গ্রন্থে আইনকানুন ছাড়াও যেহেতু মোরাকাবা, কল্পিত কিসসা-কাহিনী এবং উদাহরণমালা পাওয়া যায়, তাই তাকে রিব্বি মুসা সিমুপদ ‘তালমূদ’ দ্বারা মোকাদ্দাস কানুনকে আলাদা করে শানা তাওরাতকে চৌদ্দটি কিতাবে প্রণয়ন করেন। যগাখিচুড়ির এ ‘তালমূদ’ হচ্ছে ইহুদিদের মোকাদ্দাস বা পবিত্র গ্রন্থ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।